আল জামি'আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা

আন্তঃধর্মীয় সংলাপ প্রসঙ্গে

শেয়ার করুন !!

বরাবর,
ফতোয়া বিভাগ, আল জামিয়াতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়া পোরশা,নওগাঁ।
বিষয়: আন্তঃধর্মীয় সংলাপ প্রসঙ্গে।
প্রশ্ন: আন্তঃধর্মীয় সংলাপ। এই বিষয়টা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছি। সম্মানিত ওলামায়ে কেরামের কাছে আবেদন এই যে, এই মতবাদ কি মুসলিমদের জন্য উপকারী? কুরআন-সুন্নাহর ‍নির্দেশনা অনুযায়ী এটা কি ‍অনুসরণযোগ্য না এর থেকে আমরা দূরত্ব বজায় রাখবো?
নিবেদক
মুহাঃ আলম
بسم الله الرحمن الرحيم،حامدا و مصليا و مسلما-
সমাধান: আন্তঃধর্মীয় সংলাপ বলা হয়, নিজের ধর্মের সত্যতা, ধর্মীয় বিশ্বাস, ন্যায্যতা, তথা সমুদয় মূল্যবোধ বজায় রেখে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, সম্মান, উদারতা প্রদর্শন করে পারস্পরিক যে আলাপ আলোচনা করা হয়, তাই আন্তঃধর্মীয় সংলাপ। আন্তঃধর্মীয় সংলাপের সংজ্ঞা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে রাখলে সুস্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে, এ ধরনের সংলাপ মুসলমানদের জন্য কোনভাবেই কল্যাণকর নয়! বরং এটি মুসলিম জাতির ঈমানী শক্তিকে ধ্বংস করার একটি গভীর ষড়যন্ত্র। যাতে ইসলামই যে একমাত্র সত্য ধর্ম এ ধরনের আকীদা-বিশ্বাস মুসলমানদের থেকে নির্মূল হয়ে যায় এবং ইসলামকে অন্যান্য ধর্মের মত একটি সাধারণ ধর্ম হিসেবে বিশ্বাস করে নেয়। এ ধরনের সংলাপের উদ্দেশ্যই হল, ঈমান ও কুফরের সীমারেখা এবং ধর্মে ধর্মে ব্যবধানের মানসিকতা মুসলিমদের থেকে উঠিয়ে দিয়ে এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেখানে মুমিন ও কাফেরকে ভিন্ন চোখে দেখা হবে না। বরং ভালবেসে বুকে টেনে নেবে। পরস্পর ভ্রাতৃত্ববন্ধন বজায় রাখবে। ফলে ধর্মীয় স্বাতন্ত্রবোধ ধ্বংস হয়ে যাবে এবং পরবর্তী প্রজন্মকে খুব সহজেই ধর্মান্তরিত করা যাবে। অথচ হাদীসে নিজ ধর্মের স্বকীয়তা, স্বাতন্ত্রবোধ ও সংস্কৃতিকে ধরে রাখার জন্য জোরাল তাকিদ এসেছে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, “যে অন্য ধর্ম বা জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে সে তাদের দলভুক্ত হবে”।(আবু দাউদ-৪০৩১)।
সুতরাং এ ধরনের সংলাপের মূল যে লক্ষ্য “ধর্মে-ধর্মে কোন বিভেদ নেই, নিজ ধর্মকে শ্রেষ্ঠ এবং অন্য ধর্মকে খাটো করে দেখা যাবে না, তা সম্পূর্ণ শরীয়ত পরিপন্থী ও ঈমান বিধ্বংসী। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম।(সূরা আলে ইমরান-১৯)।
অন্যত্র আরও বলেন, আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।( সূরা মায়েদা-৩)।
যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিনকালেও তার থেকে তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের দলভুক্ত হবে।(সূরা আলে ইমরান-৮৫)।
হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ঐ সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ! এই উম্মতের ইহুদি- নাসারা যেকোন লোক আমার আগমনের কথা শুনবে তারপর আমি যে দ্বীন নিয়ে এসেছি তাতে ঈমান না এনেই মারা যাবে, নিঃসন্দেহে সে জাহান্নামী হবে।(সহীহ মুসলিম-১৫৩)।
পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহ বিকৃত হয়ে গেছে। যতটুকু সহীহ ছিল ইসলাম আসার সাথে সাথে তাও রহিত হয়ে গেছে। কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ তা‘য়ালা একমাত্র ইসলামকে গ্রহণযোগ্য ধর্ম মনোনীত করেছেন। অন্য সকল ধর্ম ও মতবাদ বাতিল করে দিয়েছেন। অতএব যে ব্যক্তি ইসলাম ধর্মের পাশাপাশি অন্য কোন ধর্ম বা মতবাদ অনুসরণ করাকে বৈধ মনে করবে কিংবা সেগুলোকেও সহীহ এবং নাজাতের ওসিলা মনে করবে সে নিশ্চিতভাবে কাফের এবং চিরস্থায়ী জাহান্নামী। তদ্রূপ যে ব্যক্তি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের কাফের মনে করবে না সেও কাফের। ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, ইসলাম ধর্ম সর্বজনবিদিত এবং সকল মুসলমানের ঐক্যমতে সাব্যস্ত যে, যে ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম ব্যতীত অন্যকিছু কিংবা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনীত শরীয়ত ব্যতীত ভিন্ন কোন শরীয়ত অনুসরণের বৈধতা দেবে  সে কাফের।( মাজমুউল ফাতওয়া-২৮/২৬১)।
উক্ত সংলাপের উদ্দেশ্য, ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন হবে না, ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে ভালবাসা যাবে না বা কাউকে ঘৃণা করা যাবে না। অথচ হাদীসে ধর্মের ভিত্তিতে আল্লাহর জন্য কাউকে ভালবাসা এবং আল্লাহর জন্য কাউকে ঘৃণা করাকে ঈমানের পরিপূর্ণতার অংশ বলা হয়েছে। এছাড়া মানবজাতির বিভাজন হবে ঈমান ও কুফরের ভিত্তিতে। একদল ঈমানদার আল্লাহ তা‘য়ালার প্রিয়পাত্র, সৃষ্টির সেরা এবং চিরস্থায়ী জান্নাতী। আরেকদল কাফের আল্লাহর দুশমন এবং চিরস্থায়ী জাহান্নামী। কাজেই যারা ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন উঠিয়ে দিতে চায়, ঈমান ও কুফরের সীমারেখা মিটিয়ে দিতে চায়, সম্প্রীতির নাম করে ঈমান ও কুফরকে এক করে ফেলতে চায়, তারা নিঃসন্দেহে কাফের। আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন, নিঃসন্দেহে সমস্ত জীবের মাঝে আল্লাহর নিকট তারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট যারা কুফর অবলম্বন করেছে, যে কারণে তারা ঈমান আনছে না।(সূরা আনফাল-৫৫)।
এছাড়া ইসলাম বিদ্বেষী কুফুরী শক্তিগুলোই সাধারণত এ ধরনের সংলাপের আয়োজন করে থাকে, যারা শতাদ্বীর পর শতাদ্বী ধরে ইসলাম ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এখান থেকেও অনুমান করা যায় যে, এ ধরনের সংলাপের গন্তব্য কোথায়। আসলে এর দ্বারা উদ্দেশ্য ধর্মান্তরের পথ খোলা। সাধারণ মুসলমানদের মনে সন্দেহের বীজ বপন করা। ইসলামের ব্যাপারে সংশয় তৈরি করা । এভাবে একসময় ইসলাম থেকে বের করে কুফরে ঠেলে দেওয়া। সম্প্রীতিবাদীদের এটাই লক্ষ বস্তু। এজন্য এ জাতীয় আন্তঃধর্মীয় সংলাপ থেকে অবশ্যই মুসলমানদের দূরত্ব অবলম্বন করতে হবে।
উল্লেখ্য, ইসলামই আল্লাহর একমাত্র মনোনীত ধর্ম এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। অন্য সকল ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থ বাতিল এ ব্যাপারেও কোন সন্দেহ নেই। তবে ইসলাম অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম পালনে স্বাধীনতা দিয়েছে এবং তাদের ধর্ম পালনে কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করা বা জোরপূর্বক ইসলামে দীক্ষিত করাকে অবৈধ ঘোষণা করেছে।

الاحالة الشرعية على المطلوب
قال الله تعالى إن الدين عند الله الإسلام.(سورة آل عمران-19)
و قال الله تعالى: اليوم أكملت لكم دينكم وأتممت عليكم نعمتي ورضيت لكم الإسلام دينا.(سورة المائدة-3)
و قال الله تعالى: ومن يبتغي غير الإسلام دينا فلن يقبل منه وهو في الآخرة من الخاسرين.(سورة آل عمران-85)
و قال الله تعالى: وإن منهم لفريقا يلوون ألسنتهم بالكتاب لتحسبوه من الكتاب وما هو من الكتاب ويقولون هو من عند الله ويقولون على الله الكذب وهم يعلمون.(سورة آل عمران-78)
و قال الله تعالى:قد كانت لكم أسوة حسنة في ابراهيم والذين معه إذ قالوا لقومهم إنا براء منكم ومما يعبدون من دون الله كفرنا بكم زبدا بيننا وبينكم العداوة والبغضاء أبدا حتى تؤمنوا بالله وحده .(سورة ممتحنة-4)
و قال الله تعالى: قاتلوا الذين لا يؤمنون بالله ولا باليم الآخر ولايحرمون ما خرم الله ورسوله ولا يدينون دين الحق من الذين أوتوا الكتاب حتى يعطوا الجزية عن يدوهم صغرون.(سورة التوبة-29)
و قال الله تعالى: ولقد ذرأنا لجهنم كثيرمن الجن والإنس لهم قلوب لا يفقهون بها ولهم أعين لا يبصرون بها ولهم آذان لا يسمعون بها أولئك كالأنعام بل هم أضل أولئك هم الغفلون.(سورة الأعراف-179)
و قال الله تعالى: إن الشر الدواب عند الله الذين كفروا فهم لا يؤمنون.(سورة الأنفال-55)
و أخرج الإمام مسلم رح في”صحيحه”(1/82‘برقم 153) عن أبي هريرة رض عن رسول الله ﷺ أنه قال والذي نفسي محمد ﷺ بيده لا يسمع بي أحد من هذه الأمة يهودي ولا نصراني ثم يموت ولم يؤمن بالذي أرسلت به إلا كان من أصحاب النار
و في” مجمع الفتاوى”( 28/261) ومعلوم بالإضطرار من دين المسلمين وباتفاق جميع المسلمين أن نت سوغ اتباع غير دين الإسلام أو اتباع شريعة غير شريعة محمد ﷺ فهو كافر
وفي”فتاوى دار العلوم ديوبند”(16/400) الجواب:مشرکین سے دنیاوی معاملات میں بہ ضرورت ملنا جلنا روا ہے اور محبت و دوستی و دسمنان اسلام سے روا نہیں ہے
وفي”فتاوى محموديه”(29/346) الجواب:ان کےاجتماع  کو اپنی شرکت سے رونق دینا درست نہیں
وفي”كتاب النوازل”(16/351) الجواب: تعلق کی بنیاد پر بیماری کافر کی مزاج پرسی کافر کیلئے گھر والوں کو دلاسہ دینے کیلئے ازراہ تعلق اس کے گھر جانا درست ہے، لیکن ارتھی میں شرکت کرنا یا ان کی کسی مذہبی تقریب شرکت ہونا درست نہیں ہے.انتهى ، والله أعلم بالصواب

ফতোয়া প্রদান করেছেনঃ
মুফতি আব্দুল আলিম সাহেব (দা.বা.)
নায়েবে মুফতী-ফতোয়া বিভাগ
আল জামিয়া আল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা, নওগাঁ ।


শেয়ার করুন !!
Scroll to Top