আল জামি'আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা

ওয়াসওয়াসা প্রসঙ্গে

বরাবর,
ফতোয়া বিভাগ, আল-জামি’আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়া,পোরশা,নওগাঁ।
বিষয়: ওয়াসওয়াসা প্রসঙ্গে।
প্রশ্ন: আসসালামু আলাইকুম, মুহতারাম আমার প্রশ্নের উত্তর দিবেন দয়া করে আমি খুবই ওয়াসওয়াসা রোগে আক্রান্ত যার কারণে আমি শারীরিক ও মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। আমার এখন আমার স্বামীর সাথে কথা বলতে ভয় হয়। আমার খালি মনে একটাই চিন্তা ঘুরপাক খায় আমাদের বিবাহ হালাল আছে কিনা 😭। মুহতারাম আমার মনে খালি তালাকের ওয়াসওয়াসা আসে। আপনাকে বিস্তারিত বলি, আমার স্বামী কাজের সুবাদে আমার কাছ থেকে দূরে থাকেন। একদিন তার সাথে আমার ম্যাসেজে কথা হচ্ছিল। আমার ম্যাসেজ দেরিতে যাওয়ার কারণে আমার স্বামী বলেন হারাই গেলা। হারাই গেলা দেখে আমি ওয়াসওয়াসাতে পড়ে যাই আর খুব ভয় পাই তাকে ফোন দিয়ে বলি ম্যাসেজ ডিলেট করতে। সে তারপর একটু রাগ করে বলে আরেহ হারাই গেলা বলতে ম্যাসেজ না দিয়ে কই গেস, তুমি কি উল্টাপাল্টা চিন্তা বাদ দিবা না! তারপর ফোন কেটে দেয়। একটু পর সে আবার ফোন দেয় তখন কিছু সময় সাধারণভাবে সুন্দর মত কথা হয়। তারপর আমি তাকে বলি তুমি আমাকে বকা কেন দিলা, সে বলে কই বকা দিলাম, আমি বলি ম্যাসেজ ডিলেট করতে বলার পরে, আমার স্বামী তারপর বলেন আমি কি খারাপ কিছু বলছি তুমি সাধারণ কথা সাধারণ ভাবে নাওনা কেন, তুমি যেভাবে মিন করতেছ আমি সেভাবে বলিনি আর সেভাবে মিন করার মতো কিছুই ঘটেনি। এরপরও সে আমার সাথে সুন্দর মত কথা বলে ফোন রেখে দেয়। মুহতারাম এরপরও আমি ওয়াসওয়াসাতে আছি। আমার মনে হয় শুধু সে কি আমাকে তালাকের কথা বলেছিল সে কি আমাকে উল্টোপাল্টা কিছু বলেছিল আমি এই চিন্তা ছাড়তে পারতেছি না 😭। আমার যতটুকু মনে আছে আমি উপরের যে বর্ণনা দিয়েছি সে ওইগুলোই বলেছিল এরবেশি আমার কিছুই মনে নেই। আমার স্বামীকে আমি সোজাসুজি ভয়ে কিছুই জিজ্ঞেস করিনি। কারণ আমি তাকে হারানোর অনেক ভয় পাই 😭। কিন্ত সে আমাকে বলেছে আমাদের মধ্যে স্বাভাবিক কথা হয়েছে আমি অযথা চিন্তা করে অসুস্থ হয়ে পড়ছি। আমাদের মধ্যে আলহামদুলিল্লাহ ভালই সম্পর্ক। এখন আমি এই ওয়াসওয়াসা থেকে বের হতে পারি না। সে কি আমাকে কোন তালাকের কথা বলেছিল কিনা, আমার মনে পড়ছে না এমন কিছু। আমার মনে খালি চিন্তা আসতেছে আমাদের বিবাহ হালাল আছে কিনা😭। মুহতারাম, আমাদের বিবাহ কি হালাল আছে? আমার এইসব চিন্তার কারণে আমাদের বিবাহ কি ক্ষতিগ্রস্ত হবে? মানুষ যেটা মনে করতে পারে না সেটার জন্য কি কোন গুনাহ হবে? মুহতারাম, আমি অনেক খারাপ অবস্থার মধ্যে আছি😭। দয়া করে পরামর্শ দিন আমাদের বিবাহ কি হালাল আছে?😭
নিবেদক
ফারজানা আক্তার
بسم الله الرحمن الرحيم،حامدا ومصليا ومسلما-
সমাধান: প্রশ্নোক্ত বিবরণ অনুযায়ী আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক পূর্বের ন্যায় বহাল আছে। আপনার এধরণের চিন্তার কারণে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্কে কোন ক্ষতি হবে না। কারণ মনের কল্পনা বা চিন্তা দ্বারা বিবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা আমার উম্মতের মনে মনে কথা ক্ষমা করে দিয়েছেন, যতক্ষণ না সে তা কাজে বাস্তবায়ন করে কিংবা কথার মাধ্যমে প্রকাশ করে। (বোখারী শরীফ:- হাদীস নং- ২৫২৮)। তবে এধরণের চিন্তা-ভাবনা পরিহার করা উচিত।
এছাড়া আপনার স্বামী তো স্পষ্টভাবে বলেছে, “তুমি যেভাবে মিন করতেছো আমি সেভাবে বলিনি। আর সেভাবে মিন করার মতো কিছুই ঘটেনি”। এর দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, আপনার স্বামী তালাকের কোন কথাই বলেনি।
উল্লেখ্য, জেনে রাখা উচিত যে, ওয়াসওয়াসা হলো শয়তানের পক্ষ থেকে কুমন্ত্রণা। এর দ্বারা শয়তানের উদ্দেশ্য হচ্ছে ঈমানদারকে সর্বদা চিন্তা-পেরেশানীতে আবদ্ধ রাখা। তাই এর প্রতিকার হচ্ছে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করা। বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করা, তওবা ইস্তেগফার করা, গুনাহের কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা এবং নিম্নে বর্ণিত দোআগুলো বেশি বেশি পড়া।

 أعوذ بالله من الشيطان الرجيم. (১)
رب أعوذبك من همزات الشياطين وأعوذبك رب أن يحضرون. (سورة المؤمن: 97-98)  (২)
ﺁمنت بالله ورسوله. (৩)

الاحالة الشرعية على المطلوب-
قوله تعالى في سورة الأعراف (200) : وإما ينزغنك من الشيطان نزغ فاستعذ بالله إنه سميع عليم
أخرج الإمام البخارى في” صحيحه “(برقم 2528) عن أبى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إن الله تجاوز عن أمتي ما وسوست به صدورها مالم تعمل أوتتكلم
أخرج الإمام مسلم في” صحيحه “(برقم 134) عن أبى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: لا يزال الناس يتساءلون حتى يقال هذا خلق الله الخلق فمن خلق فمن وجد من ذلك شيئا فليقل أمنت بالله
وفي “الدر المختار” (8/178) ونصابها لغيرها من الحقوق سواء كان الحق مالا أو غيره كنكاح وطلاق ووكالة ووصية واستهلاك صبي ولو للإرث رجلان أو رجل وامرأتان
وفی “فتاوی قاسمیہ”(14/425)محض لڑکی کے کہنے کی وجہ سے شرعا طلاق کا ثبوت نہیں ہوگا جب تک دو گواہوں سے ثابت نہ کر دے یا شوہر اقرار نہ کر لے
وفی “کتاب النوازل”(9/145) جبکہ شوہر طلاق کا منکر ہے اور عورت کے پاس طلاق کا کوئ شرعی ثبوت نہیں ہے، تو اس پر کوئ طلاق واقع نہ ہوگی. انتهى،  والله أعلم بالصواب

ফতোয়া প্রদান করেছেনঃ
মুফতি আব্দুল আলিম সাহেব (দা.বা.)
নায়েবে মুফতী-ফতোয়া বিভাগ
আল জামিয়া আল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা, নওগাঁ ।

শেয়ার করুন !!
Scroll to Top