আল জামি'আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা

বিবাহ ও তালাক প্রসঙ্গে

বরাবর,
ফতোয়া বিভাগ, আল জামি‘আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়া পোরশা,নওগাঁ।
বিষয়: বিবাহ ও তালাক প্রসঙ্গে।
প্রশ্ন: দয়া করে লিখিত ফতোয়া দিবেন।
প্রথম বিষয়: স্বামী রকিবুল হাসানের সাথে স্ত্রী মারিহা আক্তারের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্ত্র্রী বুঝতে পারে তার স্বামী শারীরিকভাবে অক্ষম। অক্ষমতার মধ্যেও পরিবারে তাদের একটি ছেলে ও একটি মেয়ে হয়। স্বামীর আর্থিক অবস্থা চলার মত ছিল। কিন্তু স্বামী নেশাগ্রস্থ ও পরকীয়া লিপ্ত হওয়ায় স্ত্রীকে মারধর করতো, খারাপ ব্যবহার করতো। তার পরিবারের কাছে কয়েক বার জানানো হলেও কোন সমাধান পাওয়া যায়নি। এভাবে ১৫ বছর সংসার চলতে থাকে। এক পর্যায়ে তার ফোনে পরকীয়ার অন্তরঙ্গ ছবি দেখতে পেয়ে স্ত্রী তার থেকে আলাদা হয়ে যায়। পারিবারিকভাবে বসিয়ে বিষয়টি সমাধান করতে চাইলে স্ত্রী তার সাথে সংসার করতে আর রাজি হয়নি। স্ত্রী তার থেকে তালাক চেয়েছিল কিন্তু সে তালাক দিতে রাজি হয়নি। তবে স্ত্রী পক্ষের একজনকে তার স্বামী বলেছে, সে তালাক দিলে দিয়ে দিক, সে তালাকনামায় সাইন করে দিবে এবং সে তার ভাবিকে বলেছিল, তালাক দেয়না কেন? কিন্ত সে সরাসরি স্ত্রীকে ‘তালাক দিয়ে দাও’ এমন কথা বলেনি। একদিন তার ছেলেকে মেরে ঘর থেকে বের করে দেয় এবং তার স্ত্রীকে বলে, ছেলেকে ঘরে আনলে ‘‘বিনা কথায় তালাক’’ হয়ে যাবে। সেদিন স্ত্রী ছেলেকে ঘরে নিয়ে আসে। এভাবে স্বামী-স্ত্রী একুশ (২১) মাস বিচ্ছিন্ন থাকার পর স্ত্রী কাজী অফিস গিয়ে নিজের উপর তালাক নিয়ে নেয়। তালাকনামা পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু স্বামী পক্ষের লোক সেটা গ্রহণ করেনি। সে তালাকনামা পায়নি সাইন করেনি। সে প্রচার করছে তালাক দিতে বলেনি, তালাকের অনুমতিও দেয়নি। সে আবার তার স্ত্রীকে সংসারে ফেরত নিতে চায়।
প্রশ্ন (১) স্ত্রীর তালাক দেয়া শরীয়ত সম্মত হয়েছে? অথবা স্বামীর কোন কথার মাধ্যমে সে কি আগেই তালাক হয়ে গেছে?
দ্বিতীয় বিষয়: একুশ(২১) মাস স্বামী-স্ত্রী আলাদা থাকার পর যেদিন স্ত্রী কাজীর মাধ্যমে তালাক নেয়, সেই দিনই স্ত্রী তার মা-বাবাকে না জানিয়ে ছেলের পক্ষের কাউকে না জানিয়ে শুধু তার একজন বোন ও বোন জামাই ও আরেকজন চাচাতো বোন জামাইকে জানিয়ে তিনজন পুরুষের সাক্ষীতে কাজী অফিসে অন্য পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
প্রশ্ন (২) এমতবস্থায় ইদ্দত পালন ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে বৈধ হয়েছে?
তৃতীয় বিষয়: দ্বিতীয় স্বামীর কাছে সংসার করা অবস্থায় স্ত্রী তার ছেলে মেয়ের জন্য কান্নাকাটি করতো এবং প্রথম স্বামী তাকে নিতে চায় এ বিষয় দ্বিতীয় স্বামীকে জানায়। দ্বিতীয় স্বামী তার কান্নাকাটি ও যাওয়ার আগ্রহ দেখে বলেছে, তুমি যেতে চাইলে আমায় তালাক দিয়ে যেতে পার এই অনুমতি দিলাম। এখন স্ত্রী দ্বিতীয় বিয়ের বিষয় গোপন রাখতে চায়। কারণ দ্বিতীয় বিয়ে হয়েছে শুনলে প্রথম স্বামী মেনে নিবে না। তাই গোপন রেখে প্রথম স্বামীর সাথে সংসার করতে চায়।
প্রশ্ন (৩) এই সত্য গোপন রেখে প্রথম স্বামীর সাথে সংসার করা জায়েজ হবে কিনা?
নিবেদক
মুহাঃ আরিফ
بسم الله الرحمن الرحيم،حامدا و مصليا و مسلما-
সমাধান: প্রশ্নোক্ত বিবরণ যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে স্বামী রকিবুল হাসানের বক্তব্য “ছেলেকে ঘরে আনলে বিনা কথায় তালাক হয়ে যাবে’’ এর দ্বারা শরীয়তের বিধান অনুযায়ী তার স্ত্রীর উপর এক তালাকে রজয়ী কার্যকর হয়েছে। এরপর ইদ্দতের মধ্যে যদি স্বামী তার স্ত্রীকে কথার মাধ্যমে ফিরিয়ে নিয়ে থাকে অথবা তাদের মাঝে স্বামী-স্ত্রী সূলভ আচারণ হয়ে থাকে তাহলে তাদের স্বামী-স্ত্রীর সর্ম্পক পুনরায় বহাল হওয়ার কারণে একুশ মাস পর স্ত্রী কর্তৃক তালাক গ্রহণটি কার্যকর হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ঐ দিনেই অন্য পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ হয়নি এবং দ্বিতীয় বিবাহটিও এক্ষেত্রে সহীহ হয়নি। আর স্বামীর বক্তব্যের কারণে যে রজয়ী তালাকটি কার্যকর হয়েছে এরপর যদি স্বামী ইদ্দতের মধ্যে তার স্ত্রীকে মৌখিকভাবে ফিরিয়ে না নিয়ে থাকে এবং স্বামী-স্ত্রী সূলভ কোন আচারণও করে না থাকে তাহলে উক্ত রজয়ী তালাকটি বায়েন তালাকে রূপান্তরিত হয়ে গেছে এবং স্বামী-স্ত্রীর সর্ম্পক ছিন্ন হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে একুশ মাস পর স্ত্রী কর্তৃক তালাক গ্রহণটি কার্যকর হয়নি। তবে অন্য পুরুষের সঙ্গে দ্বিতীয় বিবাহটি সহীহ হয়েছে। এক্ষেত্রে যদি স্ত্রী প্রথম স্বামীর কাছে ফিরে আসতে চায়, তাহলে দ্বিতীয় স্বামীর দেওয়া তালাকের অধিকার বলে নিজের উপর তালাক গ্রহণ করে দ্বিতীয় স্বামীর তালাকের ইদ্দত শেষ করার পর অর্থাৎ স্ত্রী ঋতুমতী হলে তিনটি ঋতু আর গর্ভবতী হলে সন্তান প্রসব হওয়ার পর প্রথম স্বামীর সঙ্গে নতুনভাবে দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে মহর ধার্য করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। আর দ্বিতীয় স্বামীর সাথে বৈবাহিক সংসার করার বিষয়টি আপনি চাইলে প্রথম স্বামীর কাছে গোপন রাখতে পারবেন।
উল্লেখ্য, শরীয়তের দৃষ্টিতে তালাক খুবই অপছন্দনীয় ও গর্হিত কাজ। তাই এ ব্যাপারে সর্ব্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। অতি প্রয়োজন ছাড়া তা প্রয়োগ করা কিছুতেই বাঞ্জনীয় নয়। যদি কখনো তালাক দিতে হয় তাহলে পরামর্শ অনুযায়ী এক তালাকের বেশি দেওয়া উচিত নয়। তাও শান্ত পরিবেশে রাগের পরিবেশে নয়।

الاحالة الشرعية على المطلوب
قال الله تعالى: فإن طلقها فلا تحل له من بعد حتى تنكح زوجا غيره .(سورة البقرة-230)
وفي”الهداية”(2/385) وإذا أضافه إلى الشرط وقع عقيب الشرط مثل أن يقول لإمرأته إن دخلت الدار فأنت طالق وهذا بالاتفاق لأن الملك قائم في الحال والظاهر بقاء إلى وقت وجود الشرط فيصح يمينا أو إيقاء
وفي” فتح القدير”(4/103) وإذا أضافه إلى الشرط وقع عقيب الشرط
وفي”الهندية”(1/488) وإذا أضافه إلى شرط وقع عقيب الشرط اتفاقا
وفي”تبيين الحقائق”(1/533) قال رحمه الله: (إنما يصح في الملك كقوله لمنكوحته وإن زرت فأنت طالق أو مضافا إليه) أي إلى الملك (كا نكحتك فأنت طالق فيقع بعده) أي يقع الطلاق بعد وجود الشرط
وفي”مجمع الأنهر”(2/57) إنما يصح في الملك كقوله المنكوحة إن زرت فأنت طالق أو مضافا إلى الملك كقوله لأجنبية إن نكحتك)أي تزوجتك (فأنت طالق) فإن النكاح سبب الملك فالستعير السبب للمسبب أو ملكتك بالنكاح (فيقع إن نكح) لوجود الشرط
وفي”فتاوى عباد الرحمن”(5/75) جواب” بیوی نے شوہر کی طرف سے عائد پابندی کے خلاف اگر کیا یعنی اپنے شوہر کے بھائیوں کے علاوہ کسی سے سلام ، جواب سے زیادہ بات کی یا سوال کے جواب میں فقط ہاں یا ناں پر اکتفا‌ء نہیں کیا اور کچھ مزید بات کہی تو طلاق رجعی واقع ہو جائیگی جسکا حکم یہ ہے کہ شوہر کو دوران عدت رجوع کرنے کا حق حاصل ہوگا دوران عدت اگر رجوع نہیں کیا تو عورت دوسری جگہ شادی کر سکے گی اور باہمی رضامندی سے اسی شوہر سے بھی بغیر حلالہ کے نئے حق مہر کے ساتھ نکاح ہو سکے گا لیکن یہ یاد رہے گا کہ طلاق واقع ہونے کی صورت میں آئندہ کیلئے صرف دو طلاق باقی رہینگی ، کسی بھی وقت دو طلاقیں مزید اگر واقع ہو گئیں تو حرمت مغلظہ ثابت ہو جائےگی اور پھر حلالہ کے بغیر نکاح بھی نہ ہو سکے گا
وفي راجع أيضا في “فتاوى دار العلوم ديوبند”(10/91) و”احسن الفتاوى”(5/154) و”فتاوى محموديه”(19/142) و”فتاوى قاسميه”(16/75) و”كتاب النوازل”(9/558)انتهى ، والله أعلم بالصواب

ফতোয়া প্রদান করেছেনঃ
মুফতি আব্দুল আলিম সাহেব (দা.বা.)
নায়েবে মুফতী-ফতোয়া বিভাগ
আল জামিয়া আল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা, নওগাঁ ।

শেয়ার করুন !!
Scroll to Top