আল জামি'আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা

শর্তযুক্ত তালাক প্রসঙ্গে।

বরাবর,
ফতোয়া বিভাগ, আল-জামি‘আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়া,পোরশা,নওগাঁ।
বিষয়:শর্তযুক্ত তালাক প্রসঙ্গে।
প্রশ্ন: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। বরাবর শ্রদ্ধেয় মুফতি সাহেব/আলেমে দ্বীন, আমি আপনাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত সমস্যার সমাধান পাওয়ার উদ্দেশ্যে লিখিতভাবে প্রশ্ন উপস্থাপন করছি। অনুগ্রহ করে শরয়ী দিক থেকে এর ফতোয়া প্রদান করবেন।
প্রশ্ন-১: শর্তযুক্ত তালাক প্রসঙ্গে।আমার স্বামী প্রবাসে থাকেন। একবার তিনি আমাকে বলেছিলেন: “তুমি যদি আমার ভাবির (মানে তার ভাইয়ের স্ত্রী) সঙ্গে কথা বলো, তাহলে অটো তালাক হয়ে যাবে।” এরপর আমি তাকে বলেছিলাম: “আমি ভাবির সঙ্গে কথা বলি।” তখন সে বলেছিল: “ঠিক আছে, বলো।” তবে পরে সে অস্বীকার করেছে যে সে আমাকে অনুমতি দেয়নি। এখন আমার নিজস্বভাবে মনে নেই, আমি কথাটি বলার আগেই কথা বলেছি কিনা, নাকি পরে বলেছি। আমার প্রশ্ন হলো: এই অবস্থায় কি আমার উপর তালাক পতিত হয়েছে? যদি তালাক না হয়ে থাকে, তাহলে এর শরয়ী ভিত্তি কী?
প্রশ্ন-২: হাত খরচের টাকায় অন্য কেউ খরচ করলে শর্তযুক্ত তালাক। স্বামী বলেছিলেন: “আমি তোমাকে হাত খরচের যে টাকা দেই, সেই টাকা তুমি ছাড়া কেউ খরচ করলে অটো তালাক হয়ে যাবে।” এখন বিষয় হলো,সেই টাকা থেকে তার মা আমাকে না জানিয়ে কিছু টাকা খরচ করেছেন।আমি তাদের খরচের ব্যাপারে কিছুই জানতাম না এবং অনুমতিও দেইনি। প্রশ্ন: এই অবস্থায় তালাক পতিত হয়েছে কি না? তালাক না হয়ে থাকলে, শরয়ী ব্যাখ্যা কী?
প্রশ্ন-৩: ফোন দেওয়ার শর্তযুক্ত তালাক প্রসঙ্গে। আমার স্বামী প্রবাসে থাকেন। সে পরকীয়ার মতো ফিতনায় জড়িয়ে গেছে। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে বিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে সে বলে: “তুমি যদি আমাকে ফোন দাও, তাহলে অটো তালাক হয়ে যাবে।” আমি সেদিন সারাদিন ফোন দেইনি। পরে রাতে সে নিজেই ফোন দেয়, কথার মাঝে কল কেটে গেলে আমি তাকে আবার কল দেই। আমার ভয় হচ্ছে — সে তার আগের কথাটি বাতিল করেনি এবং আমি তাকে ফোন দিয়েছি। প্রশ্ন: এই অবস্থায় কি তালাক পতিত হয়েছে? যদি না হয়ে থাকে, তবে এর শরয়ী ব্যাখ্যা কী? অনুরোধ:অনুগ্রহ করে প্রয়োজনীয় দলীল ও শরয়ী ব্যাখ্যাসহ দিলে কৃতজ্ঞ থাকব,যাতে স্বামী ও পরিবারের লোকজনের কাছে বিষয়টি পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করতে পারি।
বি:দ্র: মৌখিক বিবরণ থেকে জানা গেছে যে,প্রথম ঘটনার পর স্বামী তার স্ত্রীকে মৌখিকভাবেও ফিরিয়ে নেয়নি আবার তাদের দৈহিক মিলনও হয়নি। প্রায় দেড় বছর পর স্বামী প্রবাস থেকে বাসায় আসেন। এরপর নতুন বিবাহ ছাড়াই তাদের পুনর্মিলন হয়।এরপর পরবর্তী দুই ঘটনা ঘটে।
নিবেদক
মোসা:আমাতুল্লাহ
بسم الله الرحمن الرحيم،حامدا ومصليا ومسلما-
সমাধান:প্রশ্নোক্ত বিবরণ যদি সঠিক হয়ে থাকে তাহলে প্রথম ঘটনার কারণে আপনার উপর এক তালাকে রজয়ী কার্যকর হয়েছে।এরপর আপনাকে ফিরিয়ে নেওয়ার আগেই ইদ্দত শেষ হওয়ার কারণে তালাকটি বায়েনে রূপান্তরিত হয়ে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে। তাই পরবর্তীতে আপনাদের পুনর্মিলন বৈধ হয়নি।এর জন্য আপনাদেরকে আল্লাহ তাআলার কাছে খাঁটি দিলে তওবা ও ইস্তেগফার করতে হবে। প্রথম ঘটনার দ্বারা বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার কারণে পরবর্তী ঘটনা দুটির দ্বারা আপনার উপর কোন তালাক কার্যকর হয়নি।এখন আপনারা যদি শরীয়ত মোতাবেক বৈধ দাম্পত্য জীবন গড়তে চান তাহলে নতুন করে মোহর ধার্য করে দু’জন উপযুক্ত সাক্ষীর সামনে নতুন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে।                প্রকাশ থাকে যে,যদি আপনারা পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তাহলে স্বামী পরবর্তীতে শুধু দুই তালাকের অধিকারী থাকবেন। ভবিষ্যতে কখনো যদি দুই তালাক দিয়ে দেন,তাহলে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে যাবে। সুতরাং ভবিষ্যতে তালাক প্রদানের ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক থাকতে হবে।

الاحالة الشرعية على المطلوب-
في”بدائع الصنائع”(٤/٤٦) فإن طلقها ولم يراجعها بل تركها عدتها بانت حتى انقضت
وفيه أيضا (٤/٤٧٩) فصل في حكم الطلاق البائن….. هو نقصان عدد الطلاق وزوال الملك أيضا حتى لا يحل له وطؤها إلا بنكاح جديد….ولا يحرم محرمة غليظة حتى يجوز له نكاحها من غير أن تتزوج بزوج آخر لأن ما دون الثلاثة وإن كان بائنا فإنه يوجب زوال الملك لا زوال حل المحلية
وفيه أيضا (٤/٤٧٠) وأما شرائط جواز الرجعة فمنها قيام العدة فلا تصح الرجعة بعد انقضاء العدة.
وفي” الهداية”( ٢/٣٨٥) وإذا أضافه إلى الشرط وقع عقيب الشرط مثل أن يقول لإمرأته إن دخلت الدار فأنت طالق وهذا بالإتفاق
وفي”كتاب النوازل”(٩/٥٥٨) سوال: زاید نے اپنی بیوی سے کہا کہ اگر تم مجھ سے بولوں گی تو تم کو طلاق۔۔۔۔ اگر شوہر سے کلام کر لے تو طلاق واقع ہوگی یا نہیں؟ اگر طلاق واقع ہوگی تو طلاق رجعی واقع ہوگی یا طلاق بائن؟ جواب: صورت مسؤولہ میں اگر بیوی زائد سے بولے گی تو اس پر ایک طلاق رجعی واقع ہوگی.انتهى، والله أعلم بالصواب

 

ফতোয়া প্রদান করেছেনঃ
মুফতি আব্দুল আলিম সাহেব (দা.বা.)
নায়েবে মুফতী-ফতোয়া বিভাগ
আল জামিয়া আল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা, নওগাঁ ।

Scroll to Top