বরাবর,
ফতোয়া বিভাগ, আল-জামি‘আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়া,পোরশা,নওগাঁ।
বিষয়: পিতা মাতার বিচ্ছেদের পর সন্তানের করণীয় প্রসঙ্গে।
প্রশ্ন: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ্। মাসাআলা: আমার নাম: মো:ইমদাদ উল্লাহ। পিতার নাম: মাওলানা সালেহ উদ্দিন। মাতার নাম: জান্নাতুল ফেরদৌসী। আমি বিবাহিত এবং একজন কন্যা সন্তানের পিতা। বর্তমান ঠিকানা: মানিকছড়ি সদর, খাগড়াছড়ি। বর্তমান পরিচয়ঃ শিক্ষক, মানিকছড়ি কাসেমুল উলুম মাদ্রাসা।
বিষয়ঃ সন্তান ছোটবেলায় মাতা পিতার বিচ্ছেদের পর সন্তান বড় হওয়ার পর সন্তানের করনীয়।
বিস্তারিতঃ আমার বয়স যখন আড়াই তিন বছর তখন আমার মা-বাবা আলাদা হয় এবং আমার বয়স যখন ১৬ অথবা ১৭ তখন আবার আমার মায়ের সাথে সাক্ষাৎ হয়। তার আগে আমি আমার বাবার কাছে ছিলাম। বাবা বলে, এ বছর গুলোতে আমার মা আমার সাথে দেখা করতে আসেনি। আমার খোঁজ খবরও নেয়নি। মা বলে, দেখা করার চেষ্টা করেছে, সাক্ষাৎ করার চেষ্টা করেছে তবে আমার দ্বিতীয় মা দেখা করতে দেয়নি।
বাবার পরিচয়ঃ আমার বাবা একজন আলেম এবং তিনি বর্তমানে এক মসজিদের ইমামতির দায়িত্ব পালন করছে, এবং তার দ্বিতীয় স্ত্রী কে নিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রীর বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন। বাবার আমি ব্যতীত আর কোন সন্তান নেই। আমি একাই তার সন্তান।বাবার ঠিকানা চৌয়ারা সদর দক্ষিণ কুমিল্লা।
বাবার বক্তব্যঃ আমার বাবা আমাকে বলতে চায় যেহেতু তোমার মা তুমি ছোট অবস্থায় তোমাকে রেখে আমাকে রেখে চলে গেছে, আমি তোমাকে লালন পালন করে বড় করেছি। এখন তোমার করণীয় তোমার মা, তোমার ভবিষ্যৎ কামনা করে না, তাই তুমি যদি তোমার মায়ের সাথে থাকো তোমার ভবিষ্যৎ বিপদগ্রস্ত। তোমার অর্থনীতি দিয়ে তুমি বড় কিছু হও। মায়ের পিছনে খরচ না করাই উত্তম। যেহেতু আমি বিবাহ করেছি আমাকে বলে তুমি যদিও যাও তবে তোমার স্ত্রী এবং সন্তানদেরকে মায়ের কাছে নিয়ে যাবে না এবং আমার স্ত্রীকেও শপথ করিয়েছে যে, আমার স্ত্রী যেন তার শাশুড়ির কাছে অবস্থান না করে।
মায়ের পরিচয়ঃ আমার মা দ্বিতীয় বিবাহ করেছেন। তবেই তিনি তিনার স্বামীর সাথে অবস্থান করে না, এবং তার আমি ব্যতীত আরো এক ছেলে এক মেয়ে আছে। তবে তিনি বর্তমানে একাই মুসলিম পাড়া মানিকছড়ি খাগড়াছড়িতে অবস্থান করছেন। তার জীবিকার নিজেই উপার্জন করে থাকেন। তিনি বর্তমানে মারাত্মক রোগেও আক্রান্ত আছে।
মায়ের বক্তব্যঃ আমি আমার বাবাকে নিয়েই থাকি। তবে যেহেতু এখনো আমি আমার সুনির্দিষ্ট কোন অবস্থান তৈরি করতে পারিনি, তাই আমার স্ত্রী এবং সন্তানদেরকে নিয়ে তার কাছেই থাকি এবং তিনি মারাত্মক অসুস্থ হওয়ার কারণে সমাজ বাসীর আবেদন, আমি আমার স্ত্রী কে নিয়ে মায়ের কাছে থাকি। কিন্তু আমি উভয়ের কথার মধ্যে সমঝতা করতে না পেরে নিজে আলাদা বাসা নিয়েই থাকি। এইজন্য মায়ের কথা মতো চলতে না পারার কারণে মা আমাকে বদদোয়া দিয়ে থাকেন যেমন (১) তিনি বলেন আমি তোমার দুনিয়ার সফলতা কামনা করি তবে আখেরাতের নয়।(২) আমার বাবার এমন উক্তির কারণে একথাও বলেন আমার বাবা বৃদ্ধ অবস্থায় কষ্ট পেয়ে মারা যাবে।(৩)আমি যেন তার জানাজা না পরাই।(৪) মায়ের মৃত্যুর পর চেহারাও না দেখি। এমন আরো অনেক কথা তিনি বলেন।
স্ত্রীর বক্তব্যঃ যেহেতু আমার বাবা স্ত্রীকে শপথ করিয়েছে, তাই সে বলতে চায় বাবার শপথ ভাঙতে পারবে না এবং বাবা না বলা অব্দি আমার মায়ের কাছে অবস্থান করতে পারবে না। তবে সে মাঝে মাঝে দেখা করবে গিয়ে। তবে এটা আমার মা পছন্দ করে না। মা বলে হয় এসে আমার কাছে থাকতে হবে বাবার অনুমতি নিয়ে, অন্যথায় যেন মায়ের কাছে না যায়।
শশুর শাশুড়ির বক্তব্যঃ তারাও বলে মায়ের সাথে দেখা করবে তবে মায়ের কাছে গিয়ে থাকবে না।
এ সকলের কথার প্রেক্ষিতে আমার করনীয় কি অন্যথায় মা-বাবার বদদোআর ভাগীদার হতে হয়, আমি কি করবো আমি সকল আলেম ওলামাদের কাছে আবেদন করি ইসলামিক শরিয়াত দৃষ্টিতে একটা সমাধান দেয়ার জন্য আমার যেন দুনিয়া না হোক অন্তত আখেরাতটা কামাই করতে পারি সরল সঠিক পথে চলতে পারি।
নিবেদক
মুহা. ইমদাদ উল্লাহ
মানিকছড়ি, খাগড়াছড়ি
بسم الله الرحمن الرحيم،حامدا ومصليا ومسلما-
সমাধান: প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার মায়ের সাথে দেখা সাক্ষাৎ , সেবা-শশ্রুষা ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা আপনাকে করতে হবে। পশাপাশি আপনার বাবার সাথেও সুসম্পর্ক রক্ষা করতে হবে। একজনকে খুশি করতে গিয়ে অপরজনকে প্রত্যাখান করা যাবে না। হিকমতের সাথে উভয়কে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে মায়ের সহযোগিতার বিষয়টি পিতার কাছে গোপন রাখতে পারেন।
আর একজন অপরজনের সাথে অসদাচরণ বা সম্পর্কচ্ছেদ করতে বললে তা মানা যাবে না। এধরণের কথা না মানার কারণে আপনি শরীয়তের দৃষ্টিতে অবাধ্য বা গুনাহগার হবেন না। কেননা হাদিস শরিফে এসেছে, রসুল ﷺ বলেছেন “আল্লাহ তায়ালার অবাধ্যতার মধ্যে মাখলুকের কোন আনুগত্য নেই।” (মুসনাদে আহমাদ-১৯৮৮০)
আর আপনার স্ত্রীর উপর আপনার মার কাছে থাকা বা তার খেদমত করা আবশ্যক নয়। তাই এব্যাপারে স্ত্রীকে বাধ্য করা যাবে না । আবার শুশুড়-শাশুড়ীর খেদমত করা যেহেতু অনেক সওয়াবের কাজ, তাই আপনার পিতা কতৃক আপনার স্ত্রী থেকে শাশুড়ীর কাছে না যাওয়ার কসম নেওয়াটাও অনুচিত হয়েছে।
الإحالة الشرعية على المطلوب
في “مرقاة المفاتيح”(٩/١٣٦) قال الخطابي لم يخص الامهات بالعقوق فإن عقوق الاباء محرم أيضا ولكن نبه باحدهما عن الاخر فإن بر الام مقدم على بر الاب إلا ان لعقوق الامهات مزية في القبح وحق الاب مقدم في الطاعة و حسن المتابعة لرأيه والنفوذ لامره وقبول الادب منه
وفي الهندية(٥/٤٢٢) الابن البالغ يعمل عملا لا ضرر فيه دينا ولا دنيا بوالديه وهما يكرهانه فلابد من الاستئذان فيه إذا كان له منه بدا إذا تعذر عليه جمع مراعاة حق الوالدين بأن يتاذى احدهما بمراعاة الاخر يرجح حق الاب فيما يرجع الى التعظيم والاحترام وحق الام فيما يرجع الى الخدمة والانعام وان علاء الائمة الحمامي قال مشايخنا الاب يقدم على الام في الاحترام والام في الخدمة حتى لو دخلا عليه
وفي “الدر المختار(٥/٢٩١) لا يجوز لها اخذ الاجرة على ذلك لوجوبه عليها ديانة ولو شريفة في الشامي ولكنها لا تجبر عليه ان ابت
في “فتاوی دارالعلوم دیوبند”(١٦/٥٠٥) سوال: زید کے باپ نے زید کی والدہ کو طلاق دے دی ہے بعد عدت کے اس کی والدہ نے دوسرے شوہر کر لیا ہے زید کا والد زید کو جس کام امر کرتا ہے اس کی والدہ اس کے کرنے سے منع کرتی ہے یا برعکس اس کے اگر زید ایک کی فرمانبرداری کرتا ہے تو دوسرے کی نافرمانی ہوتی ہے ایا زید کسی کے حکم کی نافرمانی کرے اور کسی کی فرمانبرداری؟
الجواب: اطاعت الوالدین کی معصیت میں نہیں ہے جیسا کہ وارد ہے “لا طاعة لمخلوق في معصية الخالق” پس جب کہ باپ نے یا ماں نے اول کسی امر کا حکم کیا جو موافق شرح کی ہے اور اس میں کچھ معصیت نہیں ہے تو اس کے خلاف جو دوسرے نے ضد سے حکم کیا وہ مبنی ضد اور نفسانیت پر ہے اور معصیت ہے لہذا اس دوسرے کی اطاعت نہ کرنی چاہیے یا یوں فیصلہ کیا جاوے که جس کا حکم ان دونوں موافق شرع کے ہوں اس کو کرے اور جس کا حکم خلاف شرح ہے اس کو نہ کرے اور حتي الوسع ایک کی حکم کی دوسرے کو خبر نہ کیا کریں جبکہ ان مين عداوت ہے
في “دارالعلوم دیوبند”(١٦/٥٠٦) الجواب وہ اپنے باپ سے ضرور ملے اور اس کی اطاعت کرے اور اس والدہ کے کہنے کا خيال نه کرے کیونکہ حدیث میں ہے “لا طاعة لمخلوق في معصية الخالق
“كتاب النوازل “(٨/٥٤٧)الجواب :عورت پر تمام گھر والوں کی خدمت کرنا قضاء یا شرعا لازم نہیں ہے بلکہ وہ صرف اپنے شوہر اور بچوں کی ذمہ دار تاہم اور عرفا و اخلاقا اگر کوئی يه كام کرے جیسا کہ ہمارے علاقہ میں معمول ہے تو اس کی طرف سے گھروالوں پر احسان ہے لیکن اسے بہرحال مجبور نہیں کیا جا سکتا اور اگر وہ يه خدمت نہ کرے تو اس پر لعن طعن یا سختی کی اجازت نہیں ہے—-.انتهى، والله أعلم بالصواب