বরাবর,
ফতোয়া বিভাগ, আল-জামি’আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়া,পোরশা,নওগাঁ।
বিষয়: তালাক প্রসঙ্গে।
প্রশ্ন: মাননীয় মুফতী সাহেব হুজুর, আসসালামু আলাইকুম হুজুর। আমাকে একটু সাহায্য করেন। ১) আমার একদিন কল্পনা আসে যে আমার যে কাযী বিয়ে পড়িয়েছিলেন সে আমাকে বলছে যে তোমার কি কোনো কুল্লামার কসম আছে নাকি। এসব সব আমার মনে মনে কল্পনা আর আমি মনে মনে প্রথমে না বলি। তারপর নাক দিয়ে আওয়াজ করে হু বলে ফেলি। সব মনে মনে বলি আর হু টা খালি আওয়াজ হয় এতে কি কোনো তালাক হবে?? আর আমার কোন কুল্লামার কসম ছিলো না আর আমার কাযীও আমাকে কুল্লামার কসম সম্পর্কে কোন জিজ্ঞেস করে নাই। সব আমার অহেতুক কল্পনা। ২)একদিন আমার স্ত্রী বলতেছে আমি আর তোমার বাড়িতে থাকবো না।আমাকে কয়েক দিনের জন্য আমাকে আমার বাড়িতে রেখে আসো। আমি জানি যে এটা তালাক সংক্রান্ত আলোচনা তাই স্ত্রী কে বলি এটা তালাক সংক্রান্ত আলোচনা এসব কথা আর কোন দিন বলবা না। তখন স্ত্রী চুপ হয়। তার কিছু সময় পর স্ত্রী বলে আমি তোমাকে ভালোবাসি না তো আমি বলি যে আর একবার বলো যে ভালোবাসো না তাহলে আমি মরে যাবো। তখন স্ত্রী চুপ করে থাকে। তারপর আবার বলি যে একবার বলো ভালোবাসো না তাহলে সব শেষ হয়ে যাবে। শেষ হয়ে যাবে মানে বুঝাইছি আমি মরে যাবো। তখন স্ত্রী বলে ভালোবাসি। কিন্তু আমার প্রশ্ন টা হলো স্ত্রী যদি কোন দিন বলে যে আমাকে ভালোবাসে না তাহলে কি কোনো তালাক হবে?? ৩) স্ত্রী ছোট বোন আমাকে একদিন বলে যে আমার আপু এখন বিয়ে করতে চাইনি। তারপর আমাকে দেখে বিয়ে করতে রাযী হয়। তাই আমি অভিমান করে স্ত্রী কে বলি আমি যদি জানতাম তুমি আমাকে বিয়ে করতে রাযী না তাহলে আমি তোমাকে বিয়েটা করতাম না। এটা বলার কারন কি কোনো তালাক হবে?? ৪) স্ত্রী কে জড়িয়ে ধরে একদিন শুয়ে আছি। তখন স্ত্রী বলে সারারাত তো জড়িয়ে ধরেই ছিলে। তখন আমি অভিমান করে শরীর ছেড়ে দিয়ে বলি ছেড়ে দিলাম তো এখন। আমি এটা শরীর ছেড়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে বলছি। আর স্ত্রী সাথে সাথে আবার জড়িয়ে ধরে। এতে কি কোনো তালাক হবে?? ৫) তার পরের দিন স্ত্রী বলতেছে তুমি তো আমাকে সবসময় জড়িয়ে ধরেই থাকো কখনো ছাড়ো না তখন আমি বলি কালকেই তো একটু ছেড়ে দিছিলাম। এটা আমি কালকের শরীর ছেড়ে দেওয়ার কথা বুঝাইছি এতে কি কোনো তালাক হবে? ৬)একদিন আমি ওয়াসওয়াসায় পরে ঠোঁট না খুলে শুধু জিহবা নাড়িয়ে বলি তুমি(স্ত্রী) যদি বেপর্দায় বাড়ি থেকে বের হও তাহলে তোমার আর আমার মধ্যে কার সম্পর্ক শেষ হবে। কোন নিয়ত ছিলো না। আপনি উওর দেন কোন তালাক হবে না। কিন্তু প্রশ্ন টা হলো। ঠোঁট না খুলে শুধু জিহবা নাড়িয়ে সম্পর্ক শেষ বলার পর আমি ওয়াসওয়াসায় পরে যাই। অনেক মুফতি সাহেবকে জিজ্ঞেস করা শুরু করলাম। কেউ বলে শব্দটা কেনায়া কেউ বলে ছরীহ তাই আমি একটা বুদ্ধি বের করলাম তালাক তো ছরিহ শব্দ। আর তালাক যদি ঠোঁট না খুলে শুধু জিহবা নাড়িয়ে বললেও তালাক না হয় তাহলে তো কোন টেনশন থাকবে না। তাই আমি মোট তিন জন মুফতি সাহেবকে বলছি যে আমি ঠোঁট না খুলে শুধু জিহবা নাড়িয়ে তালাক বলছি। কিন্তু আমি কোন দিন ঠোঁট না খুলে শুধু জিহবা নাড়িয়ে তালাক বলি নাই। তো আমি যে মুফতি সাহেবকে মাসআলা জানার উদ্দেশ্যে ঠোঁট না খুলে জিহবা নাড়িয়ে তালাক বলার কথা বলছি এতে কি কোনো তালাক হবে?? আমি তালাক দেবার উদ্দেশ্যে বলিনি শুধু মাসআলা জানার উদ্দেশ্যে বলছি এতে কি কোনো তালাক হবে?? ৭) একদিন মনে মনে বলতেছি যদি তালাক হয়ে যায় তাহলে আমার স্ত্রী ভালো থাকতে পারবে না। এমন মনে মনে দুই একবার বলছি মনে মনে বলার সময় স্ত্রী কে উদ্দেশ্য করছি। কিন্তু এমন করতে করতে হঠাৎ ঠোঁট না খুলে শুধু জিহবা নাড়িয়ে যদি তালাক হয় বলে ফেলি আর যদি তালাক বলার সময় তালাকটা সুর ধরে বলি তারপর হয় বলি এতে কি কোনো তালাক হবে?? আর স্ত্রীকে উদ্দেশ্য বা নিসবত করছি কিনা তাও নিশ্চিত মনে করতে পারতেছিনা। অনেক দিন আগের কথা তাই মনে করতে পারতেছিনা আমি মনে করছিলাম এতে তালাক হবে না। কিন্তু আজকে হঠাৎ মনে পড়ায় আমি পেরেশান হয়ে গেছি।
হুজুর আমি কিছু মুফতি সাহেবের কাছ থেকে মাসআালা গুলোর উত্তর নিছি তারা বলে কোন সমস্যা নেই। তবুও আমার টেনশন যায় না। আমি কি করবো দয়া করে একটু পরামর্শ দেন।
নিবেদক
রিয়াদ ইসলাম
بسم الله الرحمن الرحيم،حامدا و مصليا و مسلما-
সমাধান: আপনার সাতটি বক্তব্যের কোনটির দ্বারা তালাক কার্যকর হয়নি। সবগুলো সন্দেহ ও ওসওয়াসার অন্তর্ভূক্ত।
الاحالة الشرعية على المطلوب
قوله تعالى في سورة الأعراف: وإما ينزغنك من الشيطان نزغ فاستعذ بالله إنه سميع عليم.(سورة الأعراف-200)
أخرج الإمام البخارى في” صحيحه “(برقم 2528) عن أبى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إن الله تجاوز عن أمتى ما وسوست به صدورها مالم تعمل أوتتكلم
أخرج الإمام مسلم في” صحيحه “(برقم 134) عن أبى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يزال الناس يتساءلون حتى يقال هذا خلق الله الخلق فمن خلق فمن وجد من ذلك شيئا فليقل أمنت بالله
وفي”حاشية الطحطاوى على مراقي الفلاح”(219) لوجرى على الطلاق على قلبه وحرك لسانه من غير تلفظ يسمع لا يقع
وفي” البخارى” (2/793) وقال عقبة ابن عامر لايجوز طلاق الموسوس
وفي”البدائع”(4/332) عدم الشك من الزوج في الطلاق وهو شرط الحكم بوقوع الطلاق حتى لوشك فيه لا يحكم بقوعه
وفي”البحر الرائق”(3/410) فقد أفاد أن ركنه شرعا اللفظ الدال على إزالة حل المحلية
وفي”الدر المختار”(4/435) بأن أراد التكلم بغير الطلاق فجرى على لسانه الطلاق أو تلفظ به غيرعالم بمعناه أو غافلا أو ساهيا أو بألفاظ مصحفة يقع قضاء فقط
وفي ” التاتارخانية”(2/379) لو تنفس ولو نوى الطلاق لا يقع
وفي” مجمع الأنهر”(1/157) حتى لوأجرى الطلاق على قليه وحرك لسانه من غير تلفظ يسمع لايقع
وفي”كتاب النوازل”(9/131) الجواب: اگر محض دل میں طلاق دی ہے تو اس کا شرعا کوئ اعتبار نہیں ہے اور بیوی کی عدم موجودیکی میں اگر زبان سے بیوی کی جانب نسبت کر کے طلاق دی مثلا یوں کہا کہ اس کو طلاق یا میری بیوی کو طلاق تو ایسی صورت میں طلاق واقع ہو جائے گی.
وفی” جامع الفتاوی”(10/135) سوال : اگر کسی کو محض خیال دل میں پیدا ہو کہ اگر میں دوسری شادی کروں تو اس پر تین طلاق یا میں بکر سے بات کروں تو بیوی کو طلاق یا وہم ہو جائے کہ منہ سے”طلاق دی” کا لفظ نکل رہا ہے اس صورت میں اس کی بیوی پر طلاق ہوگی یا نہیں؟ جواب: مذکورہ صورتوں میں سے کسی صورت میں طلاق نواقع نہین ہوگی، اور محض بر سبیل تذکرہ “طلاق دی ” کھنے سے جب کہ اس کی نیت بیوی کو طلاق دینے کی نہ ہو طلاق نہ ہو گی
وفي راجع أيضا في”الدر المختار”(4/412) و”التاتارخانية”(4/377) و”رد المحتار”(2/309) و”فتاوى دار العلوم ديوبند”(9/34‘ 9/81) و” جامع الفتاوى”(10/129-135) و”فتاوى محمودية (18/120) انتهى ، والله أعلم با لصواب