আল জামি'আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা

কুরবানির মাসায়েল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

শেয়ার করুন !!

কুরবানির মাসায়েল
আল জামি’আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ, পোরশা, নওগাঁ।

কুরবানী কার উপর ওয়াজিব

০শে যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ই যিলহজ¦ সূর্যাস্ত পর্যন্ত যে প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন ও মুকিম নর-নারীর কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে ৫২ তোলা রূপা বা তার সমমূল্যের সম্পদ থাকবে তার উপর কুরবানি ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা, রূপার অলংকার, ব্যবসায়ীক পণ্য, অপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, অতিরিক্ত বাড়ি ও জায়গা জমির মূল্য কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাব যোগ্য। (বাদায়ে ৪/১৯৬ রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২)
২। মুসাফির ব্যক্তি, যে ৪৮মাইল(প্রায় ৭৮কি.মি.) দূরে যাওয়ার নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে তাঁর উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। তবে সফরে গিয়ে ১৫দিন বা তার অধিক সময় অবস্থানের নিয়ত করলে সে মুকিম হিসেবে গণ্য হবে। তখন তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে। (বাদায়ে ৪/১৯৫ রদ্দুল মুুহতার ৬/৩১৫)
৩। কুরবানীর সময়ে প্রথমদিকে মুসাফির থাকার পর ৩য় দিন কুরবানীর সময় শেষ হওয়ার পূর্বে মুকিম হয়ে গেলে তাঁর উপর কুরবানি ওয়াজিব। (বাদায়ে ৪/১৯৬ রদ্দুল মুুহতার ৬/৩১২)
৪। (ক) কুরবানীর নেসাব পুরো বছর থাকা জরুরী নয়, বরং কুরবানীর ৩দিন থাকলে এমনকি ১২তারিখ সূর্যাস্তের কিছু আগে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে গেলেও কুরবানি ওয়াজিব হবে। (বাদায়ে ৪/১৯৫ রদ্দুল মুুহতার ৬/৩১৫)
(খ) নেসাব পরিমাণ মাল থাকলে শুধু নিজের পক্ষ থেকেই কুরবানি ওয়াজিব হয়। স্ত্রী সন্তানাদি ও পিতা-মাতার পক্ষ থেকে কুরবানী ওয়াজিব নয়। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৫)
৫। নাবালেগ, শিশু-কিশোর ও পাগল ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হলেও তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। (বাদায়ে ৪/১৯৬ রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬)
৬। নাবালেগের সম্পদ থেকে কুরবানী দেওয়া যায়েজ নেই। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৫)
৭। গরীব ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। কিন্তু সে যদি কুরবানীর নিয়তে কুরবানীর দিনগুলোর মধ্যে কোন পশু ক্রয় করে তাহলে তা কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায়। (বাদায়ে ৪/১৯৬ )
৮। অন্যের ওয়াজিব কুরবানী দিতে চাইলে ঐব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে। নতুবা ঐব্যক্তির কুরবানি আদায় হবে না। অবশ্য স্বামী যদি বিনা অনুমতিতে তাঁর স্ত্রীর পক্ষ থেকে কুরবানী করে তাহলে স্ত্রীর কুরবানী আদায় হবে। কেননা স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীর কুরবানি দেওয়াটা সমাজে প্রচলন রয়েছে। তাই স্ত্রীর অনুমতি না নিলেও চলবে। তবে তার অনুমতি নিয়ে নেওয়াই ভালো। (রদ্দুল মুুহতার ৬/৩১৫)
৯। এক পরিবারের মধ্যে একাধিক ব্যক্তির কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে প্রত্যেকের উপরই ভিন্ন ভিন্ন কুরবানী ওয়াজিব হবে। এক্ষেত্রে একটি কুরবানি পরিবারের সকলের জন্য যথেষ্ট হবে না। (রদ্দুল মুুহতার ৬/৩১৫দারুল উলুম যাকারিয়া ৬/৩০২)
১০। কোনো ব্যক্তির কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলেই তার উপর কুরবানী ওয়াজিব কিন্তু তাঁর কাছে নগদ টাকা নেই, তাহলে সে ব্যক্তি ঋণ করে বা বাকিতে পশু ক্রয় করেও কুরবানী করতে পারবে। (আহসানুল ফতোয়া ৭/৫১৩)
১১। কেউ যদি নিজের ওয়াজিব কুরবানী না দিয়ে পিতা-মাতার বা সন্তানের পক্ষ থেকে কুরবানী দেয় তাহলে তাঁর ওয়াজিব কুরবানী আদায় হবে না। আর যদি উদ্দেশ্য এমন হয় যে, কুরবানি নিজের পক্ষ থেকে আর সাওয়াব পিতা-মাতার জন্য তাহলে তাঁর কুরবানী আদায় হবে। (মাহমুদিয়া ২৬/২৪৭)

কুরবানীর সময় সংক্রান্ত

১। মোট তিনদিন কুরবানী করা যায়। যিলহজে¦র ১০, ১১ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে ১ম দিন অর্থাৎ যিলহজে¦র ১০তারিখেই কুরবানী করা উত্তম। (বাদায়ে- ৪/১৯৬, হিন্দিয়া ৫/২৯৫)
২। দিনের বেলায় কুরবানী করা উত্তম। অবশ্য ১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাতেও কুরবানী করা জায়েয আছে। তবে তা অনুত্তম। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩২০, বাদায়ে‘ ৪/২২৩)
৩। ঈদের নামাযের আগে কুরবানী করা জায়েয নেই। তবে বৃষ্টি -বাদল বা অন্য কোন ওজরে যদি ১ম দিন ঈদের নামায আদায় করতে না পারে তাহলে ঈদের নামাযের সময় অতিক্রম হওয়ার পর ১ম দিনেও কুরবানী করা জায়েয। (বুখারী শরীফ-২/৮৩২, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৮)
৪। কুরবানী দাতা এক স্থানে আর কুরবানীর পশু আরেক স্থানে থাকলে কুরবানী দাতার ঈদের নামায পড়া বা না পড়া ধর্তব্য নয়। বরং পশু যে এলাকায় আছে ঐ এলাকায় ঈদের নামায হয়ে গেলে পশু জবাই করা যাবে। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৮)
৫। কেউ যদি কুরবানীর দিনগুলোতে পশু ক্রয় করতে না পারে এবং ওয়াজিব কুরবানীও আদায় করতে না পারে তাহলে পরবর্তীতে তার উপর কুরবানীর উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। (বাদায়ে‘ ৪/২০৪, কাযীখান ৩/৩৪৫)
৬। কেউ যদি কুরবানীর উদ্দেশ্যে পশু ক্রয় করে কিন্তু কুরবানীর দিনগুলোতে জবাই করতে পারেনি তাহলে খরিদকৃত পশুই সদকা করতে হবে। আর যদি কুরবানীর দিন অতিবাহিত হওয়ার পর জবাই করে তাহলে পুরো গোশত সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে গোশতের মূল্য যদি জীবিত পশুর চেয়ে কমে যায় তাহলে যে পরিমান মূল্য হ্রাস পেল তাও সদকা করতে হবে। (বাদায়ে‘ ৪/২০২, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২০-৩২১)

কুরবানীর পশুর বিবরণ

১। উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা এ ছয় প্রকার গৃহপালিত পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন- হরিণ, বন্য গরু ইত্যাদি পশুর গোশত হালাল হলেও তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নেই। (কাযিখান ৩/ ৩৪৮, বাদায়ে ৪/২০৫)
২। কুরবানীর পশু নির্দিষ্ট বয়সের হতে হবে। উট কমপক্ষে পাঁচ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে দুই বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে এক বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বার ক্ষেত্রে একটু ছাড় আছে। যদি ভেড়া বা দুম্বা এক বছরের কিছু কম হয় এবং ছয় মাস বা তার বেশি বয়সের হয় এবং এমন হিষ্টপুষ্ট যা দেখতে এক বছরের মতো মনে হয়, তাহলে তা দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয। (কাযিখান ৩/৩৪৮, বাদায়ে‘ ৪/ ২০৫-২০৬)
৩। ছাগলের বয়স এক বছর থেকে একদিন কম হলেও কুরবানী সহীহ হবে না। অনুরূপ উট, গরু, মহিষের ক্ষেত্রেও নির্ধারিত বয়সের একদিন কম হলেও তা দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে না।
৪। যে সব পশু কুরবানী করা জায়েয সেগুলোর নর-মাদা দুটোই কুরবানী করা জায়েয। তাই পাঠা ছাগল দিয়েও কুরবানী করা জায়েয আছে। (কাযিখান ৩/৩৪৮, বাদায়ে ৪/২০৫)
৫। কুরবানীর পশুর নির্ধারিত বয়স পূর্ণ হওয়া জরুরী। দাঁত বের হওয়া জরুরী নয়। সুতরাং পশুর বয়স যদি পূর্ণ হয় আর দাঁত দেখা না যায় তাহলেও তা দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে। (রহিমীয়াহ ৩/১৮৭)
৬। বিক্রেতা যদি কুরবানীর পশুর বয়স পূর্ণ হয়েছে বলে স্বীকার করে আর শারীরিক অবস্থা দেখেও তাই মনে হয় তাহলে বিক্রেতার কথার উপর নির্ভর করে পশু কিনে তা দ্বারা কুরবানী করা যাবে। (জাওয়াহিরুল ফিকহ-৬/২৭২)
৭। কুরবানীর পশুর বয়স আরবী মাস ও বছর হিসেবে গণনা করা হবে। (হিন্দিয়া ৫/২৯৭, রদ্দুল মুহতার ৯/৪৬৫)
৮। ধনী ব্যক্তির ওয়াজিব কুরবানী আদায়ের পশু চুরি হয়ে গেলে বা হারিয়ে গেলে অথবা মারা গেলে তার উপর আরও একটি পশু খরিদ করে কুরবানী করা ওয়াজিব। তবে গরীব ব্যক্তির কুরবানীর জন্য ক্রয়কৃত পশু চুরি হলে বা মারা গেলে তার উপর আরও একটি পশু খরিদ করে কুরবানী দেওয়া জরুরী নয়। (বাদায়ে ৪/২১৬)
৯। কুরবানীর পশু হারিয়ে যাওয়ার পর যদি আর একটি পশু ক্রয় করা হয় এবং হারানো পশুটিও পরে পাওয়া যায় তাহলে কুরবানী দাতা গরীব হলে দুটি পশুই কুরবানী করা ওযাজিব। আর ধনী হলে কোনো একটি কুরবানী করলেই হবে। তবে দুটিই কুরবানী করা উত্তম। (বাদায়ে ৪/১৯৯)
১০। কুরবানীর পশু কেনার পর বা নির্দিষ্ট করার পর তা থেকে উপকৃত হওয়া জায়েয নেই। যেমন- হাল চাষ , আরহণ করা, পশম কাটা ইত্যাদি। যদি কেউ এসব করে তাহলে তার মূল্য সদকা করে দিতে হবে। (হিন্দিয়া ৫/৩০০)
১১। কুরবানীর পশুর দুধ পান করা যাবে না। যদি জবাইয়ের সময় নিকটে হয় আর দুধ দোহন না করলে পশুর কষ্ট হবে না বলে মনে হয় তাহলে দোহন করবে না। প্রয়োজনে ওলানে ঠা-া পানি ছিটিয়ে দিবে। এতে দুধের চাপ কমে যাবে। যদি দুধ দোহন করে ফেলে তাহলে তা সদকা করে দিতে হবে। নিজে পান করে থাকলে মূল্য সদকা করে দিতে হবে। (হিন্দিয়া ৫/৩০১)
১২। কুরবানীর পশু ক্রয়ের পর জবাইয়ের আগে বাচ্চা দিলে ঐ বাচ্চা জীবিত সদকা করা উত্তম। বাচ্চাটিকে জবাই করলে তার গোশত সদকা করে দেওয়া জরুরী। ঐ গোশত খাওয়া যাবে না। গোশত খেলে গোশতের মূল্যও সদকা করে দিতে হবে। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩)
১৩। কুরবানীর পশু জবাই করার পর পেটে জীবিত বাচ্চা পাওয়া গেলে তাকেও জবাই করতে হবে। কেউ চাইলে তার গোশতও খেতে পারবে। তবে কুরবানীর দিনগুলোতে যদি জবাই না করে তাহলে জীবিত সদকা করে দিবে। (কাযিখান ৩/৩৫০)
১৪। ধনী ব্যক্তি কুরবানীর পশু ক্রয়ের পর কোন কারণবসত: পরিবর্তন করতে চাইলে পরিবর্তন করতে পারবে। এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন দ্বিতীয় পশুর মূল্য ১ম পশুর মূল্যের চেয়ে কম না হয়। যদি দ্বিতীয় পশুর মূল্য কম হয় তাহলে যে পরিমাণ মূল্য কম হয়েছে ঐ পরিমাণ মূল্য গরিবদের মাঝে সদকা করে দেওয়া উচিত। (হিন্দিয়া ৫/৩০২, কেফায়াতুল মুফতী ৮/১৯৮)

কুরবানীর পশুর দোষ-ত্রুটি

১। যে পশু তিন পায়ে চলে , এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা ভর করতে পারে না এমন পশুর কুরবানী জায়েয নেই। (জামে তিরমীযী ১/২৭৫, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩)
২। এমন দুর্বল পশু যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না। তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নেই। (জামে তিরমীযী ১/২৭৫, বাদায়ে‘ ৪/২১৪)
৩। যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এতো বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না। এমন পশু দ্বারা কুরবানী জায়েয নেই। আলমগীরি ৫/২৯৮। বাদাযে‘ ৪/ ২১৫।
৪। যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে পশুর কুরবানী জায়েয নেই। তবে যে পশুর শুধুমাত্র শিংয়ের খোল ভেঙ্গে গেছে, গোড়া বা মূল ঠিক আছে, সমূলে উৎপাটিত হয়নি এমন পশু দিয়ে কুরবানী জায়েয। (বাদায়ে‘ ৪/২১৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৪)
৫। যে পশুর শিং একেবারেই উঠেনি এমন পশু দিয়ে কুরবানী জায়েয। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৪)
৬। যে পশুর লেজ বা কোন একটি কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কুরবানী জায়েয নেই। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই। (কাযিখান ৩/৩৫২, আলমগীরি ৫/২৯৭-২৯৮)
৭। যে পশুর জন্মগতভাবেই এক কান নেই সে পশুর কুরবানী জায়েয নেই। (হেদায়া ৪/৪৪৮ ওয়াল ওয়ালিজিয়্যা-৩/৮১)
৮। যে পশুর এক চোখ পুরো নষ্ট বা এক চোখের অর্ধেকের বেশি দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে গেছে সে পশু দিয়ে কুরবানী জায়েয নেই। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩)
৯। কুরবানী দেওয়ার সময় পশুর পা ভেঙ্গে গেলে বা চোখ নষ্ট হলে তা দিয়ে কুরবানী দেওয়া জায়েয। (বাদায়ে ৫/ ৭৬ রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬৫)
১০। কুরবানীর নিয়তে ভালো পশু ক্রয় করার পর যদি তাতে এমন কোন দোষ দেখা যায় যে কারণে কুরবানী জায়েয হয় না, তাহলে ঐ পশুর কুরবানী সহীহ হবে। এর পরিবর্তে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। তবে ক্রেতা গরীব হলে ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারাই কুরবানী করতে পারবে। (বাদায়ে ৪/২১৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫)
১১। গর্ভবতী পশু কুরবানী করা জায়েয। তবে প্রসবের সময় আসন্ন হলে সে পশু কুরবানী করা মাকরুহ। (কাযিখান ৩/ ৩৫০)
১২। বন্ধ্যা পশুর কুরবানী জায়েয। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫)
১৩। হিজরা পশু দিয়ে কুরবানী করা জায়েয নেই। ফুকাহায়ে কেরাম কারণ বর্ণনা করেছেন যে, এর গোশত সিদ্ধ হয় না। তবে যদি কোন হিজরা পশুর কুরবানী করার পর তার গোশত সিদ্ধ হয় তাহলে তার কুরবানী সহীহ হবে। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫, হিন্দিয়া ৫/৩৪৫)
১৪। পাগল পশু যা বিচরণ করে আহার করে তা দিয়ে কুরবানী করা জায়েয। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩)
১৫। খাসি ছাগল দ্বারা কুরবানী করা জায়েয, বরং উত্তম। নবীজি সা. খাসি দুম্বা দ্বারা কুরবানী করেছেন। (আবু দাউদ ২/৩৮৬, ফাতহুল কাদির ৮/৪৯৮, মাজমাউল আনহুর ৪/২২৪)
১৬। এক অ- কোষ বিশিষ্ট পশু দ্বারা কুরবানী জায়েয। কারণ অ- কোষ না থাকা-টি প্রাণীর কুরবানী বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য প্রতিবন্ধক নয়। (ইমদাদুল আহকাম ৪/১৯০)
১৭। যদি গরু, মহিষ, উটের ওলানের দুটি বাট না থাকে বা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে তা দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে না। তবে একটি বাট না থাকলে কুরবানী সহীহ হবে। আর ছাগল, ভেড়া, দুম্বার একটি বাট না থাকলে কুরবানী সহীহ হবে না। রদ্দুল মুহতার ৯/৪৭০, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩২১।

কুরবানির গোশত

১। কুরবানির গোশত তিন ভাগ করে বণ্টন করা মুস্তাহাব। ১ভাগ নিজের, ১ভাগ আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের জন্য, ১ভাগ গরীব মিসকিনদের জন্য। অবশ্য ইচ্ছা করলে সব গোশত নিজের জন্য রাখতে পারে। তবে তা অনুত্তম। (বাদায়ে ৫/৮১ হিদায়াহ ৪/৪৩৩)
২। শরীকে কুরবানি করলে ওজন করে গোশত বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েয নেই। (রদ্দুল মুহতার-৬/৩১৭)
৩। কুরবানি দাতার নিজ কুরবানির গোশত খাওয়া মুস্তাহাব। (বাদায়ে ৪/২২৪)
৪। মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানি জায়েয। মৃত ব্যক্তি যদিও ওসিয়ত করে না যায় তাহলে সেটি নফল কুরবানি বলে গণ্য হবে। কুরবানির স্বাভাবিক গোশতের মত তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কুরবানির ওসিয়ত করে থাকে তাহলে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। গরীব মিসকিনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬)
৫। কুরবানির গোশত হিন্দু ও অন্য ধর্মাবলম্বীকে দেওয়া জায়েয। (আলমগীরী ৫/৩০০)
৬। কুরবানির গোশত , চর্বি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েয নেই। বিক্রি করলে পূর্ণ মূল্য সদকা করতে হবে। (বাদায়ে ৪/২২৫)
৭। কুরবানির গোশত যতদিন ইচ্ছা ততদিন পর্যন্ত ফ্রিজে রেখে বা অন্য কোন ভাবে সংরক্ষণ করে খেতে পারবে। এর জন্য নির্দিষ্ট কোন সময়সীমা নেই। (বাদায়ে৪/২২৪)
৮। কুরবানির চামড়া নিজেও ব্যবহার করতে পারবে আবার চাইলে অন্য যে কোন ব্যক্তিকেও দিতে পারবে। তবে যদি চামড়া বিক্রি করে তাহলে তার মূল্য শুধু ফকির মিসকিনদের মাঝেই সদকা করা ওয়াজিব। (আলমগীরী ৫/৩০১, কাজীখানা ৩/৩৫৪)
৯। কুরবানির পশুর চামড়া মূল্য মসজিদ, মাদ্রাসা, রাস্তা, ব্রিজ ইত্যাদি নির্মাণে ব্যবহার করা জায়েয নাই। এই টাকাটা এতিম ও গরিবদের মালিক বানিয়ে দেওয়া জরুরী। (হেদায়া ৪/৪৫০, হিন্দিয়া-২/৪৭২)
১০। জবাইকারী কসাই বা গোশত কাটার সহযোগিতাকারীকে চামড়া, গোশত বা কুরবানির পশুর কোন কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েয হবে না। টাকা-পয়সা বা কোনো কিছু দিয়ে তাদের পারিশ্রমিক আদায় করতে হবে। তবে পূর্ণ পারিশ্রমিক দেওয়ার পর পূর্বচুক্তি ছাড়া হাদিয়া হিসেবে গোশত দেওয়া যাবে। (বুখারি, হাদিস-১৭১৬, রদ্দুল মুহতার-৯/৮২)
১১। ঈদুল আযহার দিন সম্ভব হলে সর্বপ্রথম নিজ কুরবানির গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নাত। অর্থাৎ সকাল থেকে কিছু না খেয়ে প্রথমে কুরবানির গোশত খাওয়া সুন্নত। (শরহুল মুনিয়াহ-৫৬৬, রদ্দুল মুহতার-২/১৭৬)
১২। হালাল প্রাণীর সাতটি অংশ খাওয়া নিষেধ। (১) প্রাবাহিত রক্ত তবে গোশতের সাথে মিশ্রিত রক্ত এর অন্তর্ভুক্ত নয়। (২) অ-কোশ (৩) পুরুষাঙ্গ (৪) যোনী (৫) পিত্ত (৬) মূনির্র্দিষ্ট ত্রথলি (৭) গোশতের উপর ভাগের টিউমার বা জমাটরক্ত।
( বাদায়ে -৫/৬১)


মান্নতের কুরবানি

১। কেউ যদি কুরবানির মান্নত করে তাহলে সম্পূর্ণ গোশত গরীব মিসকিনদের দিতে হবে। ধনী ব্যক্তি ঐ গোশত খেতে পারবে না। মান্নতকারী নিজেও খেতে পারবে না যদিও সে গরীব হয়। যদি সে নিজে খায় বা ধনীকে দেয় তাহলে যে পরিমাণ খাবে বা দিবে তার মূল্য গরীবকে সদকা করে দেওয়া জরুরী। (হিন্দিয়া-৫/২৯৫)
২। কেউ যদি শুধু কুরবানির মান্নত করে কিন্তু পশুর নাম উল্লেখ না করে, তাহলে একটি ছাগল কুরবানি করতে হবে। (হিন্দিয়া-৫/২৯৫)
৩। নির্র্দিষ্ট পশু কুরবানি করার মান্নত করলে উক্ত পশুটিই কুরবানি করতে হবে। ঐ পশুটি ছাড়া অন্য পশু দিয়ে কুরবানি করলে মান্নত আদায় হবে না।
৪। মান্নতকৃত পশু যদি কুরবানি পর্যন্ত রাখা সম্ভব না হয় তাহলে উক্ত পশু বিক্রি করে টাকা গুলো হেফাজত করবে। কুরবানির সময় হলে উক্ত টাকা দিয়ে পশু ক্রয় করে কুরবানি দিবে। (হিন্দিয়া-৫/২৯৪)
৫। মান্নতের নির্ধারিত পশুটি যদি মারা যায় তাহলে মান্নতের কারণে আর কোন কুরবানি ওয়াজিব হবে না। তবে মান্নতকারী ধনী হলে তার ওয়াজিব কুরবানি তাকে আদায় করতে হবে। (রদ্দুল মুহতার-৬/৩২৫)

কাযা কুরবানি

১। কেউ যদি কুরবানি ওয়াজিব হওয়া সত্ত্বেও কয়েক বছরের কুরবানি আদায় না করে তাহলে বিগত বছরের প্রতিটি কুরবানির জন্য একটি মধ্যম ধরনের বকরির মূল্য গরীব মিসকিনদের মাঝে সদকা করে দেওয়া জরুরী। অন্যথায় ওয়াজিব ছেড়ে দেওয়ার গুনাহ নিয়ে থাকতে হবে। আর বিগত কুরবানির কাযা হিসেবে পশু কুরবানি করলে কাযা আদায় হবে না বরং তা নফলে পরিণত হবে। (রদ্দুল মুহতার-৯/৪৬৩, বাদায়ে-৪/২০৩)
২। যদি কোন শরীক পূর্বের বছরের কুরবানির নিয়ত করে আর কোন শরীক এবছরের কুরবানির নিয়ত করে তাহলে যে এবছরের নিয়ত করেছে তাঁর কুরবানি আদায় হয়ে যাবে। আর যাঁরা পূর্বের বছরের নিয়ত করেছে তাঁদের কুরবানি নফল হবে। তবে পুরো গোশত সদকা করে দিতে হবে। (রদ্দুল মুহতার-৬/৩২৬)

জবাই সংক্রান্ত

১। কুরবানির পশু নিজে জবাই করা উত্তম। কেননা নবী করিম (সা:) নিজ হাতে কুরবানির পশু জবাই করেছেন। তবে অন্যকে দিয়েও জবাই করাতে পারবে। এক্ষেত্রে কুরবানি দাতা পুরুষ হলে জবাই স্থলে তাঁর উপস্থিত থাকা ভাল। (মুসনাদে আহমদ-২২৬৫৭, বাদায়ে-৪/২২-২২৩)
২। জবাই করার সময় যদি কেউ জবাইকারীর সাথে ছুরিতে হাত রেখে সহায়তা করে তাহলে উভয়কেই বিসমিল্লাহ বলতে হবে। কোন একজন ইচ্ছাকৃত বিসমিল্লাহ ছেড়ে দিলে ঐ পশু খাওয়া বৈধ হবে না। (রদ্দুল মুহতার-৬/৩৩৪)
৩। অনেক সময় জবাইকারীর জবাই সম্পন্ন হয় না। তখন কসাই বা অন্যকেউ জবাই সম্পন্ন করে থাকে। এক্ষেত্রে অবশ্যই উভয়কেই নিজ নিজ জবাইয়ের আগে বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার পড়তে হবে। যদি কোন একজন ইচ্ছাকৃত না পড়ে তাহলে ঐ কুরবানি সহীহ হবে না এবং জবাইকৃত পশুও হালাল হবে না। (রদ্দুল মুহতার-৬/৩৩৪)
৪। কুরবানির পশু জবাইয়ের পূর্বে বা পরে কুরবানি দাতার নাম বলার প্রয়োজন নেই। নাম না বলে বা ভুল নাম বলে জবাই করলেও প্রকৃত মালিকের পক্ষ থেকেই কুরবানি সহীহ হবে। (হিন্দিয়া-৫/৩৩৬)
৫। জবাইয়ের পর পশু নিস্তেজ হওয়ার আগে চামড়া খসানো বা অন্য কোন অঙ্গ কাটা মাকরুহ। (বাদায়ে-৪/২২৩)
৬। ধারালো অস্ত্র দ্বারা জবাই করা উত্তম। (বাদায়ে-৪/২২৩)
৭। এক পশুকে অন্য পশুর সামনে জবাই করা উচিত নয়। (ফাতাওয়ায়ে রহীমিয়া-১০/৬৯)
৮। পশুর মাথা শরীর থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া মাকরুহ। (আল বাহরুল রায়াকে-৮/১৭০)
৯। কুরবানির দিন খাওয়ার জন্য হাঁস-মুরগি জবাই করা জায়েয আছে। তাকে কুরবানি আদায়ের উদ্দেশ্যে তা জবাই করা জায়েয নেই। (রদ্দুল মুহতার-৬/৩১৩, বাজাযিয়া-৬/২৯০)
১০। কুরবানির পশু কেনার পর বা নির্দিষ্ট করার পর তা থেকে উপকৃত হওয়া জায়েয নেই। যেমন:- হাল চাষ, আরোহণ করা, পশম কাটা ইত্যাদি। সুতরাং কুরবানির পশু দ্বারা এসব করা যাবে না। যদি করে তাহলে পশমের মূল্য, হাল চাষের মূল্য ইত্যাদি সদকা করে দিতে হবে। (কাজী খান-৩/৩৫৪, আলমগীরী-৫/৩০০)
১১। কুরবানির পশুর দুধ পান করা যাবে না। যদি জবাইয়ের সময় আসন্ন হয় আর দুধ দোহন না করলে পশুর কষ্ট হবে না বলে মনে হয়, তাহলে দোহন করবেনা। প্রয়োজনে ওলানে ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে দিবে। এতে দুধের চাপ কমে যাবে। যদি দুধ দোহন করে ফেলে তাহলে তা সদকা করে দিতে হবে। আর নিজে পান করে থাকলে মূল্য সদকা করে দিবে। (মুসনাদে আহমদ-২/১৪৬, রদ্দুল মুহতার-৬/৩২৯,আলমগীরী-৫/৩০১)

শরিকানা কুরবানি

১। উট, গরু, মহিষে সর্বোচ্চ সাতজন শরীক হতে পারে, এর বেশি অংশীদার হলে কারো কুরবানি সহীহ হবে না। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা যত বড়ই হোক না কেন শুধু একজন কুরবানি দিতে পারে। এতে একাধিক ব্যক্তি শরীক হলে কারো কুরবানি সহীহ হবে না। (কাজীখান ৩/৩৪৯, বাদায়ে-৪/২০৭-২০৮)
২। সাতজন মিলে কুরবানি করলে সবার অংশ সমান হতে হাবে। কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না। যদি কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম হয় তাহলে কোন শরীকের কুরবানি সহীহ হবে না। (বাদায়ে-৪/২০৭)
৩। উট, গরু,মহিষে সাত ভাগে এবং সাতের কমে যে কোন সংখ্যা যেমন-দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কুরবানি করা জায়েয। এক্ষেত্রে জোড় বা বেজোড় কোনটাই হওয়া জরুরী নয়। (বাদয়ে-৪/২০৭)
৪। যদি কেউ আল্লাহ তা’আলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে ক্রুবানি না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কুরবানি করে তাহলে তাকে অংশীদার বানালে কারো কুরবানি সহীহ হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরীক নির্বাচন করা উচিত। (বাদায়ে-৪/২০৭)
৫। কুরবানির পশুর সাথে আকিকার অংশ দেওয়া জায়েয আছে। (রদ্দুল মুহতার-৬/৩৬২)
৬। কোন কোন এলাকায় একটি কথার প্রচলন আছে যে,আকিকা না করলে কুরবানি করা যায় না। এটি একটি ভুল কথা। কারণ কুরবানি আকিকার সাথে শর্ত যুক্ত নয়। দুটি ভিন্ন ভিন্ন এবাদত। তাই নিজের আকিকা না করলেও কুরবনি করা যাবে। (আপকি মাসায়েল উন কি হল-৪/১৪২)
৭। শরীকদের কারো পুরা বা অধিকাংশ উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে কারো কুরবানি সহীহ হবে না। (হিন্দিয়া-৫/৩৯২)
৮। বে নামাযির ব্যক্তির সাথে কুরবানিতে শরীক হওয়া জায়েয আছে। কেননা কুরবানি সহীহ হওয়ার জন্য নামাযি হওয়া শর্ত নয়। যদিও নামায ছেড়ে দেওয়া মারাত্মক কবিরা গুনাহ। (তাবয়িনুল হাকায়েক-২/৪৭৪, আপকি মাসায়েল -৪/১১৮)
৯। কেউ কেউ গরু, মহিষ বা উট একাই কুরবানি দেওয়ার নিয়তে ক্রয় করে এবং সে ধনী হয় তাহলে সে চাইলে পশু ক্রয়ের পরেও অন্যকে শরীক করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে একা কুরবানি দেওয়াই উত্তম এবং শরীক করলে যে টাকা পাবে সে টাকা সদকা করা উত্তম। আর এমন গরীব ব্যক্তি যার উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়, যদি একাই কুরবানি দেওয়ার নিয়তে পশু ক্রয় করে তাহলে সে অন্যকে ঐ পশুতে শরীক করতে পারবে না। এমন গরীব ব্যক্তি কাউকে শরীক করতে চাইলে পশু ক্রয়ের সময়ই শরীক করার নিয়ত থাকতে হবে। (বাদায়ে-৪২১০)
১০। মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে নফল কুরবানি করা জায়েয আছে। এক্ষেত্রে একটি ছাগল বা গরুর এক সপ্তমাংশ শুধু একজন মৃতের পক্ষ থেকেই কুরবানি করা যাবে। তবে যদি কুরবানি নিজের পক্ষ থেকে আর সওয়াব মৃতের জন্য নিয়ত করে তাহলে একাধিক মৃতের নিয়ত করতে পারবে। সেক্ষেত্রে মৃতের নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা নির্ধারিত থাকে না। (রহীমিয়া-১০/৩৯-৪০)
১১। কয়েকজন মিলে কুরবানি করার ক্ষেত্রে জবাইয়ের আগে কোন শরীক মারা গেলে তাঁর ওয়ারিশরা যদি মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানি করার অনুমতি দেয় তাহলে তা জায়েয হবে, নতুবা ঐ শরীকের টাকা ফেরত দিতে হবে। অবশ্য তাঁর স্থলে অন্যকে শরীক করা যাবে। (বাদায়ে-৪/২০৯)
১২। একটি গরু বা উটে যদি ছয়জন সমান ভাবে শরীক হয় এবং সবাই মিলে এক সপ্তমাংশ নবীজীর জন্য কুরবানি করে তাহলে সকলের কুরবানি আদায় হবে। (রহীমিয়া-২/৯০)
১৩। একটি গরুতে ছয়জন ছয়ভাগ আর দুইজন অর্ধেক অর্ধেক টাকা দিয়ে একভাগ একজনের নামে দিবে এশর্তে যে গোশত টাকা অনুপাতে ভাগ করে নিবে। এভাবে কারো কুরবানি সহীহ হবে না। কেননা এখানে মোট আট জন শরীক হচ্ছে এবং দুইজন ব্যক্তির অংশ এক সপ্তমাংশ থেকে কম হচ্ছে। (কিতাবুন নাওয়াযেল-১৪/৫৩২)

ফতোয়া প্রদান করেছেনঃ
মুফতি আব্দুল আলিম সাহেব (দা.বা.)
নায়েবে মুফতী-ফতোয়া বিভাগ
আল জামিয়া আল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা, নওগাঁ ।


শেয়ার করুন !!
Scroll to Top