বরাবর,
ফতোয়া বিভাগ,আল-জামিয়াতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়া,পোরশা,নওগাঁ।
বিষয়: যাকাতের নেসাব প্রসঙ্গে।
প্রশ্ন: আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি একটি প্রচলিত ভুলের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যাকাতের নেসাবের ব্যাপারে হাতে শুধু টাকা থাকার ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত টাকাকে রূপার নেসাবের সমমানের ধরে নেসাব পূর্ণ মনে করি। অথচ টাকা বর্তমানে ডলারের হিসাবে মূল্যমান আর ডলার স্বর্ণের হিসাবে মূল্যমান! আপনি খেয়াল করলে দেখতে পাবেন, টাকার গায়ে লিখা আছে! “চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে!” আমার প্রশ্ন টাকার প্রচলন তো আমরা ঘটাইনি যে আমরা ইচ্ছে মতো এর মূল্যমান রূপাকে ধরবো! আরেকটা বিষয় লক্ষণীয় যার উপর যাকাত ফরয শরীয়তের হিসাবে সে ধনী! আদৌ কি আমরা ৬০/৭০ হাজার টাকার মালিককে ধনী মনে করি? বি:দ্র: আমি জানার ইচ্ছে থেকে প্রশ্ন করেছি। (আমিও ছোট আলেম ) আমার কথায় কোন ভুল থাকলে উসুল ভিত্তিক এ নিয়ে আলোচনার অনুরোধ রইল! সংশ্লিষ্ট আরও কিছু দিক যেমনঃ ১/ হাজতে আসলিয়ার মধ্যে আমরা কি পরিমাণ অর্থ ও সময় মনে করতে পারি? ৬০/৭০ হাজার টাকায় কিভাবে নেসাব হতে পারে, যেখানে একটি মধ্যবিত্ত ফ্যামিলি ২ মাসও এই অর্থে সার্ভাইব করতে পারে না। ২/ এই নেসাব যদি হয় তার উপর কুরবানী ওয়াজিব। আর সবচেয়ে ছোট প্রাণী ছাগল দিয়ে কুরবানী ওয়াজিব করতে গেলে ১/৪ একচতুর্থাংশ নেসাব শেষ হয়ে যায়। আর গরু দিয়ে তো পুরো নেসাবই শেষ। এটা কেমন নেসাব তাহলে ?
প্রশ্ন সারসংরক্ষেপ : ১/ টাকাকে আমরা কোন ভিত্তিতে রূপার নেসাবের সাথে মিলাবো ? যদিও ব্যাংক টাকার প্রচলন ঘটায় আর তারা ডলার বা স্বর্ণ এর মানে টাকা ছাপে। ২/ হাজতে আসলিয়া উদাহারণসহ বুঝতে চাই। ৩/ শুধুমাত্র টাকার নেসাব বর্তমানে কত হতে পারে ?
নিবেদক
মুহা. যুবাইর আহমাদ
০১৩২২-৫৬৬২৯৮
بسم الله الرحمن الرحيم،حامدا و مصليا و مسلما-
সমাধান : যাকাতের নেসাবের ক্ষেত্রে আমরা টাকাকে স্বর্ণের নেসাবের সাথে না মিলিয়ে রুপার নেসাবের সাথে মিলিয়ে থাকি। কারণ বর্তমান কাগজী নোটগুলো নিজেই মূল্যমান বহন করে, ডলারের হিসেবে মূল্যমান নয়। আর ডলারও স্বর্ণের হিসেবে মূল্যমান নয়। অতএব বর্তমানের কাগজী নোট বা মুদ্্রাকে মাল অর্থাৎ মূল্যমান বিশিষ্ট নোট বা মুদ্রা গণ্য করা হবে। যেমন প্রাচীনকালে ধাতব মুদ্রাসমূহ (فلوس) কে পারিভাষিক মুদ্রা বলে গণ্য করা হত। মূলত ১৯৭১ সালের পর আমেরিকা স্বর্ণ প্রদান করতে অস্বীকার করে, ফলে এ নোটের বিপরীতে কোন কিছুই আর নেই। নোটের উপর লিখিত বক্তব্য “চাহিবামাত্র ইহার বাহককে এত টাকা দিতে বাধ্য থাকিবে” অর্থহীন হয়ে পড়েছে। এমন হয়েছে, এটা বিনিময়ের মাধ্যম হওয়াটা কেবল পরিভাষা। সুতরাং এর বিধান হবে ফুলুস তথা প্রচলিত মুদ্রার ন্যায়। সুতরাং যদি কারও নিকট শুধু টাকা-পয়সা থাকে, সোনা রুপা ও ব্যবসায়িক পণ্য কিছু না থাকে তাহলে সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার যে কোন একটার মূল্যের সমপরিমান (টাকা-পয়সা) থাকলে বৎসরান্তে তার উপর যাকাত ফরয হবে। কারণ যাকাত ফরয হওয়ার জন্য সোনা ও রুপার যে দুটি নেসাব রয়েছে এর মধ্যে যে কোন একটি নেসাব পাওয়া গেলেই যাকাত ফরয হয়।
২/ হাজতে আসলিয়া হল মানুষের জীবন যাপন করার ক্ষেত্রে যেসকল জিনিসের প্রয়োজন পড়ে যেমন: ঘরের আসবাবপত্র, কাপড় -চোপড়, থালা-বাসন, হাঁড়ি-পাতিল, ফ্্িরজ, আলমারী, শোকেজ, পড়ার বই ইত্যাদি। ব্যক্তি বিশেষে হাজতে আসলিয়া কম বেশি হয়ে থাকে। একজনের জন্য যেটি অতিরিক্ত সেটি আরেকজনের জন্য হাজতের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। আর হাজতে আসলিয়ার সময়সীমা হল এক বছর। অর্থাৎ এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও যা কাজে লাগে না তা অতিরিক্ত হিসেবে গণ্য হবে।
৩/ পোরশা এলাকার রুপার বর্তমান বাজার মূল্য হিসেবে শুধু টাকার নেসাব হয় প্রায় “এক লক্ষ দশ হাজার দুইশত পঞ্চাশ” টাকা (১,১০,২৫০)। কেননা বর্তমান রুপার বাজার মূল্য হল ২১০০/= টাকা ভরি।
|
الاحالة الشرعية على المطلوب
** أخرج الإمام ابن أبي شيبة في “مصنفه”(6/383-برقم 9936) عن جعفرعن أبيه قال قال رسول الله ﷺ :(إذا بلغ المال مئتى درهم‘ففيه خمسة دراهم). وفي أيضا(برقم- 9937) عن الحسن قال كتب عمرإلى أبي موسى: إن خذ ممن مربك من تجار المسلين من كامئتى درهم :خمسة دراهم .
————————————————————
**وأخرج الإمام عبد الرزاق في”مصنفه”(4/7-برقم 6797) قال سفيان هذا في السائمة (فإن) كانت للتجارة قومناها قيمة عدل ‘فإذا بلغ مئتى درهم ففيه الزكوة . وفي أيضا ( 4/24-برقم 6851) فما كان من البقرة لتجارة فإنه يقوم قيمة لا يؤخذ على هذا الحساب ‘إنما تقوم قيمة فإذا بلغ مئتى درهم ففيها الزكوة
.——————————————–
**وفي” بحوث في قضايا”(1/148) وهكذا أصبح الذهب خارجا عن نطاق النقود بتاتا‘ و أصبحت الاوراق النقدية والنقود الرمزية تحتل مكانه من كل ناحية‘ و إن الأوراق النقدية لا تمثل اليوم ذهبا‘ ولا فضة وإنما تمثل قوة شراء فرضية.
**وفي”رد المحتارمع الشامى”(3/212) (فارغ عن حاجة الأصلية‘ لأن المشغول بها كالمعدوم‘ و فسره ابن ملك بما يدفع عنه الهلاك تحقيقا كثيابه) كالنفقة ودورالسكنى والآت الحرب والثياب المحتاج إليها لدفع الحر أو البرد أو تقديرا كالدين‘ فإن المديون محتاج إلى قضائه بما في يده من النصاب دفعا عن نفسه الحبس الذى هو كالهلاك‘ وكالات الحرفة وأثاث المنزل ودواب الركوب وكتب العلم لأهلها.
———————————————————————
** وفي”الهداية”(1/186) وليس في دور السكنى وثياب البدن وأثاث المنزل ودواب الركوب وعبيد الخدمة وسلاح الإستعمال زكوة. لأنها مشغولة بالحاجة الأصلية. وليست بنامية أيضا وعلى هذا كتب العلم لأهلها والالات المحترفة لما قلنا.
—————————————————————————————————-
**وفي”رد المحتار”(3/213) إذا أمسكه لينفق منه كل ما يحتاجه المال فحال الحول وقد بقي منه نصاب فإنه يزكي ذالك الباقي. وإن كان قصده الإنفاق منه أيضا في المستقبل لعدم استحقاق صرفه إلى حوائجه الأصلية وقت حولان الحول.—–
**و في”فقہی مقالات”(1/30) جب کرنسی نوٹ ساڑھے باون تولہ چاندی کی قیمت کے برابر پہنچ جائیں تو ان پر بالاتفاق زکوۃ واجب ہو جاۓ گی وجوب زکوۃ مسئلے میں مروجہ سکوں کا حکم سامان تجارت کی طرح ہے یعنی جس طرح سامان تجارت کی مالیت اگر ساڑھے باون تولہ چاندی تک پہنچ جاۓ تو ان پر زکوۃ واجب ہوتی ہے ،بعینہ یہی حکم مروجہ سکوں اور موجودہ کرنسی نوٹوں کاہے.
——————————————————
**وفي”کتاب النوازل”(6/461) سوال: کیا فرماتے ہیں علماۓ دین ومفتیان شرع متین مسئلہ ذیل کے بارے میں کہ حوائج ضروریہ سے زائد مال پر زکوۃ ہوتی ہے اس میں کتنی مدت کی ضروریات ہونی چاہئے ؟ یعنی کتنی مدت تک کی حوائج اصلیہ سے زائد رقم ہونی چاہئے ، ایک ماہ،دو ماہ یا ایک سال؟ اور کیا رقم کی کوئ مقدار متعین ہے؟ مثلا ایک ادمی کے پاس بیس ہزار روپئے زائد لیکن وہ صرف ایک ماہ کا خرچ ہے،اس کی مدت کی کوئ تعین ہے یا نہیں ؟ یا پھر اپنے خرچ کے اعتبار سے الگ الگ مقدار ہے؟ الجواب وباللہ التوفیق : زکوۃ کے معاملہ میں حوائج ضروریہ کا مصداق روپیہ پیسہ نہیں ،بلکہ استعمالی چیزیں ہیں ،مثلا کپڑے مکان وغیرہ اور روپیہ خواہ ضرورت کےبقدر ہو یا ضرورت سے زائد ہو سب میں بلا کسی فرق کے زکوۃ واجب ہوتی ہے.
——————————
** وراجع أيضا في”البحر الرائق”(2/361) و”الموسوعة الفقهية”(23/241) و”الهندية”(1/234) و”حاشية الطحطاوي على مراقي الفلاح”(714) و”فتاوى حقانية”(3/491) و”عمدة الفقه”(2/342)‘ انتهى والله أعلم بالصواب.