আল জামি'আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা

কুরআনে সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু…(পর্ব ৪)

( সমসাময়িক লেখা : পোস্ট কোড: 18431 )

সাহাবায়ে কেরাম রা. ছিলেন আল্লাহ তাআলার মনোনীত বান্দাঃ সাহাবায়ে কেরাম রাদি. ছিলেন আল্লাহ তাআলার বিশেষ মনোনীত বান্দা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এর সোহবতের জন্য তাঁর সহযোগি হিসেবে পুরো উম্মতের মধ্য হতে তিনি তাঁদেরকে বিশেষভাবে নির্বাচন করেছেন। তিনিই তাঁদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সোহবত ও সংশ্রব প্রাপ্তির মহাসম্মানে ভূষিত করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর ভাষায় اختارهم الله لصحبة نبيه
আল্লাহ তাঁদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সোহবতের জন্য বাছাই করেছেন। -জামিউ বয়ানিল ইলম : ১৮১০
কুরআন কারীম থেকেও এ বষিয়রে ইঙ্গতি পাওয়া যায়। ইরশাদ হয়েছে,
قُلِ الْحَمْدُ لِلَّهِ وَسَلَامٌ عَلَىٰ عِبَادِهِ الَّذِينَ اصْطَفَىٰ
(হে নবী!) বল, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই এবং সালাম তাঁর সেই বান্দাদের প্রতি যাদেরকে তিনি মনোনীত করেছেন। -সূরা নামল:৫৯
আয়াতে উল্লেখিত মনোনীত বান্দা দ্বারা কারা উদ্দেশ্য এ ব্যাপারে প্রসিদ্ধ মত হল তাঁরা হলেন আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম। আরেকটি মত হল তাঁরা হলেন সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুম। ইবনে কাসীর রহঃ বলেছেন উভয় শ্রেণীই আয়াতে উদ্দেশ্য হতে পারে। -তাফসীরে ইবনে কাসীর- ৫/৬৮২, মাআরেফুল কুরআন ৬/৫৯৩
কুরআনে উল্লেখিত সাহাবায়ে কেরামের আরো কিছু বৈশিষ্ট্যঃ ইরশাদ হয়েছে,
مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ ۚ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ ۖ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا ۖ سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِمْ مِنْ أَثَرِ السُّجُودِ ۚ ذَٰلِكَ مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَاةِ ۚ وَمَثَلُهُمْ فِي الْإِنْجِيلِ كَزَرْعٍ أَخْرَجَ شَطْأَهُ فَآزَرَهُ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوَىٰ عَلَىٰ سُوقِهِ يُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ ۗ وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا
মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল। তাঁর সঙ্গে যারা আছে, তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং আপসের মধ্যে একে অন্যের প্রতি দয়ার্দ্র। তুমি তাদেরকে দেখবে (কখনও) রুকুতে, (কখনও) সিজদায়, আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি সন্ধানে রত। তাদের আলামত তাদের চেহারায় পরিস্ফুট, সিজদার ফলে। এই হল তাদের সেই গুণাবলী, যা তাওরাতে বর্ণিত আছে। আর ইনজিলে তাদের দৃষ্টান্ত এই, যেন এক শস্যক্ষেত্র, যা তার কুঁড়ি বের করল, তারপর তাকে শক্ত করল। তারপর তা পুষ্ট হল। তারপর তা নিজ কা-ের উপর এভাবে সোজা দাঁড়িয়ে গেল যে, তা কৃষকদেরকে মুগ্ধ করে ফেলে। এটা এইজন্য যে, আল্লাহ তাদের (উন্নতি) দ্বারা কাফেরদের অন্তর্দাহ সৃষ্টি করেন। যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, আল্লাহ তাদেরকে মাগফিরাত ও মহা পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। -সূরা ফাত্হ: ২৯
উপরোক্ত আয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের প্রশংসা করা হয়েছে। তাঁদের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। সংক্ষেপে সেগুলো সম্পর্কে এখানে আলোকপাত করছি।
১. সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর, আপোসহীন। তাদের জীবনী দেখলেই এই বৈশিষ্ট্যের বাস্তব নমুনা আমরা দেখতে পাবো। দ্বীনের স্বার্থে কুফরের উপর প্রতিষ্ঠিত যে কারো ক্ষেত্রেই তাঁরা ছিলেন আপোষহীন। যদিও সে তাঁর রক্তের সম্পর্কের কেউ হোক না কেন। হ্যাঁ ইসলাম কর্তৃক তাঁদের প্রাপ্য হক আদায়ে তাঁরা সচেষ্ট ছিলেন। কিন্তু দ্বীন ও ঈমানের স্বার্থে যেখানে কঠোর হওয়ার প্রয়োজন সেখানে তাঁরা বিন্দুমাত্র ছাড় দিতেন না।
২. তাঁরা আপোষের মধ্যে একে অন্যের প্রতি ছিলেন দয়াদ্র। তাঁদের পারস্পারিক সম্পর্ক এত গভীর ছিল যে রক্তের সম্পর্কের চেয়েও দ্বীনী ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক তাঁদের প্রধান পরিচয় হয়ে দাঁড়ায়। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা কুরআনের একাধিক আয়াতে তাঁদের সেই সম্পর্কের বর্ণনা দিয়েছেন।
ইরশাদ হয়েছে,
وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ۚ وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنْتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنْتُمْ عَلَىٰ شَفَا حُفْرَةٍ مِنَ النَّارِ فَأَنْقَذَكُمْ مِنْهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ
আল্লাহর রশিকে (অর্থাৎ তাঁর দীন ও কিতাবকে) দৃঢ়ভাবে ধরে রাখ এবং পরস্পরে বিভেদ করো না। আল্লাহ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন তা স্মরণ রাখ। একটা সময় ছিল, যখন তোমরা একে অন্যের শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরসমূহকে জুড়ে দিলেন। ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই-ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিকুন্ডের প্রান্তে ছিল। আল্লাহ তোমাদেরকে (ইসলামের মাধ্যমে) সেখান থেকে মুক্তি দিলেন। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নিদর্শনসমূহ সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা সঠিক পথে চলে আস। -সূরা আলে ইমরান, ১০৩
আরো ইরশাদ হয়েছে,
وَإِنْ يُرِيدُوا أَنْ يَخْدَعُوكَ فَإِنَّ حَسْبَكَ اللَّهُ ۚ هُوَ الَّذِي أَيَّدَكَ بِنَصْرِهِ وَبِالْمُؤْمِنِينَ . وَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ ۚ لَوْ أَنْفَقْتَ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا مَا أَلَّفْتَ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ أَلَّفَ بَيْنَهُمْ ۚ إِنَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
তারা যদি তোমাকে ধোঁকা দিতে চায়, তবে আল্লাহই তোমার জন্য যথেষ্ট। তিনিই তোমাকে শক্তিশালী করেছেন নিজ সাহায্যে এবং মুমিনদের দ্বারা। এবং তিনি তাদের হৃদয়ে পরস্পরের প্রতি সম্প্রীতি সৃষ্টি করেছেন। তুমি যদি পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদও ব্যয় করতে, তবে তাদের হৃদয়ে সম্প্রীতি সৃষ্টি করতে পারতে না। কিন্তু তিনি তাদের অন্তরসমূহে প্রীতি স্থাপন করেছেন। নিশ্চয়ই তিনি পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়। -সূরা আনফাল : ৬২,৬৩
সূরা হাশরের ৯ নং আয়াত আগে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে আনসার সাহবাীদের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, তাঁরা মুহাজিরদের সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছেন এবং কঠিন প্রয়োজনের মুহূর্তেও তাঁরা মুহাজির ভাইদের প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিতেন।
৩. “ তুমি তাদেরকে দেখবে (কখনো) রুকুতে, (কখনো) সেজদায়, আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি অনুসন্ধানে রত।”
সাহাবায়ে কেরামের বিশেষ একটি বৈশিষ্ট হল, তাঁরা ছিলেন ইবাদতগুজার। বিশেষ করে নামায ছিলো তাদের যিন্দেগীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অতিশয় প্রয়ি একটি আমল। এজন্য আয়াতে বিশেষভাবে নামাযের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। নামাযের সাথে তাঁদের সম্পর্ক এত গভীর ছিল যে তাদেরকে অধিকাংশ সময়ে নামাযরত অবস্থায়ই দেখা যেত। যার ফলে তাদের চেহারাতেও নামাযের বিশেষ আলামত ও নূরানীয়াত পরিস্ফুট হতো। তাঁদের নামায ছিল ইখলাসপূর্ণ। নামাযসহ সকল ইবাদতে তাঁদের একমাত্র উদ্দেশ্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি ও অনুগ্রহ লাভ করা। -তাফসীরে ইবনে কাসীর ৬/৬৯৯-৭০০, মাআরেফুল কুরআন, ৮/৯২-৯৩
উপরে আলোচিত সাহাবায়ে কেরামের বৈশিষ্ট্যগুলো তাওরাতেও বর্ণিত হয়েছে। তাওরাতের ব্যাপক পরিবর্তন সত্ত্বেও এ সকল বৈশিষ্ট্যের কিছু নমুনা বর্তমান তাওরাতেও পাওয়া যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামের যে দৃষ্টান্ত আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে বর্তমান ইঞ্জিলেও সেটার কিছু নমুনা পাওয়া যায়। তাওরাত ও ইঞ্জিল থেকে সশ্লিষ্ট উদ্ধৃতিগুলোর জন্য আমরা দেখতে পারি তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন, তৃতীয় খন্ড, ৩৫০ ও ৩৫১ নং পৃষ্ঠা।
৪. ইঞ্জিলে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের যে দৃষ্টান্তের কথা আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। সেটার সারকথা হল শস্যক্ষেতে যেমন প্রথমে চারা অঙ্কুরিত হলে বেশ দুর্বল থাকে। এরপর ডালপালা গজালে চারাটি আরো মজবুত হয়। একপর্যায়ে সেটা আরো মজবুত হয়ে আপন কা-ে দাঁড়িয়ে থাকে। যা দেখে কৃষকেরও মন ভরে যায়। তেমনভিাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম শুরুতে খুবই দুর্বল এবং অল্প সংখ্যক ছিলেন। প্রথমে তো দ্বীনের ওপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একা ছিলেন। এরপর তাঁর এক দুজন করে সঙ্গী বাড়তে থাকে। আস্তে আস্তে সঙ্গীদের সংখ্যা আরো বেড়ে যায়। এভাবে দুর্বলতার পর তাঁদের শক্তি আরো বেড়ে যায় এবং তাঁদের ভিত আরো মজবুত হয়। -মাআরেফুল কুরআন ৮/৯৩
৫. يغيظ بهم الكفار “আল্লাহ তাদের (উন্নতি) দ্বারা কাফেরদের অন্তর্দাহ সৃষ্টি করেন।” র্অথাৎ আল্লাহ তাআলা সাহাবায়ে করোমকে উল্লখেতিগুণে গুণান্বতি করছেনে। তাদরেকে র্দুবলতার পর শক্তি যুগয়িছেনে এবং সংখ্যাধক্যি দান করছেনে যাতে এগুলো দখেে অন্তর্দাহ সৃষ্টি হয় এবং হংিসার অনলে দগ্ধ হয়। এ থকেে বোঝা যায় সাহাবায়ে করোমরে প্রতি বদ্বিষে পোষণ করা তাঁদরে ব্যাপারে বরিূপ ধারণা রাখা মূলত কাফরেদরে স্বভাব। প্রকৃত মুমনি কখনো সাহাবায়ে করোমরে প্রতি এ ধরনরে মানসকিতা রাখতে পারনো। মাআরফেুল কুরআন ৮/৯৩-৯৫
৬. সবশেষে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সকল সাহাবীর জন্য মাগফিরাত ও পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

চলমান

 

Fatwa ID: 18431
Scroll to Top