আল জামি'আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা

ওয়াসওয়াসা ব্যক্তির তালাক প্রসঙ্গে

বরাবর,
ফতোয়া বিভাগ, আল-জামি’আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়া,পোরশা,নওগাঁ।
বিষয়: ওয়াসওয়াসা ব্যক্তির তালাক প্রসঙ্গে।
প্রশ্ন: মাননীয় মুফতী সাহেব হুজুর, আসসালামু আলাইকুম, আশা করি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। আমি আপনার কাছে একটি সমস্যা শেয়ার করছি এবং আশা করছি আপনি আমার সমস্যাটি বুঝবেন। ঘটনাটি ২০১৬ সালের যখন আমার এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয় তখনকার। একদিন আমি আমার ঘরে শুয়ে আহলে হক মিডিয়া নামক ওয়েবসাইটে তালাক বিষয়ে একটি আর্টিকেল পড়ি।(https://ahlehaqmedia.com/যত বিবাহ করবে সব বিবাহই তালাক)

এই লিংকের আর্টিকেলটা পড়ি। এই আর্টিকেলে এক ব্যক্তি একটি বিশেষ ঘটনার প্রেক্ষিতে তালাক বিষয়ে একটি কসম কাটে। লেখাটির শিরোনাম এরকম ছিল (“যত বিবাহ করবে সব বিবাহই তালাক” শব্দে কসমকারী কিভাবে বিবাহ করবে?) তো এই লেখাটি পড়ার পর আমার কেনো জানি মনে হতো আমিও কসমকারী লোকটির মতো তালাক বিষয়ে ঐ ধরনের কথা বললাম কিনা! এভাবে কয়েকদিন চলতে লাগল। তখন বিষয়টাকে স্বাভাবিক ওয়াসওয়াসা হিসেবেই ভাবতে লাগলাম। এর কিছুদিন পর অনলাইনে একজন আলেমের সূরা আদ দূহার তেলাওয়াত শুনতে পেলাম। তেলাওয়াতটি ভালো লাগায় মাঝে মধ্যেই ঐ আলেমের মতো করে উচ্চারণ করার চেষ্টা করতাম। তখনও মাথায় তালাক বিষয়ে উপরে বর্ণিত বিষয়টি ঘুরপাক খেতো। তো একদিন নামাজের উদ্দেশ্যে মসজিদে গমন করি এবং মসজিদের বাইরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে মুখ ও ঠোট নাড়াচাড়া করতে থাকি। এরপর অজু করার জন্য অজু করার নির্দিষ্ট জায়গায় উত্তর দিকে মুখ করে বসি এবং ঠোট ও জিহ্বা নাড়তে থাকি এবং সম্ভবত সুরা আদ দুহা নিজ কানে শুনতে পাওয়া যায় না এমন ভাবে পড়তে থাকি (সম্পূর্ণ সূরা অথবা প্রথম কয়েকটি আয়াত পড়েছি), এরপর পূর্ব দিকে থুথু নিক্ষেপ করি এবং মনে মনে জিহ্বা ও ঠোট না নেড়ে শয়তানের উদ্দেশ্যে বলি এখন ওয়াসওয়াসা (ধোঁকা) দাও দেখি(মনে মনে শয়তানের উদ্দেশ্যে এই কথা বলার কারণ হচ্ছে যেহেতু আমি তালাক বিষয়ে উপরে বর্ণিত কসমকারী লোকটির মতো ঐ ধরনের কোনো কথা বলি নাই সেহেতু আমি ভাবছিলাম শয়তান আমাকে এ বিষয়ে ওয়াসওয়াসা বা ধোঁকা দিতে পারবে না)। তারপর কেন জানি মনে হলো তালাক বিষয়ে উপরে বর্ণিত কসমকারী লোকটির মতো কিছু বললাম কিনা? মনে মনেই বললাম না আমি এধরনের কোন কথাই বলেনি। এরপর অজু করে মসজিদে প্রবেশ করার পর আমি যে সূরা আদ দুহা পড়েছি সেটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য কয়েকবার সূরা আদ দুহা পড়লাম। এরপর নামাজ পড়ে মোনাজাতে আল্লাহর কাছে ভুল ত্রুটি মাফ চেয়ে বাড়িতে চলে আসলাম। এরপর থেকেই আমি এই দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগছি আমিও কসমকারী ঐ লোকটির মতো তালাক বিষয়ে ঐ ধরনের কথা বললাম কিনা? কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমি ঐ ধরনের কথা কখনই বলিনি। কিন্তু মনে দ্বিধা দ্বন্দ্ব চলতেই আছে কথাটি বললাম কি বললাম না? এই দ্বিধা দ্বন্দ্বের কারণে আমি তারপর থেকে খাওয়ার পূর্বে যে দোয়া এবং মসজিদে প্রবেশের,বের হওয়ার ইত্যাদির দোয়া জোরে জোরে বলি এই ভয়ে আস্তে বললে না জানি কসমকারী লোকটির মতো কথাটি বলে ফেললাম কিনা। আশা করি শায়েখ আমার সমস্যাটি বুঝতে পেরেছেন এবং এ বিষয়ে একটি সমাধান দিবেন। ইদানিং এই দ্বিধা দ্বন্দ্বের কারণে আমার বুকে সমস্যা হচ্ছে। (বলে রাখা প্রয়োজন ধর্মীয় বিষয়ে আমি অদ্ভূত কিছু দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগি বাস্তবতার নিরিখে যার এক পয়সারও মূল্য নেই এবং মানুষ এগুলো জানলে নিশ্চিত আমাকে পাগল বলবে।) *সংযুক্তি: বুকে ব্যাথা হওয়ায় বিষয়টি বাবা মায়ের সাথে শেয়ার করি ও একজন ডাক্তারের কাছে যাই এবং এ বিষয়ে তাকে বলি, তিনি যে ঔষধ লিখে দেন তা খেতে থাকি। তারপর দীর্ঘ কয়েক বছর তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। তবে ইদানিং কিছুদিন ধরে আবার সেই পুরনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। বিষয়টি আমার কাছে অসহনীয় লাগছে। বলে রাখা ভালো পূর্বে আমার মারাত্মক ওয়াসওয়াসার সমস্যা ছিল, এখনো আছে তবে সেটা আগের মতো নয়। আশা করি সম্মানিত শায়েখ আমার সমস্যাটি অনুধাবন করতে পেরেছেন। এখন শায়েখদের কাছে আমার আমার জানার ইচ্ছা উপরোক্ত কারণে ভবিষ্যতে আমার বিয়ের ক্ষেত্রে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোনো সমস্যা হবে কিনা, দ্বীনী ভাই হিসেবে আমাকে জানাবেন। বিস্তারিত জানালে উপকৃত হতাম।
নিবেদক
মোঃ রাজিব হোসাইন
ঠিকানা: ধামরাই,ঢাকা
بسم الله الرحمن الرحيم،حامدا و مصليا و مسلما-
সমাধান: প্রশ্নোক্ত বিবরণ অনুযায়ী ভবিষ্যতে আপনার বিয়ের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হবে না এবং আপনার স্ত্রীর উপর কোন তালাক কার্যকরও হবে না। কেননা তালাক কার্যকর হওয়ার জন্য তালাকের শব্দ মুখে উচ্চারণ করার বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে নিশ্চিত হতে হয়। শুধু মনে মনে তালাকের শব্দ আসা বা তালাকের বিষয়টি মাথায় ঘুরপাক খাওয়ার দ্বারা তালাক কার্যকর হয় না। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা  আমার উম্মতের ওয়াসওয়াসা তথা মনে মনে কথা বলা ক্ষমা করে দিয়েছেন যতক্ষণ না সে তা কাজে বাস্তবায়ন করে কিংবা কথা বলে। (সহীহ বুখারী,হাদীস নং-২৫২৮) সুতরাং আপনি নিশ্চিন্তে থাকেন যে, প্রশ্নোক্ত চিন্তা-ভাবনা ও ওয়াসওয়াসার কারণে শরয়ীভাবে আপনার কোনো সমস্যাই সৃষ্টি হয়নি।
জেনে রাখা উচিত যে, ওয়াসওয়াসা হলো শয়তানের পক্ষ থেকে কুমন্ত্রণা। এর দ্বারা শয়তানের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ঈমানদারকে সর্বক্ষণ চিন্তা পেরেশানিতে আবদ্ধ রাখা। এর প্রতিকার হচ্ছে সেদিকে একেবারেই ভ্রুক্ষেপ না করা, বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করা, তাওবা ইস্তেগফার করা, গুনাহের কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা, এবং নিম্নে বর্ণিত দোআগুলো বেশি বেশি পড়া।
أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ (١)
উচ্চারণ: “আউযুবিল্লাহি মিনাশ্ শায়তানির রাজীম”।
(٢) رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَنْ يَحْضُرُونِ ( سورة المؤمن ٩7 -٩٨ )
উচ্চারণ: “রাব্বি আউযুবিকা মিন হামাযাতিশ্ শায়াতীন ওয়া আউযুবিকা রাব্বি আই ইয়াহ্‌দুরুন”।
(3) آمنت بِاللَّهِ وَ رَسوله
উচ্চারণ: “আমানতু বিল্লাহি ওয়া রাসূলিহি”।

 

الاحالة الشرعية على المطلوب
قال الله تبارك وتعالى: “وإما ينزغنك من الشيطان نزغ فاستعذ بالله انه سميع عليم”۝ (سورة الاعراف-200)أخرج الإمام البخاري رح في “صحيحه” (برقم ٢٥٢٨ ) عن ابي هريرة رضي الله عنه قال قال النبي صلى الله عليه وسلم إن الله تجاوزعن امتي ما وسوست به صدورها ما لم تعمل او تتكلم
أخرج الإمام مسلم رح في “صحيحه” (برقم ١٣٤) عن أبي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يزال الناس يتساءلون حتى يقال هذا خلق الله الخلق فمن خلق الله فمن وجد من ذلك شيئا فليقل امنت بالله
وفي “حاشيه الطحطاوي على مراقي الفلاح”(٢١٩) لو جرى الطلاق على قلبه وحرك لسانه من غير تلفظ يسمع لا يقع
وفي “رد المحتار” (٦ /٤٦ ) وقال الليث الوسوسة حديث النفس وإنما قال موسوس لأنه يحدث بما في ضميره وعن الليث لا يجوز طلاق الموسوس
وفي “البخاري” ٢( / ٧٩٣) وقال عقبة بن عامر لا يجوز طلاق الموسوس
وفي”الاشباه والنظائر”(١٩٦) ومنها شك هل طلق ام لا لم يقع
وفي”بدائع الصنائع”( ٤/٣٣٢) عدم الشك من الزوج في الطلاق وهو شرط الحكم بوقوع الطلاق حتى لو شك فيه لا يحكم بقوعه. ،انتهى والله أعلم بالصواب

ফতোয়া প্রদান করেছেনঃ
মুফতি আব্দুল আলিম সাহেব (দা.বা.)
নায়েবে মুফতী-ফতোয়া বিভাগ
আল জামিয়া আল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা, নওগাঁ ।

 

শেয়ার করুন !!
Scroll to Top