আল জামি'আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা

এক রাকাত বিতর পড়া প্রসঙ্গে

শেয়ার করুন !!

বরাবর,
ফতোয়া বিভাগ, আল-জামিয়াতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়া,পোরশা,নওগাঁ।
বিষয়: এক রাকাত বিতর পড়া প্রসঙ্গে।
প্রশ্ন: আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ, মাননীয় মুফতী সাহেব হুজুরের কাছে আমার আবেদন এই যে, এক রাকাত বিতর নামায পড়া যাবে কি না এবং যদি পড়া যায় তাহলে কি কি কারণে পড়া যাবে সহীহ হাদীসের আলোকে জানিয়ে বাধিত করবেন।
নিবেদক
মুহাম্মাদ ফাহাদ হাসান
بسم الله الرحمن الرحيم،حامدا و مصليا و مسلما-
সমাধান: না, বিতর নামায এক রাকাত পড়া যাবে না। তিন রাকাতই পড়তে হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত তাহাজ্জুদের পর বিতর নামায পড়তেন। এটি ছিল নবীজীর সাধারণ অভ্যাস। বয়স ও পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন অবস্থার কারণে তাহাজ্জুদের রাকাত-সংখ্যা কম-বেশি হত। কিন্তু বিতর সর্বদা তিন রাকাতই পড়তেন। এক রাকাত বিতর পড়া নবীজী থেকে প্রমাণিত নয়। এক রাকাতের বিষয়টি কেবল হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রাঃ) এর একটি বর্ণনায় রয়েছে,“যে চায় এক রাকাতও বিতর পড়তে পারবে”। (সুনানে আবু দাউদ ১/২০১,হাদীস নং-১৪২২)। অধিকাংশ ইমামের মতে এটি “মওকুফ” তথা সাহাবীর কথা। (আত-তালখীসুল হাবীর ২/৩৭,আরো দেখুন আস-সুনানুল কুবরা বাইহাকী,৩/২৪)। তাছাড়া এ হাদীসের একটি বর্ণনায় রয়েছে “যার ইচ্ছা এক রাকাত পড়ে নেবে, আর যার ইচ্ছা ইশারা করে নেবে”। (সুনানে নাসায়ী,হাদীস নং-১৭১৩)।
তাহলে তো এক রাকাতও না পড়ে কেবল ইশারা করে নিলে বিতর আদায় হয়ে যাবে। এ কারণে এ বর্ণনাটি মুতাশাবিহ (রহস্যবৃত) এবং আমলযোগ্য নয়। এছাড়াও যেসকল বর্ণনা দ্বারা এক রাকাত বিতরের বিষয়টি প্রমাণ করা হয়,সেগুলো বিভিন্ন অর্থ ও ব্যাখ্যার সম্ভবনা রাখে। মূলত সেসকল হাদীসে শুধুই এক রাকাতকে পৃথক পড়তে বলা হয়নি,বরং পূর্ববতী দুই রাকাতের সাথে মিলিয়ে তিন রাকাত বিতরের কথা বলা হয়েছে। (ফাতহুল বারী,২/৫৯৩)।
তদ্রূপ যে সব রেওয়ায়েতে পাঁচ,সাত বা নয় রাকাতের কথা এসেছে তাতেও বিতর নামায মূলত তিন রাকাতই কিন্তু বর্ণনাকারী আগে-পরের তাহাজ্জুদ বা নফল নামায মিলিয়ে সমষ্টিকে ‘বিতর’ শব্দে ব্যক্ত করেছেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর নামায তিন রাকাতই পড়তেন। নিম্নের হাদীসসমূহ থেকে বিষয়টি সুপ্রমাণিত হয়:
আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত,তিনি হযরত আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করেন যে,রমযানে নবীজীর নামায কেমন হত? তিনি উত্তরে বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে এবং রমযানের বাইরে এগার রাকাতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন,যার সৌন্দর্য ও র্দীঘতা সর্ম্পকে জিজ্ঞাসা করো না; এরপর আরও চার রাকাত পড়তেন,যার সৌন্দর্য ও র্দীঘতা তো বলাই বাহুল্য! এরপর তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন। (সহীহ বুখারী ১/১৫৪,হাদীস নং-১১৩৬ ; সহীহ মুসলিম ১/২৫৪,হাদীস নং-৭৩৮)।
অপর এক হাদীসে এসেছে,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর নামায তিন রাকাত পড়তেন এবং শুধু শেষ রাকাতে সালাম ফেরাতেন। আমীরুল মুমিনীন-ওমর (রাঃ) এই নিয়মে বিতর পড়তেন এবং তারই সুত্রে আহলে মদীনা এই নিয়ম গ্রহণ করেছেন। (আল মুস্তাদরাক ১/৪১৪,হাদীস-১১৬৮)।
এ বর্ণনাগুলো ছাড়াও তিন রাকাত বিতরের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম,সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীনদের থেকে অনেক বর্ণনা এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সাহাবায়ে কেরাম পর্যন্ত এবং সাহাবায়ে কেরাম থেকে তাবেয়ীন পর্যন্ত বিতর নামায তিন রাকাতই ছিল। দু‘একটি ব্যতিক্রম ছাড়া সাধারণভাবে তিন রাকাতই পড়া হত এবং তিন রাকাতের শিক্ষাই দেওয়া হত। একেই হাসান বসরী (রহ.) মুসলমানদের ইজমা (ঐক্যমত) বলে আখ্যায়িত করেছেন। (ইবনে আবী শাইবা,২/২৯৪)। তাই বিতর নামায তিন রাকাত হওয়াই যথার্থ। এর বিপরীতে অন্য মতগুলো দুর্বল ও বিচ্ছিন্ন।
এ ছাড়া তিন রাকাত বিতরের ব্যাপারে যেহেতু কোন আলেমের মতভেদ নেই। কিন্তু এক রাকাতের ব্যাপারে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে তাই যৌক্তিক বিচারেও বিতর তিন রাকাতই পড়া উচিত। এক রাকাত বিতর থেকে বিরত থাকা উচিত। যাতে আমাদের আমলগুলো সংশয়মুক্ত হয় এবং মতভেদের উর্ধ্বে থাকে।

 الاحالة الشرعية على المطلوب
أخرج الإمام البخاري رح في”صحيحه”(1/154، برقم-1136) عن أبي سلمة أنه سأل عائشة رض كيف كانت صلاة رسول الله ﷺ في رمضان ؟ فقالت ما كان رسول الله ﷺ في رمضان ولا في غيره على إحدى عشر ركعة يصلى أربعا فلا تسأل عن حسنهن وطولهن ثم يصلي أربعا فلا تسأل عن حسنهن وطولهن ثم يصلي ثلاثا
أخرج الإمام الحاكم رح في”صحيحه”(1/414، برقم-1168) عن عائشة رض قالت: كان رسول الله ﷺ يوتر بثلاث،لا يسلم إلا في آخرهن. وهذا وتر أمير المؤمنين عمر بن الخطاب رض،وعنه أخذه أهل المدينة
وفي”الهداية”(1/144) الوتر ثلاث ركعات لا يفصل بينهم بسلام،لما رويت عائشة رض “أن النبي ﷺ كان يوتر بثلاث” وحكى الحسن رح إجماع المسلمين على الثلاث
وفي”بدائع الصنائع”(2/226) قال أصحابنا : الوتر ثلاث ركعات بتسليمة واحدة في الأوقات كلها
وفي”فتاوى قاسمية”(8/111) الجواب وباللہ التوفیق: وتر نماز جمہور امت کے نزدیک تین رکعتیں ہیں،ان کے درمیان صرف اتنا اختلاف ہے کہ تین رکعت ایک سلام کے ساتھ ہے یا دو سلام کے ساتھ؟دونوں طرف صحیح حدیثیں موجود ہیں-اور ایک رکعت وتر کی نماز غیر مقلدین کے یہاں ہے-جمہور امت نے ایک رکعت وتر کی نماز پڑھنے والوں کو کوئ اہمیت نہیں دی ہے،حنفیہ کے نزدیک تین رکعت وتر پڑھنا واجب ہے
** وراجع أيضا في”البحر الرائق”(2/68)، انتهى والله أعلم بالصواب

ফতোয়া প্রদান করেছেনঃ
মুফতি আব্দুল আলিম সাহেব (দা.বা.)
নায়েবে মুফতী-ফতোয়া বিভাগ
আল জামিয়া আল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা, নওগাঁ ।


শেয়ার করুন !!
Scroll to Top