আল জামি'আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা

কেনায়া শব্দের দ্বারা তালাক প্রসঙ্গে

বরাবর,
ফতোয়া বিভাগ, আল-জামি‘আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়া,পোরশা,নওগাঁ।
বিষয়: কেনায়া শব্দের দ্বারা তালাক প্রসঙ্গে।
প্রশ্ন: আসসালামু আলাইকুম। হুজুর আমি রোজিনা কুমিল্লা থেকে ।একটি মাসআলা জানতে চাই। হুজুর আমি বিবাহিত ৮ বছরের সংসার।আমার ছেলের বয়স পাঁচ বছর।আমার ছেলে হওয়ার পর থেকে আমার যোনি পথে সমস্যা অনুভব করি।ফলাফল হলো আমি আমার স্বামীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে পারি না।আমার খুব কষ্ট হয়। পাঁচ বছরের মধ্যে আমাকে কোন চিকিৎসা করাইনি।আর সে প্রতিনিয়ত আমার সাথে থাকতে চায়। আমার কষ্ট হয় বলে আমি দিতে চাই না। এক পর্যায়ে রেপের মতো করে আমার সাথে থাকে।এই বিষয় নিয়ে আমার সাথে প্রায় প্রতিদিনই ঝগড়া ঝামেলা হয়।তবে শেষ ৪/৫ মাস আগে আমি শয়তানের ধোঁকায় একটি পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িয়ে যাই।২/৩ মাস লুকিয়ে থাকলেও গেল এক মাস যাবত আমার পরিবার ও আমার স্বামী সব জেনে যায়। এটা নিয়ে তার সাথে আমার কয়েকদিন যাবত অনেক কথা কাটাকাটি হয়।সে আমাকে বারবার জিজ্ঞাসা করেছে, তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না? আমি বলেছি,না। তুমি কি অন্য কাউকে ভালোবাসো? আমি বলেছি,হ্যাঁ।তুমি কি আমার সাথে থাকতে চাও না?আমি বলেছি,না। তুমি কি আমাকে আর তোমার সাথে সহবাস করতে দিবা না? আমি বলেছি,না।এই সকল কথা নিয়েই আমাদের মাঝে ঝামেলা হচ্ছিল।এক পর্যায়ে সে আমাকে রাগের মাথায় স্পষ্ট বলতেছে,{ঠিক আছে,তুমি যাকে ভালোবাসো তুমি তার কাছে চলে যাও।আমি তোমাকে সারা জীবনের জন্য মুক্ত করে দিলাম।}
এই কথা সে আমাকে ৪/৫ বার বলেছে।এমনকি সে আজ সকালেও আমাকে ২/৩বার বলেছে। তার মনে কি ছিল আমি জানিনা। তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে কি বলবে তাও জানিনা। আমাদের বিবাহ নিয়ে আমার শ্বশুরবাড়ির লোকের অনেক আপত্তি ছিল।এখনো আছে। আমি আমার শ্বশুর বাড়িতে এখনো নিরাপদ নই।পান থেকে চুন খসলেই আমাকে গালাগালি করা তাদের নিত্য দিনের রুটিন।অনেক শারীরিক অত্যাচার ও আমি সহ্য করেছি। আমার স্বামী শ্বশুরবাড়ি সবকিছু মিলিয়ে আমি আমার জীবনে অতিষ্ঠ।অনেকবার নিজে নিজের প্রাণ দিতে গিয়েও আল্লাহ বাঁচিয়েছেন।সন্তান ও আমার পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে এখন পর্যন্ত অনেক ধৈর্য ধরেছি। আমার মনে হচ্ছে আর ধৈর্য ধরতে পারছি না।
এখন আমার জানার বিষয় হচ্ছে,
১) উপরোল্লেখিত ১ম প্যারাগ্রাফের বক্তব্য বিবেচনায় আমার স্বামীর এই কথার দ্বারা কি আমাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে? হয়ে গেলে এখন আমার করণীয় কি?
২) আমার জীবন নিয়ে আমি রীতিমত সারভাইভ করছি।আমার স্বামী আমাকে টাচ করলে আমি একদম সহ্য করতে পারি না। তার উপর থেকে আমার মন একেবারে উঠে গেছে।আমি তাকে ও আমার পরিবারকে আমার এই শারীরিক ও মানুষিক অবস্থা একাধিকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি।কিন্তু আমার পরিবার আমার কথায় তেমন রেসপন্স করছে না।আমার স্বামী আমাকে ছাড়বে না আর আমি তার সাথে থাকবো না।আমাদের মাঝে দিন দিন ঝামেলা বেড়েই চলেছে।আল্লাহ না করুন আমার কাছে মনে হয় এভাবে চলতে থাকলে নিজের সাথে খারাপ কিছু করে ফেলতে পারি।এই অবস্থায় ইসলাম আমাকে কি নির্দেশ দেয় ? আবার বাচ্চারা চাইলে আমি যেভাবে থাকি সেভাবে আমার সাথে থাকতে পারে।না হলে তার বাবার সাথেও থাকতে পারে আমার কোন দাবি নেই।আমি শুধু তার থেকে মুক্তি চাই। আশা করি দলিল ভিত্তিক আমাকে একটি সিদ্ধান্ত জানিয়ে বাধিত করবেন।
নিবেদক
মোসাঃ রোজিনা
بسم الله الرحمن الرحيم،حامدا ومصليا ومسلما-
সমাধান: প্রশ্নোক্ত বিবরণ যদি সঠিক হয়ে থাকে তাহলে রাগের অবস্থায় স্বামী কথাটি বলার কারণে আপনার উপর এক তালাকে বায়েন কার্যকর হয়েছে এবং আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে শুধু এক তালাকে বায়েনই থাকবে।পরবর্তীতে বলার কারণে নতুন করে আর কোন তালাক কার্যকর হয়নি।কারণ বায়েন তালাকের পর আর বায়েন তালাক কার্যকর হয় না। এখন যদি উক্ত স্বামীর সাথে ঘর সংসার সম্ভব না হয় তাহলে আপনি চাইলে ইদ্দত পালনের পর অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবেন।আর যদি ঐ স্বামীর সাথেই বৈধভাবে সংসার করতে চান তাহলে নতুন করে মোহর ধার্য করে দু’জন উপযুক্ত সাক্ষীর সামনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে।
প্রকাশ থাকে যে যদি আপনারা পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তাহলে স্বামী পরবর্তীতে শুধু দু’তালাকের অধিকারী থাকবে। ভবিষ্যতে কখনো যদি দুই তালাক দিয়ে দেয় তাহলে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে যাবে।সুতরাং ভবিষ্যতে তালাক প্রদানের ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক থাকতে হবে।
উল্লেখ্য,আত্মহত্যা করা মারাত্মক কবিরা গুনাহ। এটি এমন একটি গুনাহ,যার পরে আর কখনো তওবা করার সুযোগ থাকে না এবং গুনাহরত অবস্থায় মৃত্যু ঘটে,যার পরিণতি অনেক ভয়াবহ।তাই এ ধরনের ক্ষতিকর কাজের চিন্তাভাবনা থেকে অবশ্যই বেঁচে থাকতে হবে।

الاحالة الشرعية على المطلوب-
في” ردالمحتار” (٤/٥٢٢) والثالث (أنت حرة) يتوقف عليها في حالة الرضاء فقط ويقع في حالة الغضب ومذاكرةالطلاق بلا نية
وفيه أيضا (٤/٥٢٠) ( أنت حرة) أي:لبراءتك من الرق أو من رق النكاح
وفي” درالمختار”(٤/٥٣١) لا يلحق البائن البائن
وفي”بدائع الصنائع”(٤/٤٧٩) فصل في حكم الطلاق البائن…. هو نقصان عدد الطلاق وزوال الملك أيضا حتى لا يحل له وطؤها إلا بنكاح جديد…. ولا يحرم محرمة غليظة حتى يجوز له نكاحها من غير أن تتزوج بزوج آخر لأن ما دون الثلاثة وإن كان بائنا فإنه يوجب زوال الملك لا زوال حل المحلية
وفي” فتاوي دارالعلوم ديوبند” (٩/٤٨٤) سوال: ایک شخص نے اپنی بیوی کو غصہ میں پہلی مرتبہ یہ کہا کہ تم مجھ سے ازاد ہو اور دوسری مرتبہ کہا کہ جاؤ تم مجھ سے اور تیسری مرتبہ کہا کہ مجھ سے ازاد ہو اس صورت میں کون سی طلاق واقع ہوگی؟جواب: اس صورت میں بندہ کے نزدیک طلاق بائنہ اس شخص کی زوجہ پر واقع ہوئی..انتهى، والله أعلم بالصواب

 

ফতোয়া প্রদান করেছেনঃ
মুফতি আব্দুল আলিম সাহেব (দা.বা.)
নায়েবে মুফতী-ফতোয়া বিভাগ
আল জামিয়া আল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা, নওগাঁ ।

Scroll to Top