প্রশ্নঃ জনাব মুহতারাম, আসসালামু আলাইকুম। যথাবিহীত সম্মান প্রদর্শন পূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারী তালাক সংক্রান্ত একটি বিধান জানতে আগ্রহী। অনুগ্রহপূর্বক সঠিক সমাধান জানিয়ে চিরকৃতজ্ঞ করবেন।
ওলি উল্লাহ তার স্ত্রীর নিকট কাজী অফিস থেকে কাজীর মাধ্যমে বি-তালাক নোটিশ প্রেরণ করেন বারো দিন আগে। নোটিশে লেখাছিল ’কারণ সমূহ উল্লেখ করার পর’ আমার পক্ষে বৈবাহিক সম্পর্ক ঠিক রাখা সম্ভব নহে। বিধায় কাজী অফিসে উপস্থিত হইয়া 2 নং বি বহিতে স্বাক্ষর ও তালাক প্রদান করিয়া অত্র নোটিশ জারি করলাম। ইহা আপনার সদয় অবগতির জন্য প্রেরিত হইল।এই নোটিশে ওলি উল্লাহ স্বাক্ষর এবং টিপসহি দেয়। কিন্তু নোটিশে স্বাক্ষর দেওয়ার আগে অলিউল্লাহ নোটিশটি পড়েনি।
তার জানা ছিল এটা তিন মাসের একটি প্রক্রিয়া, উক্ত নোটিশটি আরো দুই মাসে দুইটি পাঠাতে হবে, আর এটাই নিয়ম, কাজী সাহেব বলেছেন। এই তিন মাসের মধ্যে চাইলে তালাক প্রত্যাখ্যান করতে পারবে। তিন মাস পর সম্পূর্ণ তালাক হবে, এটা হয়তো এক তালাক হবে,এটা ওলি উল্লাহর স্বাক্ষরের আগের ধারণা ছিল।
সে মুখে কিছু বলেনি শুধু স্বাক্ষর করেছেন। এমতবস্থায় অলিউল্লার স্ত্রীর উপরে শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে তালাক পতিত হয়েছে? নোটিশটি বারোদিন আগে পাঠিয়েছেন,এখন কি ওলি উল্লাহ তার স্ত্রীকে গ্রহণ করতে পারবে? দলিল সহকারে অবগত করলে কৃতজ্ঞ থাকবো।
প্রশ্নকারীঃ শাহ অলিউল্লাহ
بسم الله الرحمن الرحيم ، حامداومصليا
উত্তরঃ প্রশ্নোক্ত বিবরণ যদি সত্য হয়ে থাকে এবং তালাকের ফরমে কোথাও লিখিতভাবে বা মৌখিকভাবে তিন তালাকের কথা উল্লেখ না করে থাকে তাহলে প্রশ্নোত্তর ক্ষেত্রে অলিউল্লাহর স্ত্রীর ওপর এক তালাকে রজয়ী কার্যকর হয়েছে। তালাক কার্যকর হওয়ার জন্য এক্ষেত্রে অলিউল্লাহর স্বাক্ষরটিই যথেষ্ট, নোটিশ পড়া জরুরী নয়। এছাড়া শরীয়তের আলোকে শর্তহীন তালাক প্রদানের সাথে সাথে তা কার্যকর হয়ে যায়। আর তালাক কার্যকর হওয়ার পর তা কখনো প্রত্যাখ্যান করা যায় না।
আর এখন যদি ওলি উল্লাহ পুনরায় সুষ্ঠরূপে ঐ স্ত্রীর সাথে ঘর সংসার করতে চায় তাহলে , ওলি উল্লাহর স্ত্রীর ইদ্দত শেষ হওয়ার পূর্বেই অর্থাৎ ঋতুমতী হলে তিনটি ঋতু আর গর্ভবতী হলে সন্তান প্রসব হওয়ার পূর্বেই স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করতে হবে যেমন এভাবে বলতে পারে যে, আমি তাকে স্ত্রী হিসাবে ফিরে নিলাম অথবা স্বামী-স্ত্রী সুলভ আচরণ করলেও পূর্বের স্ত্রী হিসেবে বহাল থাকবে; তবে ইদ্দত শেষ হয়ে গেলে নতুন সূত্রে মহর ধার্য করত দুইজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিবাহ করতে হবে ।
প্রকাশ থাকে যে, স্ত্রীকে ইদ্দতের মধ্যে ফিরিয়ে নেওয়া হোক বা ইদ্দত শেষে নতুন বিবাহ করা হোক; উভয় অবস্থায় ওলি উল্লাহ কেবল মাত্র দুই তালাকের অধিকারী হবেন। তাই পরে কখনো ঐ স্ত্রীকে দুই তালাক দিলেই সে ওলি উল্লাহর জন্য সম্পূর্ণরূপে হারাম হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে এভাবে পুনরায় বিবাহ করলেও ঘর-সংসার করা বৈধ হবে না।
উল্লেখ্য, শরীয়তের দৃষ্টিতে তালাক খুবই অপছন্দনীয় ও গর্হিত কাজ। তাই এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত; অতি প্রয়োজন ছাড়া তা প্রয়োগ করা কিছুতেই বাঞ্ছনীয় নয়; যদি কখনো তালাক দিতেই হয়, তাহলে পরামর্শ অনুযায়ী এক তালাকের বেশি দেওয়া উচিত নয়; তাও শান্ত পরিবেশে রাগের পরিবেশে নয় ।
الإحالة الشرعية علي المطلوب
في “ردالمحتار” 4\442 وإن كانت مستبينة لكنها غيرمرصومة إن نوى الطلاق يقع وإلالا وإن كانت مرصومة يقع الطلاق نوى أو لم ينوى
——————————————–
وفي “حاشية الطحطاوى على الدر”2\111 وإن كانت مرصومة يقع الطلاق نوى أو لم ينوى
——————————————–
وفي ” الهند ية ” 1\446 رجل إستكتب من رجل آخر إمرأته كتابا بطلاقها وقرأ على الزوج فأخذه وطواه وختم وكتب في عنوانه فإن الطلاق يقع عليها
———————————————-
و في” الهداية ” 2\374 إذا طلقالرجل إمرأته تطليقة رجعية أو تطليقتين فله أن يراجعها في عدتها رجيت بذلك أو لم ترض — وفيه أيضا 2/306 ولا ينعقد نكاح المسلمين إلابحضورشاهدين حرين عاقلين بالغين– والله اعلم بالصواب
ফতোয়া প্রদান করেছেনঃ
মুফতি আব্দুল আলিম সাহেব (দা.বা.)
নায়েবে মুফতী, ফতোয়া বিভাগ, আল জামিয়া আল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ – পোরশা, নওগাঁ ।