বরাবর,
ফতোয়া বিভাগ, আল-জামি’আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়া,পোরশা,নওগাঁ।
বিষয়: আল ওয়ালা ওয়াল বারা প্রসঙ্গে।
প্রশ্ন: মাননীয় মুফতী সাহেব হুজুর, আসসালামু আলাইকুম ওরহমাতুল্লহ। সম্মানিত ওলামায়ে কেরামের কাছে গভীর শ্রদ্ধার সহিত বিনীত প্রশ্ন হলো – (আল ওয়ালা ওয়াল বারা) বন্ধুত্ব রাখা এবং শত্রুতা পোষণ করার নীতিমালা কি? এবং মুসলমানদের অভ্যন্তরীণ যে কোন সংঘর্ষ, বিরোধিতা, মতানৈক্য কি এই নীতিতে চালানো যাবে? যেমন দ্বীনি কোন প্রতিষ্ঠান (মসজিদ মাদরাসা মারকাজ ইত্যাদি) নিয়ে দুই দল মুসলমানদের বিরোধিতা বা দুনিয়াবী কোন জিনিস বা প্রতিষ্ঠান নিয়ে দুই দল মুসলমানদের বিরোধিতা। এসব দ্বীনি বা দুনিয়াবী যে কোন বিরোধিতায় কোন মুসলমান ব্যক্তি বা দল তার বিরোধী ব্যক্তি বা দলকে উদ্দেশ্য করে কি এটা বলার অধিকার আছে যে, আমি আল্লাহর জন্য ওই ব্যক্তি বা দলের সাথে শত্রুতা পোষণ করি?
নিবেদক
মুহা.আলম
بسم الله الرحمن الرحيم،حامدا و مصليا و مسلما-
সমাধান: “আল ওয়ালা” তথা বন্ধুত্বের মৌলিক মানদন্ড হচ্ছে ঈমান ও ইসলাম। আর “আল বারা” তথা শত্রুতার মৌলিক মানদন্ড হচ্ছে শিরক ও কুফর। একজন মুসলমানের ঘনিষ্ঠতা ও অন্তরঙ্গতা হবে শুধু মুসলমানের সাথেই। কোন মুসলমানের জন্য অমুসলিম,কাফের,মুশরিক,নাস্তিকদের সাথে ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব,হৃদ্যতা ও অন্তরঙ্গতার সম্পর্ক রাখা বৈধ নয়। পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে:“হে মুমিনগণ! মুসলিমদের ছেড়ে কাফেরদেরকে বন্ধু বানিয়ো না। তোমরা কি আল্লাহর কাছে নিজেদের বিরুদ্ধে (অর্থাৎ নিজেদের শাস্তিযোগ্য হওয়া সম্পর্কে) সুস্পষ্ট প্রমাণ দাঁড় করাতে চাও?” (সূরা নিসা-১৪৪) অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে:“মুমিন নর ও মুমিন নারী একে অন্যের বন্ধু। তারা সৎকাজে আদেশ করে,অসৎকাজে বাধা দেয়,নামাযে পাবন্দি করে,যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে। এদের প্রতি অবশ্যই আল্লাহ রহমত বর্ষণ করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী,প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা-৭১)
অন্যত্র আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন: “হে মুমিনগণ! তোমরা যদি আমার পথে জিহাদের উদ্দেশ্যে এবং আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য (ঘর থেকে) বের হয়ে থাকো তাহলে আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে এমন বন্ধু বানিও না যে,তাদের কাছে ভালোবাসার বার্তা পৌঁছাতে শুরু করবে,অথচ তোমাদের কাছে যে সত্য এসেছে তারা তা (এমনই) প্রত্যাখান করেছে (যে) রাসূলকে ও তোমাদেরকে শুধু এই কারণে মক্কা থেকে বের করে দিচ্ছে যে, তোমরা তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ তাআলার প্রতি ঈমান এনেছ। তোমরা গোপনে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব কর,অথচ তোমরা যা কিছু গোপনে কর এবং যা কিছু প্রকাশ্যে কর আমি তা ভালভাবে জানি। তোমাদের মধ্যে কেউ এমন করলে সে সরল পথ হতে বিচ্যুত হল।” (সূরা মুমতাহিনা-১)
আর কোন মুসলমানের মধ্যে যদি দ্বীনি বিষয়ে কোনো গোমরাহী বা বিদআত পাওয়া যায় তাহলে তার থেকে বারাআত অর্থাৎ বিচ্ছিন্নতা বা ঘৃণা হবে তার গোমরাহী,পাপ ও বিদআত অনুপাতে। তবে কোন গোমরাহ,পাপী মুসলমানকে তার গোমরাহী ও পাপের কারণে একজন কাফেরের ন্যায় পরিপূর্ণ ঘৃণা ও সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে না। ঈমানের কারণে তার প্রতি ভালোবাসাও থাকবে আবার গোমরাহী ও পাপাচারের কারণে তার কর্মকাণ্ডের প্রতি ঘৃণাও থাকবে। তবে দ্বীনি গোমরাহী ছাড়া দুনিয়াবী স্বার্থে কোন মুসলমানের প্রতি ঘৃণা ও শত্রুতা পোষণ করা সম্পূর্ণ অবৈধ। পার্থিব স্বার্থে মুসলমানদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ-কলহ,মতানৈক্য,বিরোধিতা উম্মাহর মারাত্মক ক্ষতির কারণ। সুতরাং এ উদ্দেশ্যে দ্বীনী-দুনিয়াবী কোন প্রতিষ্ঠান বা বস্তু নিয়ে দুই দল মুসলমানদের দলাদলি বা বিরোধিতা বৈধ হবে না। এক্ষেত্রে কোন মুসলমান ব্যক্তি বা দল তার বিরোধী ব্যক্তি বা দলকে উদ্দেশ্য করে এটা বলার অধিকার নেই যে, আমি আল্লাহর জন্য ঐ ব্যক্তি বা দলের সাথে শত্রুতা পোষণ করি। তবে যদি কোন ব্যক্তি বা দলের মাঝে বাস্তবেই দ্বীনি গোমরাহী পাওয়া যায় তাহলে দ্বীনি গোমরাহীর কারণে উক্ত ব্যক্তি বা দলকে আল্লাহর জন্য ঘৃণা করার ও শত্রুতা পোষণ করার বিধান রয়েছে। তখন এটি হাদীসে বর্ণিত “البغض في الله” এর অন্তর্ভুক্ত হবে।
উল্লেখ্য, কাফের মুশরিকদের সাথে হৃদ্যতা ও ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব গড়তে যেমন ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে অনুরূপ তাদের সাথে ভদ্রতা,সৌজন্যমূলক আচরণ, নিরাপত্তাদান, ধর্ম পালনের স্বাধীনতাসহ সকল হক ও অধিকার আদায়েরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আর গোমরাহ ও পাপাচারী মুসলমানের কর্মকাণ্ডের প্রতি যেমন ঘৃণা পোষণ করতে বলা হয়েছে অনুরূপ ঈমানের কারণে তার প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন ও তার সকল হক আদায়ের কথাও বলা হয়েছে। এটি ইসলামের বাস্তবসম্মত ইনসাফপূর্ণ ভারসাম্যরক্ষার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
الاحالة الشرعية على المطلوب
قال الله تبارك وتعالى: “يآايها الذين امنوا لا تتخذوا الكفرين اولياء من دون المؤمنين ط اتريدون ان تجعلوا لله عليكم سلطانا مبينا”.[النساء-144]
وقال الله تبارك وتعالى: “والمؤمنون والمؤمنات بعضهم اولياء بعض”-[التوبة-71]
وقال الله تبارك وتعالى: يآايها الذين امنوا لا تتخذوا عدوى وعدوكم اولياء تلقون اليهم بالمودة وقد كفروا بما جاءكم من الحق يخرجون الرسول واياكم ان تؤمنوا بالله ربكم إن كنتم خرجتم جهادا في سبيلي وابتغاء مرضاتي تسرون اليهم بالمودة ق وانا اعلم بما اخفيتم وما اعلنتم ومن يفعله منكم فقد ضل سواء السبيل.[ممتحنة-1]
وقال الله تبارك وتعالى: “قد كان لكم اسوة حسنة في ابراهيم والذين معه اذ قالوا لقومهم انا براءؤا منكم ومما تعبدون من دون الله ز كفرنا بكم وبدا بيننا وبينكم العداوة والبغضاء ابدا حتى تؤمنوا بالله وحده”. [ممتحنة-4]
وفي”عون المعبود”(8/62) عن أبي عن رسول الله صلى الله عليه وسلم انه قال من احب لله وابغض لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان الشرح (من احب) أي شيئا او شخصيا فحذف المفعول (لله) أي: لاجله ولوجهه مخلصا لا لميل قلبه ولا لهواه (وابغض لله) أي: لا لإيذاء من ابغض له بل لكفره وعصيانه (واعطى لله) أي: لثوابه ورضاه لا لنحو رياء (و منع لله)أي: لامر الله كان لم يصرف الزكاه لكافرين لخسته ولا لهاشمي لشرفه بل لمنع لله لهما منها
وفي تحفه الأحوذي(٧/٣٥) وان يحب المرء لا يحبه لغرض و عوض ولا يشوب محبته حظ دنيوي ولا امر بشر بل محبته تكون خالصا لله تعالى فيكون متصفا بالحب في الله وداخلا في المتحابين لله
وفي فتاوى دار العلوم ديوبند (١٦/٤٣٧) سوال: کافر سے ترک موالات جائز ہے مگر مسلمان سے ترک موالات کر سکتا ہے یا نہیں؟ الجواب: کفراور فسق کی وجہ سے ترک موالات ہوتی ہے اور اس میں تفصیل اور درجات ہیں
وايضا (١٦/٤٦٢) الجواب: صلحاء اور نیک لوگوں سے اللہ کے واسطے محبت رکھنا حب في اللہ ہے اور ظالموں فاسقوں سے بہ سبب ان کے ظلم ومعصیت کے دل میں بغض رکھنا بغض فی اللہ ہے، افراد ناس میں اسی کے موافق یہ حکم جاری ہوگا جب تک کوئی فاسق معلم اپنے فسق سے توبہ نہ کرے اور آثر توبہ ظاہر نہ ہوں اس وقت تک اس سے اس فعل معصیت کی وجہ سے بغض رکھے جس وقت توبہ اس کی ظاہر ہو اور آثار توبہ معلوم ہوں اس وقت بغض نہ رکھے،انتهى والله أعلم بالصواب