আল জামি'আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা

ওয়াসওয়াসা তালাক প্রসঙ্গে।

বরাবর,
ফতোয়া বিভাগ, আল-জামি’আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়া পোরশা,নওগাঁ।
বিষয়: ওয়াসওয়াসা তালাক প্রসঙ্গে।
প্রশ্ন: আমার স্বামী আমাকে বলেছিল যদি কখনো দেখি আমি ছাড়া তোমার মনে এক সেকেণ্ডের জন্য অন্য কেউ তো তোমাকে অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করবো, তালাক দিতে এক সেকেণ্ডও লাগবে না। যে নারীর অন্য পুরুষের প্রতি ঝোঁক সে আমার না হোক। কোনো বন্ধু এমন করলে তাকে গুরুত্ব দেয়নি সেখানে তুমি তো স্ত্রী। সোজা তালাক (এইটুকু বলছিল কি না জানি না )আমি তাকে পরে বলেছিলাম যে এর মানে কি আমি কারোর কথা একবার ভাববার সাথে সাথে তালাক হয়ে যাবে। আমি ওয়াস‌ওয়াসার রোগী। আমি তার কথা নিয়ে বাড়িবাড়ি করছিলাম (সোজা তালাক দ্বারা কি তালাক হয়ে যাবে নাকি তালাক দিবা?)তাকে জিজ্ঞেস করছিলাম, যে তুমি কি কোনো শর্ত দিলে? সে বলছিল ,যে আমি শর্ত হিসেবে বলি নাই। আমার মানসিক শান্তির জন্য সে পরে বলছিল, যে আচ্ছা আমি সব শর্ত ফিরিয়ে নিচ্ছি (আমি এক কথা নিয়ে অমন বাড়াবাড়ি করছিলাম বলে সে শর্ত তুলে নিয়েছিল যদিও সে কোনো শর্ত দেয়নি )। সে কোনো শর্ত না দিয়েও যে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলছে ,শর্ত দেয়নি তবে আমার মানসিক শান্তির জন্য শর্ত তুলে নিয়েছে। সে শর্ত না দিয়েও যে তুলে নিয়েছিল এর দ্বারা কি শর্ত আমার উপর বহাল হয় ? সে বলছিল তুলে নিচ্ছি ।এর মানে কি এই হয় যে, তার এই তুলে নেওয়ার কথা দ্বারা আমার উপর আমার সন্দেহ করা শর্ত পতিতি হয় ? আমি এক জায়গায় পড়ছিলাম যে দুই বন্ধু গল্পের সময় বলে কিরে একা বসে আছিস ব‌উকে তালাক দিছিস নাকি?উত্তরে হ্যাঁ দিয়েছি (বন্ধুর উপর রাগ করে বলেছিল)। এর দ্বারা তার এক তালাক সংঘটিত হয়। তো আমার এই বিষয়টাও কি এমন যে, আমার স্বামী আমার চিন্তা দূর করার জন্য বলছিল, যে আমি শর্ত তুলে(তুলে নেওয়া যায় না তা তখন সে জানতো না) নিচ্ছি ।যদিও সে তখন কোনো শর্ত দেয়নি। তবে সে যে শর্ত তুলে নিল এর মাধ্যমে কি এটা সাব্যস্ত হয় যে শর্ত দিয়েছিল? আর আমি যদি এমন কিছু করে থাকি তাহলে কি তালাক হয়ে গিয়েছে? আমার স্বামী তখন কোনো শর্ত না দিলেও আমি তার কথা(সোজা তালাক) নিয়ে বেশি সন্দেহ করি যে সে এর মাধ্যমে হয়তো তালাক হয়ে যাবে বোঝাতে চাইছে।আমি বার বার তাকে জিজ্ঞাসা করছিলাম।আমার অতিরিক্ত সন্দেহ দূর করার জন্য সে বলছিল যে আচ্ছা সব শর্ত তুলে নিলাম। ওই দুই বন্ধুর কথোপকথনে একজন তালাক না দিয়েও , শুধু বন্ধুর কাছে মিথ্যা স্বীকারোক্তির কারনে যদি তালাক হয়ে যায় ,তেমন আমাকে চিন্তামুক্ত করার জন্য আমার স্বামীর শর্ত তুলে নিলাম বলার দ্বারা কি আমার উপর ওই শর্ত আরোপ হয়ে যায়? কেননা তালাকের শর্ত দিলে তো আর ফেরত নেওয়া যায় না, অনেক জটিল করে প্রশ্ন করছি। আমার ওয়াস‌ওয়াসা আছে। তাড়াতাড়ি উত্তর দিয়েন প্লিজ। আমার সংসারে অশান্তি হচ্ছে।
নিবেদক
মুছা. তিশা
بسم الله الرحمن الرحيم،حامدا و مصليا و مسلما-
সমাধান: প্রশ্নোক্ত বিবরণ অনুযায়ী স্বামীর বক্তব্যটি তালাকের শর্ত হবে না এবং পরবর্তীতে স্বামী শত না দিও যে শত তুলে নিয়েছে এর কারণেও কোন শর্ত আরোপ হবে না। সুতরাং স্বামীর এ ধরনের বক্তব্যের পর আপনি যদি অন্য কোন পুরুষের কথা মনের মধ্যে ভেবে থাকেন তাহলে কোন তালাক কাযকর হবে না। আর দুই বন্ধুর তালাক সম্পর্কের কথোপকথনের মাসআলাটি আপনার মাসআলার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই ঐ মাসআলার সাথে আপনার বিষয়টি মিলানো সঠিক হয়নি।
উল্লেখ্য, জেনে রাখা উচিত যে, ওয়াসওয়াসা হলো শয়তানের পক্ষ থেকে কুমন্ত্রণা। এর দ্বারা শয়তানের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ঈমানদারকে সর্বক্ষণ চিন্তা পেরেশানিতে আবদ্ধ রাখা। তাই এর প্রতিকার হচ্ছে সেদিকে একেবারেই ভ্রুক্ষেপ না করা, বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করা, তাওবা ইস্তেগফার করা, গুনাহের কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা এবং নিম্নে বর্ণিত দোয়াগুলো বেশি-বেশি পড়া।
أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ  (١)
উচ্চারণ: “আউযুবিল্লাহি মিনাশ্ শায়তানির রাজীম”।
(٢) رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَنْ يَحْضُرُونِ ( سورة المؤمن ٩7 -٩٨ )
উচ্চারণ: “রাব্বি আউযুবিকা মিন হামাযাতিশ্ শায়াতীন ওয়া আউযুবিকা রাব্বি আই ইয়াহ্‌দুরুন”।
(3) آمنت بِاللَّهِ وَ رَسوله
উচ্চারণ: “আমানতু বিল্লাহি ওয়া রাসূলিহি”।

الاحالة الشرعية على المطلوب
قوله تعالى : وإما ينزغنك من الشيطان نزغ فاستعذ بالله إنه سميع عليم.(سورة الأعراف-200)
أخرج الإمام البخارى في” صحيحه “(برقم 2528) عن أبى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إن الله تجاوز عن أمتى ما وسوست به صدورها مالم تعمل أوتتكلم
أخرج الإمام مسلم في” صحيحه “(برقم 134) عن أبى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يزال الناس يتساءلون حتى يقال هذا خلق الله الخلق فمن خلق فمن وجد من ذلك شيئا فليقل أمنت بالله
وفي” الهندية “(1/452) قالت لزوجها من باتونمي باشم فقال الزوج مباش فقالت طلاق بدست تو است مرا طلاق كن فقال الزوج طلاق مي كنم طلاق مي كنم وكرر ثلاثا طلقت ثلاثا بخلاف قوله لأنه استقبل فلم يكن تحقيقا بالتشكيك وفي المحيط لو قال بالعربية أطلق لا يكون طلاقا إلا إذا غلب استعماله للحال فيكزن طلاقا
وفي” الدر المختار”(3/237) لو أقر بالطلاق هازلا أو كاذبا فقال في البحر إن مراده لعدم الوقوع في المشبه به عدمه ديانة ثم نقل عن البزازية والقنية لو أراد به الخبر عن الماضي كذبا لا يقع ديانة
وفي” تنقيح الفتاوى الحامدية”(1/38) صيغة المضارع لا يقع بها الطلاق إلا إذا غلب في الحال كما صرح به الكمال ابن الهمام
وفي” حاشية الطحطاوي على الدر المختار”(2/113) الإقرار بالطلاق كاذبا يقع به قضاء لا ديانة.
وفي راجع أيضا في “الدرالمختار”(4/427) و” التاتارخانية”(3/261) و”بدائع الصنائع”(3/283) و” فتاوى دار العلوم زكريا”(4/44) و”احسن الفتاوى”(5/152
وفي” فتاوى دارالعلوم ديوبند”(9/51) سوال: استہفام اور خبر کاذب سے طلاق واقع ہو جاتی ہے یا نہیں ، مثلا کسی نے ایک شخص سے کہا کیا تم نے اپنے زوجہ کو طلاق دی ہے اس نے کہا دی ہے        الجواب: استہفام کے جواب میں یہ کہنے سے کہ ہاں دی ہے  یا جھوٹ کہدینے سے کہ ہاں دی ہے طلاق واقع ہو جاتی ہے.انتهى ، والله أعلم بالصواب

ফতোয়া প্রদান করেছেনঃ
মুফতি আব্দুল আলিম সাহেব (দা.বা.)
নায়েবে মুফতী-ফতোয়া বিভাগ
আল জামিয়া আল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা, নওগাঁ ।

শেয়ার করুন !!
Scroll to Top