বরাবর,
ফতোয়া বিভাগ, আল-জামি’আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়া, পোরশা, নওগাঁ।
বিষয়: তালাক ও জিহারের ওয়াসওয়াসা প্রসঙ্গে।
প্রশ্ন: আসসালামু আলাইকুম হুজুর। আমি অনেক দিন ধরে খুব পেরেশানিতে আছি তালাকের ওয়াসওয়াসার জন্য আমাকে একটু সাহায্য করেন। আমি একদিন একা বসে থাকার সময় আমার অহেতুক কল্পনা আসে যে আমার স্ত্রী মনে হয় নেশা করে। সে কিন্তু আমার সামনে ছিলো না। আমি আমার কল্পনায় আমার স্ত্রীকে বলি তুমি কি নেশা করো? স্ত্রী বলে হ্যাঁ। তখন আমার মনে তালাক শব্দটা আসে। তারপর আমি সাথে সাথে সন্দেহের ভিতর পড়ে যাই। যে আমি তালাক মনে মনে বল্লাম না মুখে উচ্চারন করলাম তা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমি কিছুতেই নিশ্চিত হতে পারিনি যে আমি মনে মনে বল্লাম না মুখে উচ্চারন করলাম। কিন্তু আমি নিজ কানে কোন শব্দ শুনতে পাইনি। এবং জিহবা বা ঠোঁট নাড়ানোর অনুভূতি পাইনি। আর আমার স্ত্রী নেশা করে না। এবং সে আমার সামনে ছিলো না। সব আমার অহেতুক কল্পনা। এখন এতে কি কোনো তালাক হবে? । এই রকম বেশ কিছু ঘটনা আমার সাথে ঘটেছে কিন্তু আমি একবারও নিশ্চিত হতে পারিনি যে, আমি মনে মনে বল্লাম না মুখে উচ্চারন করলাম। এতে কি কোনো তালাক হবে? একদিন একা বসে থাকার সময়। আমার স্ত্রী কিন্তু বাড়ি থেকে বের হয় না কিন্তু একদিন একটু বাড়ি থেকে বেপর্দায় বের হয়। তারপর থেকে আমার মাথায় ওটা বারবার ঘুরতে থাকে কেন সে বাড়ি থেকে বের হলো। তারপর আমি অনেকবার মনে মনে তালাক দিবো বলি। এটা আমি না বলার জন্য চেষ্টা করতেছি কিন্তু কিছুতেই থামাতে পারছিলাম না। তো আমি এমন ভাবে কথা গুলো বলছিলাম যে যাতে তালাক না হয়ে যায়। এমন করতে করতে হঠাৎ আমি স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে ঠোঁট না খুলে শুধু জিহবা নাড়িয়ে বলি যে তুমি (স্ত্রী) যদি বেপর্দায় বাড়ি থেকে বের হও তাহলে তোমার আর আমার মধ্যেকার সম্পর্ক শেষ হবে। কোন শব্দ আমি নিজ কানে শুনতে পাই নাই। কোন শব্দ হয়নি। এখন এতে কি কোনো তালাক হবে? আমার স্ত্রী কে নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমার তালাকের কোন নিয়ত নেই। তবুও সবসময় আমার মাথায় শুধু তালাক শব্দ টা বারবার আসে। সবকিছুতেই শুধু তালাক আমার মনে আসে। কিছুতেই আমি এ চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি না। এখন আমি কি করবো? তারপর একদিন লুৎফর রহমান ফরায়েজী মানে আহলে হক মিডিয়ায় প্রশ্নটা পাঠাই উত্তর আসে সব ওয়াসওয়াসা। কোন তালাক হয়নি। আবার এখন আমার জিহার নিয়ে ওয়াসওয়াসা হচ্ছে। আমার স্ত্রীর নাম সুমাইয়া একদিন তাকে সুমাইয়া ডাকার সময় মা সুমাইয়া আমার মনের মধ্যে আসে। তারপর আমি সন্দেহের ভিতর পড়ে যাই যে আমি এটা মনে মনে বল্লাম না ঠোঁট না খুলে শুধু জিহবা নাড়িয়ে বল্লাম। তা নিশ্চিত হতে পারছিলাম না। এতে কি কোনো জিহার হবে? তারপর এটা আমি মনে মনে বল্লাম না ঠোঁট না খুলে শুধু জিহবা নাড়িয়ে বল্লাম তা বুঝার জন্য আমি ঠোঁট না খুলে শুধু জিহবা নাড়িয়ে মা সুমাইয়া বলি। এটা আমি জিহার করার উদ্দেশ্য করে বলিনি। আমি আগে এটা বলছিলাম কিনা এটা বুঝার জন্য ট্রাই করছি। এতে কি কোনো জিহার হবে? হুজুর দয়া করে আমাকে একটা পরামর্শ দেন। আলহামদুলিল্লাহ আমরা সুখে শান্তিতে আছি। কিন্তু এই টেনশন টা আমাকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। আর আমার স্ত্রী এই সম্পর্কে কিছুই জানে না। এখন আমি কি করবো দয়া করে একটু পরামর্শ দেন। আমি রিমন ইসলাম ঠিকানা দিনাজপুর।
নিবেদক
মুহা: রিমন ইসলাম।
দিনাজপুর।
بسم الله الرحمن الرحيم،حامدا و مصليا و مسلم
সমাধান:প্রশ্নোক্ত বিবরণ অনুযায়ী আপনার স্ত্রীর উপর তালাক ও জিহার কোনটিই কার্যকর হয়নি। কেননা তালাক ও জিহার কার্যকর হওয়ার জন্য স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তালাক ও জিহারের শব্দ মুখে উচ্চারণ করার বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে। শুধু মনে মনে তালাক ও জিহারের শব্দ আসার দ্বারা তা কার্যকর হয় না । অনুরুপ মুখে উচ্চারিত হওয়ার বিষয়টি সন্দেহযুক্ত হলেও তা কার্যকর হয় না। হাদীস শরীফে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা আমার উম্মতের মনে মনে কথা বলা ক্ষমা করে দিয়েছেন যতক্ষণ না সে তা কাজে বাস্তবায়ন করে, কিংবা কথার মাধ্যমে প্রকাশ করে।(বুখারী শরীফ হাদীস-২৫২৮)
উল্লেখ্য, জেনে রাখা উচিত যে, ওয়াসওয়াসা হলো শয়তানের পক্ষ থেকে কুমন্ত্রণা। এর দ্বারা শয়তানের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ঈমানদারকে সর্বক্ষণ চিন্তা পেরেশানিতে আবদ্ধ রাখা। তাই এর প্রতিকার হচ্ছে সেদিকে একেবারেই ভ্রুক্ষেপ না করা, বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করা, তাওবা ইস্তেগফার করা, গুনাহের কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা এবং নিম্নে বর্ণিত দোয়াগুলো বেশি-বেশি পড়া।
أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ (١)
উচ্চারণ: “আউযুবিল্লাহি মিনাশ্ শায়তানির রাজীম”।
(٢) رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَنْ يَحْضُرُونِ ( سورة المؤمن ٩7 -٩٨ )
উচ্চারণ: “রাব্বি আউযুবিকা মিন হামাযাতিশ্ শায়াতীন ওয়া আউযুবিকা রাব্বি আই ইয়াহ্দুরুন”।
(3) آمنت بِاللَّهِ وَ رَسوله
উচ্চারণ: “আমানতু বিল্লাহি ওয়া রাসূলিহি”।
الاحالة الشرعية على المطلوب
قوله تعالى : وإما ينزغنك من الشيطان نزغ فاستعذ بالله إنه سميع عليم.(سورة الأعراف-200)-
أخرج الإمام البخارى في” صحيحه “(برقم 2528) عن أبى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إن الله تجاوز عن أمتى ما وسوست به صدورها مالم تعمل أوتتكلم
أخرج الإمام مسلم في” صحيحه “(برقم 134) عن أبى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يزال الناس يتساءلون حتى يقال هذا خلق الله الخلق فمن خلق فمن وجد من ذلك شيئا فليقل أمنت بالله
وفي” الهداية”(2/409) والظهار كان طلاقا في الجا هلية فقرر المشروع اصله ونقل حكمه الى تحريم موقت بالكفارة غير مزيل النكاح
وفي “الهندية” (1/563) أما ركن الظهار هو قوله لامرأته انت على كظهر امى أو ما يقوم مقامه في افادة معناه كذافي النهاية
وفي ” البدائع “(5/7) أما ركن الظهار فهو لفظ الدال على الظهار والأصل فيه قول الرجل لامرأته أنت على كظهر امى يلحق به قوله أنت على كظهر امى– انتهى ، والله أعلم بالصواب