সাহাবায়ে কেরামের খাঁটি ঈমান ও তাকওয়ার স্বপক্ষে কুরআনের সাক্ষ্যঃ সাহাবায়ে কেরামের প্রত্যেক সদস্যই ছিলেন খাঁটি ঈমান ও তাকওয়ার অধিকারী। তাঁরা ছিলেন উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ জামাত। তাঁদের ঈমান, তাকওয়া ও পরহেযগারী ছিল সকল প্রকার কলুষতা ও কপটতামুক্ত। সাহাবাপরবর্তী কারো এই অধিকার নেই যে তাঁদের কারো ঈমান, তাকওয়া ও পরহেযগারী নিয়ে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করবে বা সমালোচনা করবে। স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঈমান ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে যাদের দৃঢ়তা ও সততার সাক্ষ্য দিয়েছেন তাঁদের ব্যাপারে আর কারো এই অধিকার থাকতে পারে? নি¤েœ উল্লেখিত আয়াতগুলো লক্ষ্য করি।
সূরা আনফালের ৭৪ নং আয়াত আগে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে মুহাজির ও আনসারগণের দৃঢ় ঈমান ও তাকওয়ার স্বপক্ষে সাক্ষ্য দিয়ে বলা হয়েছে যে, তাঁরা ছিলেন প্রকৃত মুমিন। আয়াতটির অনুবাদ আবার দেখে নেই।
“যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে আর যারা (তাদেরকে) আশ্রয় দিয়েছে ও (তাদের) সাহায্য করেছে, তারাই প্রকৃত মুমিন।”
আরো ইরশাদ হয়েছে,
وَاعْلَمُوا أَنَّ فِيكُمْ رَسُولَ اللَّهِ ۚ لَوْ يُطِيعُكُمْ فِي كَثِيرٍ مِنَ الْأَمْرِ لَعَنِتُّمْ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمُ الْإِيمَانَ وَزَيَّنَهُ فِي قُلُوبِكُمْ وَكَرَّهَ إِلَيْكُمُ الْكُفْرَ وَالْفُسُوقَ وَالْعِصْيَانَ ۚ أُولَٰئِكَ هُمُ الرَّاشِدُونَ
ভালোভাবে জেনে রাখ যে, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল আছেন আর বহু বিষয়ে সে যদি তোমাদের কথা মেনে নেয়, তবে তোমরা নিজেরাই সঙ্কটে পড়ে যাবে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ঈমানের ভালোবাসা সঞ্চার করেছেন এবং তাকে তোমাদের অন্তরে করে দিয়েছেন আকর্ষণীয়। আর তোমাদের কাছে কুফর, গুনাহ ও অবাধ্যতাকে ঘৃণ্য বানিয়ে দিয়েছেন। এরূপ লোকেরাই সঠিক পথপ্রাপ্ত হয়েছে। -সূরা হুজুরাত: ৭
আয়াতটি সাহাবায়ে কেরামের শানে নাযিল হয়েছে।। এখানে তাঁদের বিশেষ কিছু ফযীলতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে ঈমান তাঁদের কাছে অনেক প্রিয় এবং বড় আকর্ষণীয় করে তা তাঁদের অন্তরে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। কুফরসহ ছোট-বড় সকল গুনাহ তাঁদের কাছে অনেক অপছন্দীয়। সর্বোপরি তাঁরা হলেন সঠিক পথের পথিক। আর এসব কিছুই তাঁরা লাভ করেছেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অনুগ্রহে, তাঁর দয়ায়। তিনি নিজেই তাঁদেরকে এ সকল গুণে ভূষিত করেছেন। -তাফসীরে হেদায়েতুল কুরআন, ৭/৪৯৯।
অন্যত্রে ইরশাদ হয়েছে,
وَلَمَّا رَأَى الْمُؤْمِنُونَ الْأَحْزَابَ قَالُوا هَٰذَا مَا وَعَدَنَا اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَصَدَقَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ ۚ وَمَا زَادَهُمْ إِلَّا إِيمَانًا وَتَسْلِيمًا. مِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ ۖ فَمِنْهُمْ مَنْ قَضَىٰ نَحْبَهُ وَمِنْهُمْ مَنْ يَنْتَظِرُ ۖ وَمَا بَدَّلُوا تَبْدِيلًا.
মুমিনগণ যখন (শত্রুদের) সম্মিলিত বাহিনীকে দেখেছিল, তখন তারা বলেছিল, এটাই সেই বিষয় যার প্রতিশ্রুতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদেরকে দিয়েছিলেন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সত্যই বলেছিলেন। আর এ ঘটনা তাদের ঈমান ও আনুগত্যের চেতনাকে আরও বৃদ্ধি করে দিয়েছিল। এই ঈমানদারদের মধ্যেই এমন লোকও আছে, যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতিকে সত্যে পরিণত করেছে এবং তাদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা তাদের নজরানা আদায় করেছে এবং আছে এমন কিছু লোক, যারা এখনও প্রতীক্ষায় আছে আর তারা (তাদের ইচ্ছার ভেতর) কিছুমাত্র পরিবর্তন ঘটায়নি। -সূরা আহযাব: ২২-২৩
আয়াতে আহযাব যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যুদ্ধে মুসলমানরা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলো। মুনাফিকরা তো বিভিন্ন টালবাহানায় যুদ্ধ থেকে পিছুটান দেয়। কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনুগত্যে দ্বীনের নুসরতে অটল ছিলেন। বৈরী আবহাওয়া, চরম খাদ্য সংকট, সামান স্বল্পতা, ক্লান্তি এসব কিছুই উপেক্ষা করে তাঁরা যুদ্ধের ময়দানে অবিচল ছিলেন। যুদ্ধে কাফেরদের সম্মিলিত বাহিনী দেখে বিচলিত না হয়ে তাঁদের ঈমানী চেতনা আরো জাগ্রত হয়ে ওঠে। তাঁরা বিশ্বাস করতে থাকেন যে এটাই তো সেই পরীক্ষার মুহূর্ত যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা ঈমানের পরীক্ষা নিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার কথা তো আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল আগেই আমাদেরকে বলেছেন। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই তো আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ হতে প্রতিশ্রুত সেই জান্নাতের দেখা পাব।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সাহাবায়ে কেরামের ঈমানোদ্দীপক সেই হালত এবং তাঁদের সেই ঈমানী দৃঢ়তা ও কামিয়াবির কথাই উল্লেখিত আয়াতে বর্ণনা করেছেন। -তাফসীরে তাবারী ১৯/৬০, তাফসীরে ওসমানী ৫৫৯
আরো ইরশাদ হয়েছে,
لِلْفُقَرَاءِ الْمُهَاجِرِينَ الَّذِينَ أُخْرِجُوا مِنْ دِيَارِهِمْ وَأَمْوَالِهِمْ يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا وَيَنْصُرُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ ۚ أُولَٰئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ. وَالَّذِينَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْإِيمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ يُحِبُّونَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمْ حَاجَةً مِمَّا أُوتُوا وَيُؤْثِرُونَ عَلَىٰ أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ ۚ وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
(তাছাড়া ‘ফায়’-এর সম্পদ) সেই গরীব মুহাজিরদের প্রাপ্য, যাদেরকে তাদের ঘর-বাড়ি ও অর্থ-সম্পদ থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর সন্তুষ্টি সন্ধান করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাহায্য করে। তারাই সত্যাশ্রয়ী।
(এবং “ফায়”-এর সম্পদ) তাদেরও প্রাপ্য, যারা পূর্ব থেকেই এ নগরে (অর্থাৎ মদীনায়) ঈমানের সাথে অবস্থানরত আছে। যে-কেউ হিজরত করে তাদের কাছে আসে, তাদেরকে তারা ভালোবাসে এবং যা-কিছু তাদেরকে (অর্থাৎ মুহাজিরদেরকে) দেওয়া হয়, তার জন্য নিজেদের অন্তরে কোন চাহিদা বোধ করে না এবং তাদেরকে তারা নিজেদের উপর প্রাধান্য দেয়, যদিও তাদের অভাব-অনটন থাকে। যারা স্বভাবগত কার্পণ্য হতে মুক্তি লাভ করে, তারাই তো সফলকাম। -সূরা হাশর: ৮,৯।
উল্লেখিত আয়াত দুটির মূল আলোচ্য বিষয় হলো ‘ফায়’ এর হকদারদের বর্ণনা। তাঁদের মধ্যে মুহাজির ও আনসারগণও শামিল। এখানেও আল্লাহ তাআলা তাঁদের খাঁটি ঈমান, তাকওয়া ও ইখলাসের সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাঁদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। মুহাজিরদের ব্যাপারে বলেছেন যে তাঁরা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অনুগ্রহ লাভের আশায় এবং দ্বীনের নুসরতের জন্যই আপন ঘরবাড়ি ছেড়ে মদীনায় হিজরত করেছেন। তাঁদের দুনিয়ার কোন স্বার্থ ছিলনা। সর্বোপরি তাঁরা ছিলেন সাদেকীন। অর্থাৎ ঈমান-আমলে এবং আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূরণে তাঁরা পূর্ণ সততার পরিচয় দিয়েছেন। আর আনসার সাহাবীগণের প্রশংসা করে বলা হয়েছে যে তাঁরা মুহাজিরগণ আসার পূর্বেই ঈমানের রজ্জু আঁকড়ে ধরেছিলেন। মুহাজিরগণ আসার পর তাঁদেরকে সাদরে গ্রহণ করে নেন। এমনকি কঠিন প্রয়োজনের মুহূর্তেও আপন মুহাজির ভাইয়ের প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিতেন। মুহাজিরদের প্রাপ্ত সম্পদের ক্ষেত্রে তাঁদের কোন আগ্রহ থাকতো না। আর যারা এভাবে অন্তরের কার্পণ্যতা থেকে মুক্ত থাকে তাঁরাই তো সফলকাম। -তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ৮/৩৭২,৩৭৩,৩৭৪,৩৭৯
সাহাবায়ে কেরামের খাঁটি ঈমান ও তাকওয়ার স্বপক্ষে কুরআনের সাক্ষ্যঃ সাহাবায়ে কেরামের প্রত্যেক সদস্যই ছিলেন খাঁটি ঈমান ও তাকওয়ার অধিকারী। তাঁরা ছিলেন উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ জামাত। তাঁদের ঈমান, তাকওয়া ও পরহেযগারী ছিল সকল প্রকার কলুষতা ও কপটতামুক্ত। সাহাবাপরবর্তী কারো এই অধিকার নেই যে তাঁদের কারো ঈমান, তাকওয়া ও পরহেযগারী নিয়ে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করবে বা সমালোচনা করবে। স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঈমান ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে যাদের দৃঢ়তা ও সততার সাক্ষ্য দিয়েছেন তাঁদের ব্যাপারে আর কারো এই অধিকার থাকতে পারে? নি¤েœ উল্লেখিত আয়াতগুলো লক্ষ্য করি।
সূরা আনফালের ৭৪ নং আয়াত আগে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে মুহাজির ও আনসারগণের দৃঢ় ঈমান ও তাকওয়ার স্বপক্ষে সাক্ষ্য দিয়ে বলা হয়েছে যে, তাঁরা ছিলেন প্রকৃত মুমিন। আয়াতটির অনুবাদ আবার দেখে নেই।
“যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে আর যারা (তাদেরকে) আশ্রয় দিয়েছে ও (তাদের) সাহায্য করেছে, তারাই প্রকৃত মুমিন।”
আরো ইরশাদ হয়েছে,
وَاعْلَمُوا أَنَّ فِيكُمْ رَسُولَ اللَّهِ ۚ لَوْ يُطِيعُكُمْ فِي كَثِيرٍ مِنَ الْأَمْرِ لَعَنِتُّمْ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمُ الْإِيمَانَ وَزَيَّنَهُ فِي قُلُوبِكُمْ وَكَرَّهَ إِلَيْكُمُ الْكُفْرَ وَالْفُسُوقَ وَالْعِصْيَانَ ۚ أُولَٰئِكَ هُمُ الرَّاشِدُونَ
ভালোভাবে জেনে রাখ যে, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল আছেন আর বহু বিষয়ে সে যদি তোমাদের কথা মেনে নেয়, তবে তোমরা নিজেরাই সঙ্কটে পড়ে যাবে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ঈমানের ভালোবাসা সঞ্চার করেছেন এবং তাকে তোমাদের অন্তরে করে দিয়েছেন আকর্ষণীয়। আর তোমাদের কাছে কুফর, গুনাহ ও অবাধ্যতাকে ঘৃণ্য বানিয়ে দিয়েছেন। এরূপ লোকেরাই সঠিক পথপ্রাপ্ত হয়েছে। -সূরা হুজুরাত: ৭
আয়াতটি সাহাবায়ে কেরামের শানে নাযিল হয়েছে।। এখানে তাঁদের বিশেষ কিছু ফযীলতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে ঈমান তাঁদের কাছে অনেক প্রিয় এবং বড় আকর্ষণীয় করে তা তাঁদের অন্তরে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। কুফরসহ ছোট-বড় সকল গুনাহ তাঁদের কাছে অনেক অপছন্দীয়। সর্বোপরি তাঁরা হলেন সঠিক পথের পথিক। আর এসব কিছুই তাঁরা লাভ করেছেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অনুগ্রহে, তাঁর দয়ায়। তিনি নিজেই তাঁদেরকে এ সকল গুণে ভূষিত করেছেন। -তাফসীরে হেদায়েতুল কুরআন, ৭/৪৯৯।
অন্যত্রে ইরশাদ হয়েছে,
وَلَمَّا رَأَى الْمُؤْمِنُونَ الْأَحْزَابَ قَالُوا هَٰذَا مَا وَعَدَنَا اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَصَدَقَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ ۚ وَمَا زَادَهُمْ إِلَّا إِيمَانًا وَتَسْلِيمًا. مِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ ۖ فَمِنْهُمْ مَنْ قَضَىٰ نَحْبَهُ وَمِنْهُمْ مَنْ يَنْتَظِرُ ۖ وَمَا بَدَّلُوا تَبْدِيلًا.
মুমিনগণ যখন (শত্রুদের) সম্মিলিত বাহিনীকে দেখেছিল, তখন তারা বলেছিল, এটাই সেই বিষয় যার প্রতিশ্রুতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদেরকে দিয়েছিলেন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সত্যই বলেছিলেন। আর এ ঘটনা তাদের ঈমান ও আনুগত্যের চেতনাকে আরও বৃদ্ধি করে দিয়েছিল। এই ঈমানদারদের মধ্যেই এমন লোকও আছে, যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতিকে সত্যে পরিণত করেছে এবং তাদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা তাদের নজরানা আদায় করেছে এবং আছে এমন কিছু লোক, যারা এখনও প্রতীক্ষায় আছে আর তারা (তাদের ইচ্ছার ভেতর) কিছুমাত্র পরিবর্তন ঘটায়নি। -সূরা আহযাব: ২২-২৩
আয়াতে আহযাব যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যুদ্ধে মুসলমানরা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলো। মুনাফিকরা তো বিভিন্ন টালবাহানায় যুদ্ধ থেকে পিছুটান দেয়। কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনুগত্যে দ্বীনের নুসরতে অটল ছিলেন। বৈরী আবহাওয়া, চরম খাদ্য সংকট, সামান স্বল্পতা, ক্লান্তি এসব কিছুই উপেক্ষা করে তাঁরা যুদ্ধের ময়দানে অবিচল ছিলেন। যুদ্ধে কাফেরদের সম্মিলিত বাহিনী দেখে বিচলিত না হয়ে তাঁদের ঈমানী চেতনা আরো জাগ্রত হয়ে ওঠে। তাঁরা বিশ্বাস করতে থাকেন যে এটাই তো সেই পরীক্ষার মুহূর্ত যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা ঈমানের পরীক্ষা নিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার কথা তো আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল আগেই আমাদেরকে বলেছেন। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই তো আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ হতে প্রতিশ্রুত সেই জান্নাতের দেখা পাব।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সাহাবায়ে কেরামের ঈমানোদ্দীপক সেই হালত এবং তাঁদের সেই ঈমানী দৃঢ়তা ও কামিয়াবির কথাই উল্লেখিত আয়াতে বর্ণনা করেছেন। -তাফসীরে তাবারী ১৯/৬০, তাফসীরে ওসমানী ৫৫৯
আরো ইরশাদ হয়েছে,
لِلْفُقَرَاءِ الْمُهَاجِرِينَ الَّذِينَ أُخْرِجُوا مِنْ دِيَارِهِمْ وَأَمْوَالِهِمْ يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا وَيَنْصُرُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ ۚ أُولَٰئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ. وَالَّذِينَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْإِيمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ يُحِبُّونَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمْ حَاجَةً مِمَّا أُوتُوا وَيُؤْثِرُونَ عَلَىٰ أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ ۚ وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
(তাছাড়া ‘ফায়’-এর সম্পদ) সেই গরীব মুহাজিরদের প্রাপ্য, যাদেরকে তাদের ঘর-বাড়ি ও অর্থ-সম্পদ থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর সন্তুষ্টি সন্ধান করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাহায্য করে। তারাই সত্যাশ্রয়ী।
(এবং “ফায়”-এর সম্পদ) তাদেরও প্রাপ্য, যারা পূর্ব থেকেই এ নগরে (অর্থাৎ মদীনায়) ঈমানের সাথে অবস্থানরত আছে। যে-কেউ হিজরত করে তাদের কাছে আসে, তাদেরকে তারা ভালোবাসে এবং যা-কিছু তাদেরকে (অর্থাৎ মুহাজিরদেরকে) দেওয়া হয়, তার জন্য নিজেদের অন্তরে কোন চাহিদা বোধ করে না এবং তাদেরকে তারা নিজেদের উপর প্রাধান্য দেয়, যদিও তাদের অভাব-অনটন থাকে। যারা স্বভাবগত কার্পণ্য হতে মুক্তি লাভ করে, তারাই তো সফলকাম। -সূরা হাশর: ৮,৯।
উল্লেখিত আয়াত দুটির মূল আলোচ্য বিষয় হলো ‘ফায়’ এর হকদারদের বর্ণনা। তাঁদের মধ্যে মুহাজির ও আনসারগণও শামিল। এখানেও আল্লাহ তাআলা তাঁদের খাঁটি ঈমান, তাকওয়া ও ইখলাসের সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাঁদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। মুহাজিরদের ব্যাপারে বলেছেন যে তাঁরা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অনুগ্রহ লাভের আশায় এবং দ্বীনের নুসরতের জন্যই আপন ঘরবাড়ি ছেড়ে মদীনায় হিজরত করেছেন। তাঁদের দুনিয়ার কোন স্বার্থ ছিলনা। সর্বোপরি তাঁরা ছিলেন সাদেকীন। অর্থাৎ ঈমান-আমলে এবং আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূরণে তাঁরা পূর্ণ সততার পরিচয় দিয়েছেন। আর আনসার সাহাবীগণের প্রশংসা করে বলা হয়েছে যে তাঁরা মুহাজিরগণ আসার পূর্বেই ঈমানের রজ্জু আঁকড়ে ধরেছিলেন। মুহাজিরগণ আসার পর তাঁদেরকে সাদরে গ্রহণ করে নেন। এমনকি কঠিন প্রয়োজনের মুহূর্তেও আপন মুহাজির ভাইয়ের প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিতেন। মুহাজিরদের প্রাপ্ত সম্পদের ক্ষেত্রে তাঁদের কোন আগ্রহ থাকতো না। আর যারা এভাবে অন্তরের কার্পণ্যতা থেকে মুক্ত থাকে তাঁরাই তো সফলকাম। -তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ৮/৩৭২,৩৭৩,৩৭৪,৩৭৯
চলমান