আল জামি'আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা

রাগের মাথায় তিন তালাক দেওয়া প্রসঙ্গে

বরাবর,
ফতোয়া বিভাগ, আল-জামি’আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়া,পোরশা,নওগাঁ।
বিষয়: রাগের মাথায় তিন তালাক দেওয়া প্রসঙ্গে।
প্রশ্ন: হুজুর আমি আমার বউকে রাগের মাথায় তিন তালাক দিয়েছি। এখন কি আমি তার সাথে সংসার করতে পারবো? আর আমি তখন খুবই রাগান্বিত ছিলাম মাথায় কাজ করছিলো না। আর আমি অনলাইনে একটা হাদিস দেখলাম এটা কি ঠিক আছে। তা হলো এই। ২৩ নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: তালাক তো মুখের মাধ্যমেই হয়! এনটিভির ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাবঃ রাগান্বিত ব্যক্তির তালাক। রাগের মাথায় তালাক দিলে তালাক হয় না। তবে রাগের তিনটি অবস্থা হতে পারে: প্রথম অবস্থা: এত তীব্র রাগ উঠা যে, ব্যক্তি তার অনুভুতি হারিয়ে ফেলা। পাগল বা উন্মাদের মত হয়ে যাওয়া। সকল আলেমের মতে, এ লোকের তালাক কার্যকর হবে না। কেননা সে বিবেকহীন পাগল বা উন্মাদের পর্যায়ভূক্ত। দ্বিতীয় অবস্থা: রাগ তীব্র আকার ধারণ করা। কিন্তু সে যা বলছে সেটা সে বুঝতেছে এবং বিবেক দিয়ে করতেছে। তবে তার তীব্র রাগ উঠেছে এবং দীর্ঘক্ষণ ঝগড়া, গালি-গালাজ বা মারামারির কারণে সে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনি। এগুলোর কারণেই তার রাগ তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ লোকের তালাকের ব্যাপারে আলেমদের মাঝে মতভেদ আছে। অগ্রগণ্য মতানুযায়ী, এ লোকের তালাকও কার্যকর হবে না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “ইগলাক এর অবস্থায় তালাক কিংবা দাস আযাদ নেই”। [সুনানে ইবনে মাজাহ (২০৪৬), শাইখ আলবানী ‘ইরওয়াউল গালিল’ কিতাবে হাদিসটিকে ‘সহিহ’ আখ্যায়িত করেছেন] ইগলাক শব্দের ইগলাক শব্দের অর্থে আলেমগণ বলেছেন: জবরদস্থি কিংবা কঠিন রাগ। তৃতীয় অবস্থা: হালকা রাগ। স্ত্রীর কোন কাজ অপছন্দ করা কিংবা মনোমালিন্য থেকে স্বামীর এই রাগের উদ্রেক হয়। কিন্তু এত তীব্র আকার ধারণ করে না যে, এতে বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে কিংবা নিজের ভাল-মন্দের বিবেচনা করতে পারে না। বরং এটি হালকা রাগ। আলেমগণের সর্বসম্মতিক্রমে এ রাগের অবস্থায় তালাক কার্যকর হবে। রাগাম্বিত ব্যক্তির তালাকের রাগাম্বিত ব্যক্তির তালাকের মাসআলায় বিস্তারিত ব্যাখ্যামূলক এটাই সঠিক অভিমত। ইবনে তাইমিয়া ও ইবনুল কাইয়্যেম এভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ। আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর আল্লাহ্‌র রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।
নিবেদক
মুহা. আব্দুল্লাহ আল মামুন
بسم الله الرحمن الرحيم،حامدا ومصليا ومسلما-
সমাধান: প্রশ্নোক্ত বিবরণ অনুযায়ী তালাক প্রদানের কথা যদি আপনার মনে থাকে এবং আপনি যদি বিকারগ্রস্থ না হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার স্ত্রীর উপর তিন তালাক কার্যকর হয়েছে এবং আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে গেছে। কারণ ঐধরণের রাগের অবস্থায় তালাক দিলেও তালাক কার্যকর হয়। আর যদি আসলেই আপনি বিকারগ্রস্থ হয়ে থাকেন এবং তালাকের কথা পুরাপুরি স্মরণ না থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে কোন তালাক কার্যকর হবে না। উপরোক্ত দুই অবস্থার মধ্যে যদি প্রথম অবস্থাটি ঘটে থাকে, তাহলে আপনি আর আপনার স্ত্রীকে স্বাভাবিকভাবে ফিরিয়ে নিতে পারবেন না। তবে যদি স্ত্রী আপনার তালাকের ইদ্দত শেষ করার পর অর্থাৎ স্ত্রী ঋতুমতি হলে তিনটি ঋতু আর গর্ভবতী হলে বাচ্চা প্রসব করার পর স্বেচ্ছায় অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং দ্বিতীয় স্বামী সহবাস করার পর কোন কারণে তালাক দেয় বা মারা যায়, তাহলে দ্বিতীয় স্বামীর ইদ্দত অতিবাহিত করার পর স্ত্রী রাজি থাকলে আপনি তার সাথে নতুনভাবে দুইজন স্বাক্ষীর উপস্থিতিতে মোহর ধার্য করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবেন।
আর অনলাইনের যে ফতোয়াটি আপনি প্রশ্নের সাথে যুক্ত করে দিয়েছেন, সেখানে তিনটি অবস্থা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থাতেও হানাফী মাজহাব অনুযায়ী তালাক কার্যকর হবে।
উল্লেখ্য, শরীয়তের দৃষ্টিতে সাধারণ অবস্থায় তালাক খুবই অপছন্দনীয় ও গর্হিত কাজ। তাই এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। অতি প্রয়োজন ছাড়া তা প্রয়োগ করা কিছুতেই বাঞ্চনীয় নয়। যদি কখনো তালাক দিতেই হয়, তাহলে পরামর্শ অনুযায়ী এক তালাকের বেশি দেওয়া উচিত নয়। তাও শান্ত পরিবেশে, রাগের পরিবেশে নয়।

الاحالة الشرعية على المطلوب
قوله تعالى: فإن طلقها فلا تحل له من بعد حتى تنكح زوجا غيره( سوره البقره- ٢٣٠)
وفي “الهندية” (٢/ ٣٩٩) وإن كان الطلاق ثلاثا في الحرة أو ثنتين في الامة لم تحل له حتى تنكح زوجا غيره نكاحا صحيحا ويدخل بها ثم يطلقها أو يموت عنها
وفي “رد المحتار” (٤/٤٣٩) قلت: وللحافظ ابن القيم الحنبلي رسالة في طلاق الغضبان، قال فيها: إنه على ثلاثة أقسام: أحدها أن يحصل له مبادي الغضب بحيث لايتغير عقله ويعلم ما يقول ويقصده، وهذا لا إشكال فيه، الثاني أن يبلغ النهاية فلايعلم ما يقول ولايريده، فهذا لا ريب أنه لاينفذ شيء من أقواله، الثالث من توسط بين المرتبتين بحيث لم يصر كالمجنون، فهذا محل النظر، والأدلة تدل على عدم نفوذ أقواله اهـ  ملخصاً من شرح الغاية الحنبلية، لكن أشار في الغاية إلى مخالفته في الثالث حيث قال: ويقع طلاق من غضب خلافاً لابن القيم اهـ وهذا الموافق عندنا لما مر في المدهوش”.—- والذي يظهر لي أن كلا من المدهوش والغضبان لا يلزم فيه أن يكون بحيث لا يعلم ما يقول‘ بل يكتفي فيه بغلبة الهذيان واختلاط الجد بالهزل‘ كما هو المفتى به فى السكران
وفي “بدائع صنائع”(٤/٢٦٩) ومنها أن لا يكون معتوها ولا مدهوشا ولا مبرسما ولا مغما عليه ولا نائما فلا يقع طلاق
وفي “فتح الباري” (٩/٣٨٩) وقال الفارسي في مجمع الغرائب ان طلاق الناس غالبا إنما هو في حالة الغضب وقال ابن المرابط ولو جاز عدم وقوع طلاق الغضبان لكان لكل أحد أن يقول فيما جناه كنت غضبانا وأراد بذلك الرد على من قال أن الطلاق في الغضب لا يقع
و فی “فتاوی حقانیہ” (4/448) سوال: کیا غصہ کی حالت میں دی گئ طلاق واقع ہو جاتی ہے یا نہيں؟ الجواب: طلاق عموما غصہ کی حالت میں دی جاتی ہے اس لئے غصہ کا ہونا طلاق پر اثر انداز نہیں ہوتا، اگر غصہ کی کیفیت اس درجہ تک پہنچ جائے کہ اس کو کلام سمجھنے کی طاقت نہ رہے تو مدہوش کے حکم میں ہوکر طلاق واقع نہیں ہوگی..انتهى، والله أعلم بالصواب

ফতোয়া প্রদান করেছেনঃ
মুফতি আব্দুল আলিম সাহেব (দা.বা.)
নায়েবে মুফতী-ফতোয়া বিভাগ
আল জামিয়া আল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা, নওগাঁ ।

Scroll to Top