আল জামি'আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা

ওয়াসওয়াসা ব্যক্তির তালাক প্রসঙ্গে

শেয়ার করুন !!

বরাবর,
ফতোয়া বিভাগ, আল জামিআ‘তুল আরাবিয়া দারুল হিদায়া পোরশা,নওগাঁ।
বিষয়: তালাক প্রসঙ্গে।
প্রশ্ন: আমি একজন বিবাহিত, আরও আমার ওয়াস ওয়াসার রোগ আছে, ডাক্তারি ভাষায় ওসিডি বলে, আর আমার ওয়াসওয়াসা নিয়ে আগেও কিছু হুজুরদের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছে, তাও আমার একটা সমস্যা সমাধান হলে আরেকটা শুরু হয়ে যায়, কি যে করব, আমি স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন কিভাবে করব, আমাকে পরামর্শ দেন। এখন ঘটনা বলি, আমি গত কালকে সন্ধ্যায় শুয়েছিলাম, তখন হঠাৎ করেই একটা কিনায়া বাকা মনে আশে, তুমি এক এমন বাক্য, কারন আমি কিনায়া বাক্য কোনগুলো তা অনেকটাই জানি (মাসআলা জানা আছে) তো এরপর থেকেই শুরু হয় সন্দেহ, মানে হুজুর ওয়াসওয়াসা এত খারাপ আমার একটা সমস্যা, শেষ হলেই আরেকটা শুরু হয়, এমন লাগে কেউ আমাকে এইগুলো করাই বা আমাকে একটা বদ অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছে, আমি নানান কথা দিয়ে বুঝার চেষ্টা করি। যেহেতু শোয়া অবস্থায় এমন হয়ছে, তাই অইভাবেই আমি উচ্চারণ করেছি কিনা? একটা % বলি, তাও বুজতে সুবিধা হবে (aslike 50%/50% possibilityboth side) হয়ত বলেছি, একটু ঘুমের ঘোরেও ছিলাম। আবার হয়ত বলিনাই। এখন নিশ্চিত বললে তো এত সন্দেহ হতনা বলছি কি বলিনাই, আমার কি করা উচিত। হুজুর এইটা নিয়া ভাবা উচিত নাকি ওয়াসওয়াসার রোগি যেহেতু, ওয়াসওয়াসা ভেবে বাদ দিয়ে দেওয়া উচিত। আরও, এইটা কিনায়া বাক্য, তাই যখন মনে এইটা আশে আমার মনে কি আবার তালাক এর নিয়ত ছিল কিনা? আল্লাহ ভাল জানে। কারন ওয়াসওয়াসার জন্য যদি কখনো নিয়ত হয়েও থাকে, বলা মুস্কিল যে,ওয়াসওয়াসার জন্য তা ছিল, নাকি আসলেই নিয়ত ছিল। কিন্তু আমার বউকে নিয়ে আমি সুখে আছি। আলহামদুলিল্লাহ, তো কেন আমার তালাকের নিয়ত আসবে মনে, আপনারা  তো জানেনি ওয়াসওয়াসার রোগি বা ওসিডি রোগিদের এইসব চিন্তা করা লাগেনা একটা পর একটা আসতেই থাকে । সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত আমাকে একটা সমাধান দেন হুজুর একটু শান্তিতে থাকতে চাই। আরও বিস্তারিত বলি, হুজুর আমি সন্ধ্যায় ঘুম থেকে উঠার সাথে সাথে এমন চিন্তা মনে আশে যে, তুমি এক এমন বাক্য, তো কিনায়া তালাকের নিয়তে বললে  সমস্যা হয়ে যাবে। তো আমার এমন চিন্তা বা ওয়াসওয়াসাকে কি নিয়ত ধরা হবে, কারন আমি ধরলাম কিছুক্ষনের জন্য, বললাম এমন বাক্য, কিন্তু পরিপূর্ণ নিশ্চিত না আদও মনে তালাকের নিয়ত ছিল, কারণ আমি নিশ্চিত সন্ধ্যায় ঘুম ভাঙ্গার পরেই এমন চিন্তা শুরু হয়, তো তখনের এমন চিন্তাকে কি নিয়ত ধরা হবে। আর আমি তো বল্লামি আমার ওয়াসওয়াস রোগ আছে। এখন আমি কি সমাধান নিব ওয়াসওয়াসা ভেবে বাদ দিয়া দেব? নাহলে আপনি আমাকে একটা সমাধান দেন। হুজুর আমার বৈবাহিক জীবনে তালাক সংক্রান্ত কোন সমস্যা হয়নাই তো?
আর এই বাক্যটা বলছি বা বলিনাই কোন দিকেই প্রবল ধারনা হচ্ছেনা মনে। হে এমন যে, বলছি নিশ্চয়তা বেশি, বা বলিনাই ওইটার নিশ্চয়ইতা বেশি, কোন দিকেই বেশি জাচ্ছেনা। আমি আজকে ১/২ বার মুখের ভিতরে তুমি এক/ তুমি বল, এইভাবে বলার try করে বুঝার চেষ্টা করি যে আদোও বলছি নাকি এতে একটু শব্দ বা আওয়াজ হয়ছে হয়ত। কিন্তু তা মুখের বিতরে সাধারণ ভাবে মুখ দিয়ে উচ্চারন করলে যেই শব্দ বা আওয়াজ হয় তা কিন্তু না, তো এতে কোন সমস্যা নাই তো?
নিবেদক
মুহা. শাফিন আহমেদ
بسم الله الرحمن الرحيم،حامدا و مصليا و مسلما-
সমাধান: প্রশ্নোক্ত বিবরণ অনুযায়ী আপনার স্ত্রীর উপর কোন তালাকই কার্যকর হয়নি। কেননা তালাক কার্যকর হওয়ার জন্য তালাকের শব্দ মুখে উচ্চারণ করার বিষয়টি পরিপূর্ণ নিশ্চিত হতে হয়। শুধু মনে মনে তালাক দিলে বা তালাক দেওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি হলেই তালাক কার্যকর হয় না। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা  আমার উম্মতের ওয়াসওয়াসা তথা মনে মনে কথা বলা ক্ষমা করে দিয়েছেন যতক্ষণ না সে কাজে বাস্তবায়ন করে কিংবা কথা বলে।(বুখারী শরীফ হাদীস নং-২৫২৮) জেনে রাখা উচিত যে, ওয়াসওয়াসা হলো শয়তানের পক্ষ থেকে কুমন্ত্রণা। এর দ্বারা শয়তানের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ঈমানদারকে সর্বক্ষণ চিন্তা পেরেশানিতে আবদ্ধ রাখা। এর প্রতিকার হচ্ছে সেদিকে একেবারেই ভ্রুক্ষেপ না করা, বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করা, তাওবা ইস্তেগফার করা, গুনাহের কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা, এবং নিম্নে বর্ণিত দোয়া গুলো বেশি বেশি পড়া।
(١) اعوذ بالله من الشيطان الرجيم
(٢) رب اعوذبك من همزات الشياطين واعوذبك رب ان يحضرون  ( سورة المؤمن ٩7 -٩٨ )
(3) امنت بالله ورسوله

  الاحالة الشرعية على المطلوب
قال الله تعالى في “القران الكريم” واما ينزغنك من الشيطان نزغ فاستعذ بالله انه السميع عليم۝ (سورة الاعراف200)
اخرج الامام البخاري في صحيحه برقم ٢٥٢٨ عن ابي هريرة رضي الله عنه قال النبي صلى الله عليه وسلم ان الله تجاوز عن امتي ما وسوست به صدورها ما لم تعمل او تتكلم
اخرج الامام مسلم في صحيحه برقم ١٣٤ ابي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يزال الناس يتساءلون حتى يقال هذا خلق الله الخلق فمن خلق الله فمن وجد من ذلك شيئا فليقل امنت بالله
وفي حاشيه الطحطاوي على مراقي الفلاح٢١٩ لو جرى الطلاق على قلبه وحرك لسانه من غير تلفظ يسمع لا يقع
وفي رد المحتار ٦ /٣٤٦ وقال الليث الوسوسه حديث النفس وانما قال موسوس لانه يحدث بما في ضميره وعن الليث لا يجوز طلاق الموسوس
وفي البخاري ٢ / ٧٩٣ وقال عقبه بن عامر لا يجوز طلاق المسوس
وفي الاشباه والنظائر١٩٦ ومنها شك هل طلق ام لا لم يقع
وفي بدائع صنائع ٤ / ٣٣٢ عدم الشك من الزوج في الطلاق وهو شرط الحكم بوقوع الطلاق حتى لو شك فيه لا يحكم بوقوعه. إنتهى ، والله أعلم با لصواب

ফতোয়া প্রদান করেছেনঃ
মুফতি আব্দুল আলিম সাহেব (দা.বা.)
নায়েবে মুফতী-ফতোয়া বিভাগ
আল জামিয়া আল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা, নওগাঁ ।


শেয়ার করুন !!
Scroll to Top