ফতোয়া বিভাগ, আল-জামি’আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়া, পোরশা, নওগাঁ।
বিষয়: তালাক প্রসঙ্গে।
প্রশ্ন: আসসালামুআলাইকুম হুজুর, আমি তালাক সংক্রান্ত বিষয় ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত.! আমি এই বিষয় খুব বেশি পেরেশানিতে আছি, দুশ্চিন্তায় আছি এবং ভয়ে আছি। আমি এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে চাচ্ছি। বাট আমি এর থেকে বের হতে পারছি না, উল্টো এর মধ্যে আরো বেশি ডুবে যাচ্ছি। কথা বলতে ভয় পাই, স্ত্রীর সাথে কথা বলতে ভয় লাগে, আম্মুর সাথে কথা বলতে ভয় লাগে, মানুষ এর সাথে কথা বলতে ভয় লাগে। যাই বলি মনে হয় আমি ওইগুলো মিন মিন করে বলছি বা ওই রকম কিছু বলছি। এই রকম মনে হয় সব সময়। দিনের ২৪ টা ঘণ্টার মধ্যে যতক্ষণ জেগে থাকি ততক্ষণ শুধুএই চিন্তাই মাথায় ঘোরে। এমন কি এখন ঘুমের মধ্যেও এই চিন্তাই আসে, ঘুম থেকে জেগে জোরে জোরে বলি, না না না ইনশাআল্লাহ। আর যাই কাজ করি না কেনো এখন শুধু এই কথাই মনে পড়ে আর মনে পড়ে। মনে হয় নিজের অজান্তেই মুখ থেকে ওই সব কিছু বলে ফেলছি। মনে হয় নিজের অজান্তেই আমার স্ত্রী হারাম হয়ে গেছে আমি মনে হয় এখন হালাল সম্পর্কে নাই। এমন সব কিছু মাথায় ঘোরে সারাদিন, নানা ধরনের আজেবাজে চিন্তা মাথায় ঘুরতে থাকে সব সময়।আমি নিজেও অনেক সময় নিজের বুঝ খুঁজে পাই যে এমন কিছু হয় নাই, আবার এরপরে নিজেই আবার অন্য রকম দুশ্চিন্তা করি। সন্দেহ সৃষ্টি হয় মনের মধ্যে। হায় আল্লাহ, আমি আবার নিজের অজান্তেই হারাম সম্পর্কে আছি কিনা। আমার মালিকানা সব শেষ হয়ে গেছে কিনা এমন সব চিন্তা আসে মাথায় সারাদিন। আমার জীবনের সুখ শান্তি সব নষ্ট করে দিচ্ছে এই বিষয়ের চিন্তাগুলো। আমার মনের মধ্যে অনেক চিন্তা আসে এই বিষয়ে, শর্তযুক্ত বা শর্ত ছাড়া আমি সব সময় না না না ইনশাআল্লাহ বলি জোরে জোরে। এরপরে জোরে জোরে বলি যে, না দেই নাই, দিমুনা, কোনদিনও দিমুনা, সারাজীবন দুইজন একসাথে থাকবো ইনশাআল্লাহ, কখনোই দিমুনা, কোনো সমস্যা নাই ইনশাআল্লাহ, হবে না ইনশাআল্লাহ ইত্যাদি। এমনকি আমি যে স্পষ্ট ভাবে বলছি দেওয়ার কথা এমনটাও আমি কানে শুনি নাই এবং মনেও পরে না। আর এই সব কথা আমি জোরে জোরে বলি নাই মনে আসলে তখন জোরে বলি যে, না না না ইনশাআল্লাহ। সরীহ বা কেনায়া একটাও আমি উচ্চারণ করি নাই জোরে বাট জোরে জোরে না বলি। আমি পড়তে পারি না খাইতে পারি না সব কিছুতেই এই দুশ্চিন্তা আর না না না ইনশাআল্লাহ বলি জোরে জোরে। বাথরুমে গেলে সেইখানেও জোরে জোরে বলি যে, না না না ইনশাআল্লাহ। নামাজ পড়তে গেলে সেইখানেও তাসবিহ বাদ দিয়ে বলি যে, না না না ইনশাআল্লাহ, বা লা লা লা ইনশাআল্লাহ। এমনই সব কার্যকলাপ হচ্ছে আমার সাথে দিন দিন। আমি সিওরও থাকি অনেক সময় যে আমি মুখ লড়িয়ে বা উচ্চারণ করে কিছুই বলি নাই। আবার মনে হয় যে আমি হয় তো মুখ লড়িয়েছি। তাই না না না ইনশাআল্লাহ এমন বলি। এক প্রকার পাগল এর মতো হয়ে গেছি আমি। হাসি না কারো সাথে কথা বলি না তেমন। কেমন যেনো হয়ে গেছি আমি। আমার যতটুকু খেয়াল আছে আমি এই সব শব্দ কানে শুনি নাই এমন কিছু,,, আলহামদুলিল্লাহ্, এমনকি আমি এমন কিছু জোড়েও বলি নাই দিছি বা দিলাম কোনো টাই জোরে বলি নাই, আমার শুধু মনে আসে শর্তযুক্ত শব্দ। বাট আমি এই গুলো ইচ্ছা করে আনি না এবং আনতেও চাই না এবং মুখে মুখে না না না ইনশাআল্লাহ বলি। এখন আমার চিন্তার বিষয় হলো আমি ভুলে নিজের অজান্তে ঠোঁট লড়িয়ে বলছি কিনা এই সন্দেহ মনের মধ্যে কাজ করে। আমি কি করতে পারি এখন? আমার স্ত্রী কি আসলেই হারাম হয়ে গেছে নাকি এখনো আমাদের হালাল সম্পর্কই আছে? এইযে শর্ত যুক্ত শব্দ আসে মনে এতে কি কোনো কিছু হয়েছে কিনা। যেমন, আমি এইটা করলে ওই শব্দ টা মনে আসে, বা এইটা না করলে ওই শব্দটা মনে আসে, বা ও অমুক কাজ করলে বা না করলে ওই শব্দ টা মনে আসে। বাট আমি সবসময় না না না ইনশাআল্লাহ বলি বা না এর পক্ষে থাকি, আমি এই গুলা কখনোই দেওয়ার নিয়ত করি নাই বা করিও না। কিন্তু অনেক সময় নিজের বিরুদ্ধে গিয়ে এই সব জিনিস মনে আসে। এর জন্য কি কোনো সমস্যা আছে বা হয়েছে.??????? এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে, ১. উক্ত বর্ণনা অনুপাতে কি কোনো সমস্যা আছে আসলেই.? ২. আমার মনে যে বাক্য গুলা আসে এতে কি কোনো সমস্যা আছে.? ৩. আমি যে মনে মনে আসা শব্দ গুলোর জন্য না না না ইনশাআল্লাহ বলছি, নামাজে, বাথরুমে এবং যখনি কোনো শব্দ মনে আসে তখন যে এইগুলা বলছি এতে কি সমস্যা হইছে.? যদিও মনে আসা শব্দগুলো আমি জোরে জোরে উচ্চারণ করি নাই কিন্তু না না না ইনশাআল্লাহ এমন কিছু কথা জোরে জোরে বলছি. এর হুকুম কি? এর কারণে কি কোনো সমস্যা হইছে.? ৪. আমার মনে যে সন্দেহ আসছে বা আছে এই গুলার জন্য কি আমাদের কোনো সমস্যা আছে সর্ম্পকে.? ৫. আমার মালিকানা কি আগের মতই আছে, নাকি আমার মালিকানা সব শেষ হয়ে গেছে.? ৬. এইগুলা কি আমার ওয়াসওয়াসা আক্রান্ত রোগীর সব লক্ষণ? ৭. আর আমি শুনেছি যে ,ওয়াসওয়াসা আক্রান্ত ব্যক্তি যদি এই সব শব্দ উচ্চারণ করে তাহলেও নাকি কোনো কিছু হয় না.? এখন আমি যদি নিজের অজান্তে ঠোঁট লড়িয়ে বলেও ফেলি তাহলে কি সেইটা কার্যকর হইছে বা হবে.? ৮. আমার মনে শুধু যে শর্তযুক্ত শব্দ আসে যদিও আমি ওইগুলা বলতে চাই না বা মনে আনতেও চাই না এর কারণে কি কোনো সমস্যা আছে.? ৯. আমি এই রোগ থেকে কিভাবে মুক্তি পেতে পারি এইটা একটু অনুগ্রহ করে বলবেন প্লিজ…..??? আশা করি প্রতি টা প্রশ্নের জবাব দিবেন, আমি খুব দুশ্চিন্তায় আছি অনুগ্রহ করে উত্তর গুলো দিবেন প্লীজ।
নিবেদক
মুহা:নাঈম।
بسم الله الرحمن الرحيم،حامدا و مصليا و مسلما-
সমাধান: প্রশ্নোক্ত বিবরণ অনুযায়ী আপনার স্ত্রীর উপর কোন তালাকই কার্যকর হয়নি। কেননা তালাক কার্যকর হওয়ার জন্য স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তালাকের শব্দ মুখে উচ্চারণ করা আবশ্যক। শুধু মনে মনে তালাকের শব্দ আসার দ্বারা তালাক কার্যকর হয় না। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা আমার উম্মতের মনে মনে কথা বলা ক্ষমা করে দিয়েছেন যতক্ষণ না সে তা কাজে বাস্তবায়ন করে, কিংবা কথার মাধ্যমে প্রকাশ করে। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং-২৫২৮) অতএব আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক পূর্বের মতই বহাল রয়েছে। প্রশ্নে উল্লিখিত যে সকল বক্তব্য মুখে উচ্চারণ করেছেন এর কোনটির দ্বারাই তালাক কার্যকর হয় না। আর প্রশ্নের মধ্যে অনেকগুলো বিবরণ রয়েছে যা স্পষ্টভাবে ওয়াসওয়াসার রোগীর লক্ষণ। তাই আপনি একজন ওয়াসওয়াসার রোগী। ওয়াসওয়াসা হল শয়তানের পক্ষ থেকে কুমন্ত্রণা । এর দ্বারা শয়তানের উদ্দেশ্য হচ্ছে ঈমানদারকে সর্বক্ষণ চিন্তা পেরেশানিতে আবদ্ধ রাখা । এর প্রতিকার হচ্ছে সেদিকে একেবারেই ভ্রুক্ষেপ না করা,বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করা, তাওবা ইস্তেগফার করা, গুনাহের কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা, এবং নিম্নে বর্ণিত দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়া।
(1) أعوذ بالله من الشيطان الرجيم
(2) رب أعوذبك من همزات الشياطين وأعوذبك رب أن يحضرون (سورة المؤمن-97-98)
(3) أمنت بالله ورسوله
الاحالة الشرعية على المطلوب
قوله تعالى في سورة الأعراف: وإما ينزغنك من الشيطان نزغ فاستعذ بالله إنه سميع عليم**أخرج الإمام البخارى في” صحيحه “(برقم 2528) عن أبى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إن الله تجاوز عن أمتى ما وسوست به صدورها مالم تعمل أوتتكلم
أخرج الإمام مسلم في” صحيحه “(برقم 134) عن أبى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يزال الناس يتساءلون حتى يقال هذا خلق الله الخلق فمن خلق فمن وجد من ذلك شيئا فليقل أمنت بالله
وفي”حاشية الطحطاوى على مراق الفلاح”(219) لوجرى على الطلاق على قلبه وحرك لسانه من غير تلفظ يسمع لا يقع
وفي” البخارى” (2/793) وقال عقبة ابن عامر لايجوز طلاق الموسوس
وفي”البدائع”(4/332) عدم الشك من الزوج في الطلاق وهو شرط الحكم بوقوع الطلاق حتى لوشك فيه لا يحكم بقوعه- انتهى ، والله أعلم بالصواب