আল জামি'আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা

গর্ভপাত করা প্রসঙ্গে।

( ফতোয়া ও মাস‘আলা-মাসায়েল : পোস্ট কোড: 18210 )

বরাবর,
ফতোয়া বিভাগ, আল-জামি‘আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়া,পোরশা,নওগাঁ।
বিষয়: গর্ভপাত করা প্রসঙ্গে।
প্রশ্ন: আমার নাম উম্মে সায়রা রিয়াসা, বয়স ২৫ বছর। আমার বিয়ে হয়েছে ১ বছর ৮ মাস হয়। আমি একজন গৃহিণী। আমার একটি ৪.৫ মাস বয়সী ছেলে আছে। আমার স্বামীর নাম মোঃ তানজিল হাসান। তার বয়স ২৯ বছর। সে একটি আন্তর্জাতিক এনজিওতে কাজ করতো প্রায় দেড় বছরের মতো। গত মার্চ মাসে তার চাকরি চলে যায়। চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করছে তবে এখনো ইতিবাচক কিছু হয়নি।
আমি একটি বিষয় বিগত অনেকদিন ধরে লক্ষ্য করছি যে আমার পিরিয়ড (মাসিক) হচ্ছে না। গত ১৫/২০ দিন আগে একবার প্রেগনেন্সি টেস্ট করেছিলাম, তখন নেগেটিভ রেজাল্ট আসছে। এর মধ্যে পিরিয়ড না হওয়ায় আজকে আবার টেস্ট করেছি। কিন্তু আজকে পজেটিভ রেজাল্ট আসছে, মানে আমি সদ্য কন্সিভ করেছি।
কিন্তু এই মুহুর্তে আমি বাচ্চা জন্ম দেয়ার জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে একেবারেই প্রস্তুত না। এর জন্য কয়েকটি বিশেষ কারণ রয়েছে।
১. পূর্বের বাচ্চাটি সিজার (অপারেশন) এর মাধ্যমে হয়েছে এবং এই সিজারের ধকল আমার শরীর এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এই মুহুর্তে আরেকটি বাচ্চা হলে আরো বেশি অসুস্থ্ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। অর্থাৎ দুইটি বাচ্চা লালনপালন করার মতো শারীরিক সুস্থতা এই মুহুর্তে আমার নেই। তাছাড়া আমি খুব অল্পতেই অনেক বেশি দুশ্চিন্তা করি সবকিছু নিয়ে। দুইটি বাচ্চা লালন পালন করার মতো মানসিক সুস্থতা আমার এই মুহুর্তে নেই বললেই চলে।
২. আমার বর্তমান বাচ্চার বয়স খুবই কম, মাত্র ৪.৫ মাস। তাকে যত্ন নিতেই আমার হিমশিম খেতে হয়। তার জন্য প্রতিদিন রাত জাগতে হয়। সে ইদানীং খুবই বিরক্ত করে। এর মধ্যে আরেকটি বাচ্চা হলে দুইটি ছোট বাচ্চার যত্ন নেয়া আমার জন্য অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। তাছাড়া আরেকটি বাচ্চা হলে আমার বর্তমান বাচ্চার যত্নও আমি ঠিকমতো নিতে পারবো বলে মনে হয় না।
৩. আমার স্বামীর বর্তমানে কোন চাকরি নেই। এই মুহুর্তে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আল্লাহ যদি চায় তো ভবিষ্যতে হবে, কিন্তু কবে হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। এই মুহুর্তে দুইটি বাচ্চা লালনপালন করার জন্য পরিবারে আর্থিকভাবে স্বচ্ছলতা নেই।
৪. আমি আমার পরিবারের বড় মেয়ে। আমার বাবা, মা এবং ছোট দুইটি বোন রয়েছে। আমার বাবার কোন উপার্জন নেই অনেক বছর ধরেই। আমার স্বামীর চাকরি থাকা অবস্থায় আমি যতটুকু সম্ভব আমার পরিবারকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এখন আমার স্বামীর নিজেরই চাকরি নেই। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স কমপ্লিট করেছি। আমি চাকরি করে আমার পরিবারকে সাহায্য করতে চাই। এই মুহুর্তে আমি চাকরির পরিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সামনে আমার কতগুলো চাকরির পরিক্ষা আছে। আমার ৪.৫ মাসের বাচ্চা নিয়ে আমি ঠিকমতো প্রস্তুতি নেয়ার সময় এবং শক্তি  পাই না। তার উপর এখন আরো একটি বাচ্চা হলে কোনভাবেই আমার প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব হবে না। আমার পরিবারের পিছুটান না থাকলে কোন সমস্যা হতো না সেই ক্ষেত্রে। কিন্তু আমাকে যেহেতু আমার পরিবারের হাল ধরতে হবে সেহেতু এই মুহুর্তে আমার পড়াশুনা করা খুবই প্রয়োজন। আর একটি বাচ্চা হলে তা একেবারেই অসম্ভব।
৫. আমার নিজের এবং আমার স্বামীর পরিবার থেকে কোন প্রকার আর্থিক সাহায্য পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। উপরন্তু দুই পরিবারকেই আমাদের দেখাশোনা করতে হয় আর্থিকভাবে।
৬. আমার স্বামীর যদি চাকরি হয় তাহলে ঢাকার বাইরে হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কারন সে এনজিও সেক্টরে চাকরি করে আর এই চাকরি সবই ঢাকার বাইরে পোস্টিং হয়। ঢাকার বাইরে আমি যদি চলে যাই স্বামীর সাথে তাহলে ছোট দুইটি বাচ্চা লালনপালন করা আমার দ্বারা অনেক কষ্টসাধ্য হবে, এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে অসম্ভব।
সবকিছু বিবেচনায় কি আমি গর্ভপাত করতে পারবো? ইসলাম যদিও গর্ভপাত নিয়ে খুবই কঠোর অবস্থান ধারণ করে তথাপি আমার শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক এবং আমার ৪.৫ মাস বয়সী সন্তানের কথা চিন্তা করে গর্ভপাত নিয়ে আপনার/আপনাদের ফতোয়া জানতে চাচ্ছি।
নিবেদক
উম্মে সায়রা রিয়াসা
بسم الله الرحمن الرحيم،حامدا ومصليا ومسلما-
সমাধান: আর্থিক সংকটের কারণে গর্ভপাত করা জায়েয নেই। আর্থিক সংকট ছাড়া আরো যে সকল  বিষয় উল্লেখ করেছেন যেমন পূর্বের বাচ্চার বয়স কম হওয়া, সিজারের কারণে শারীরিক দূর্বলতা ইত্যাদি কারণে গর্ভপাত করার অবকাশ রয়েছে। এক্ষেত্রে গর্ভপাত করতে চাইলে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যাতে ভ্রুনের বয়স বেশি না হয়ে যায়। এর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হল (৫২) বায়ান্ন দিনের মধ্যে গর্ভপাত ঘটানো। তবে অপারগতার কারণে (১২০) একশত বিশ দিন পর্যন্ত গর্ভপাত ঘটানোর সুযোগ রয়েছে। এর বেশি হলে জায়েয নেই।

الإحالة الشرعية على المطلوب-
قال الله تعالى في سورة “الأنعام” (اية 151) ولا تقتلوا أولادكم من إملاق نحن نرزقكم واياهم
وقال الله تعالى في سورة “بنى اسرائيل” (اية 31) ولا تقتلوا أولادكم خشية املاق نحن نرزقهم واياكم إن قتلهم كان خطأ كبيرا.
وفي “در المختار” (6/429) ويكره أن تسقى لإسقاط حملها وجاز لعذر حيث لا يتصور
وفي “رد المحتار” (6/429) قوله ويكره الخ أي مطلقا قبل التصور وبعده على مااختاره في الخانية كما قدمناه قبيل الاستبراء وقال: إلا انها لا تأثم إثم القتل. قوله: (وجاز لعذر) كالمرضعة إذا ظهر بها الحبل وانقطع لبنها وليس لأبي الصبى ما يستأجربه الظئر ويخاف هلاك الولد قالو: يباح لها أن تعالج فى استنزال الدم ما دام الحمل مضغة او علقة ولم يخلق له عضو وقدروا تلك المدة بمائة وعشرين يوما وجاز لأنه ليس بادمي وفيه صيانة الادمي
وفي “كتاب النوزل” (16/266) رزق کی تنگی کے خطرہ سے اسقاط حمل کسی بھی حال میں جائز نہیں ہے بلکہ اس مقصد سے اسقاط کرانے میں قران کریم میں تنگ دستی کے اندیشہ سے اولاد کوقتل کرنے سے سختی سے منع کیا گیا ہے، اور اگر ماں کی سخت کمزوری یادودھ پینے بچے کی پرورش میں خلل پڑنے کا خطرہ ہو تو 120 دن کے اندر اندر مجبوری میں اس کی گنجائش ہے اس مدت کے بعد اجازت نہیں ہے…انتهى، والله أعلم بالصواب

 

ফতোয়া প্রদান করেছেনঃ
মুফতি আব্দুল আলিম সাহেব (দা.বা.)
নায়েবে মুফতী-ফতোয়া বিভাগ
আল জামিয়া আল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা, নওগাঁ ।

Fatwa ID: 18210
Scroll to Top