বরাবর,
ফতোয়া বিভাগ, আল-জামি’আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়া,পোরশা,নওগাঁ।
বিষয়: স্ত্রী থেকে তালাকের কসম নেওয়া প্রসঙ্গে।
প্রশ্ন: মাননীয় মুফতী সাহেব হুজুর,আমি আমার স্ত্রী কে কসম দিয়ে বলতে বলি যে,আল্লাহর কসম দিয়ে বলো তুমি আর এই কাজটা করবা না, করলে আমাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যাইবে। পরে স্ত্রী আল্লাহ কসম দিয়ে বলে। পরে দুইদিন পর আবার আমি অনুমতি দেই কাজটা করার। এখন প্রশ্ন হলো সত্যি কি আমার ছাড়াছাড়ি বা তালাক হয়ে যাবে ? বি.দ্র.,,,কথাটা আমি আমার স্ত্রী কে কসম দিয়ে বলাইছি। আবার আমিই অনুমতি দিছি। এতে সত্যি আমার ওরে তালাক দেওয়া উদ্দেশ্য ছিল না। আরেকটা বিষয় আমাদের প্রায় ঝগড়া হয়। ঝগড়ার সময় কত কথায় হয় আমার। মনে সন্দেহ হয় আমি ওরে কোনোদিন ছেড়ে দিলাম বলছি কি না। সঠিক মনে নাই। এতে কি তালাক হবে। আরেকদিন ঝগড়ার সময় আমি ওরে ফোনে শুধু তালাক তালাক দুবার বলছিলাম। বলিনি যে তোমারে তালাক দিলাম বাহ দিছি। পরে আবার সাথে সাথে বলি নাহ হয়নি। দয়া করে জানাবেন আমাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ঠিক আছে কি না ?
নিবেদক
রাজীব
بسم الله الرحمن الرحيم،حامدا و مصليا و مسلما-
সমাধান: প্রশ্নোক্ত বিবরণ যদি সঠিক হয়ে থাকে তাহলে আপনার স্ত্রীকে ঝগড়ারত অবস্থায় তালাক তালাক শব্দ দুইবার বলার কারণে আপনার স্ত্রীর উপর দুই তালাকে রজয়ী কার্যকর হয়েছে। আর যদি আপনার বক্তব্য “তুমি আর এই কাজটা করবা না,করলে আমাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যাইবে” বাক্য দ্বারা আপনার কসমই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে এবং আপনার স্ত্রী কাজটি করেও থাকে তাহলে আপনার স্ত্রীর উপর নতুনভাবে আর কোন তালাক কার্যকর হয়নি; বরং পূর্বের দুই তালাকই বহাল থাকবে। অবশ্য কসম ভঙ্গ করার কারণে আপনার স্ত্রীর উপর কসমের কাফফারা আদায় করা আবশ্যক। কসমের কাফফারা হল,দশজন গরীব মিসকিনকে দু‘বেলা তৃপ্তিসহ খানা খাওয়ানো অথবা দশটি সদকায়ে ফিতির দেওয়া অথবা তাদের প্রত্যেককে এক জোড়া করে কাপড় দেওয়া। এসবের সামর্থ্য না থাকলে একাধারে তিনটি রোযা রাখা।
প্রকাশ থাকে যে, দুই তালাক বলার পর আপনি যদি আপনার স্ত্রীকে ইদ্দতের মধ্যেই ফিরিয়ে নিয়ে থাকেন বা স্ত্রীর সাথে স্বামী-স্ত্রী সুলভ আচরন করে থাকেন তাহলে ঐ স্ত্রী পূর্বের স্ত্রী হিসেবে বহাল থাকবে। আর যদি ইদ্দতের মধ্যে ফিরিয়ে না নিয়ে থাকেন এবং আপনার স্ত্রীর ইদ্দত এখনও বাকী থাকে তাহলে ইদ্দতের মধ্যে মৌখিকভাবে ফিরিয়ে নিলে বা স্ত্রীর সাথে স্বামী-স্ত্রী সুলভ আচরন করলেও পূর্বের স্ত্রী হিসেবে বহাল থাকবে। তবে যদি ইদ্দত শেষ হয়ে যায় তাহলে নতুনভাবে মহর ধার্য করে দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। তবে স্ত্রীকে ইদ্দতের মধ্যে ফিরিয়ে নেওয়া হোক বা ইদ্দত শেষে ফিরিয়ে নেওয়া হোক উভয় অবস্থায় আপনি কেবলমাত্র এক তালাকের অধিকারী হবেন। তাই পরে কখনো ঐ স্ত্রীকে এক তালাক দিলেই সে স্ত্রী আপনার জন্য সম্পূর্ণরূপে হারাম হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে এভাবে পুনরায় বিবাহ করলেও ঘর-সংসার করা বৈধ হবে না।
উল্লেখ্য,শরীয়তের দৃষ্টিতে তালাক খুবই অপছন্দনীয় ও গর্হিত কাজ। তাই এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। অতি প্রয়োজন ছাড়া তা প্রয়োগ করা কিছুতেই বাঞ্চনীয় নয়। যদি কখনো তালাক দিতেই হয়, তাহলে পরামর্শ অনুযায়ী এক তালাকের বেশি দেওয়া উচিত নয়। তাও শান্ত পরিবেশে, রাগের পরিবেশে নয়।
الاحالة الشرعية على المطلوب
قال الله تبارك وتعالى”الطلاق مرتان فامساك بمعروف أو تسريح باحسان” [البقرة-229]
وقال الله تبارك وتعالى”لا يؤاخذكم الله باللغو في أيمانكم ولكن يؤاخذكم بما عقدتم الايمان،فكفارته اطعام عشرة مساكين من اوسط ما تطعمون اهليكم أو كسوتهم أو تحرير رقبة،فمن لم يجد فصيام ثلاثة ايام،ذلك كفارة ايمانكم إذا حلفتم واحفظوا ايمانكم،كذلك يبين الله لكم اياته لعلكم تشكرون”[المائدة-89]
وفي”البحر الرائق”(3/253) ولا يلزم كون الاضافة صريحة في كلامه لو قال :طالق فقيل له من عينت؟فقال:امرأتي طلقت امرأته.لو قال امرأة طالق أو قال طلقت امرأة ثلاثا وقال لم اعن امرأتي يصدق،ويفهم منه أنه لو لم يقل ذلك تطلق امرأته :لأن العادة ان من له امرأة انما يحلف بطلاقها لا بطلاق غيرها
وفي”رد المحتار”(4/444) ) ولا يلزم كون الاضافة صريحة في كلامه كما في البحر، لو قال :طالق فقيل له من عينت؟فقال:امرأتي طلقت امرأته.لو قال امرأة طالق أو قال طلقت امرأة ثلاثا وقال لم اعن امرأتي يصدق،ويفهم منه أنه لو لم يقل ذلك تطلق امرأته :لأن العادة ان من له امرأة انما يحلف بطلاقها لا بطلاق غيرها
وفي”الهندية”(2/66) رجل قال لامرأته:انك فعلت كذا وكذا،فقالت:لم افعل،فقال:إن كنت فعلت انت فأنت طالق،فقالت المرأة:إن كنت فعلت فأنا طالق،قالوا:إن أراد به يمين المرأة لا تطلق المرأة
وفي”رد المحتار”(5/720) الوجه الثاني:أن يريد المبتدئ الاستحلاف والمجيب اليمين على نفسه،فالحالف هو المجيب فقط.
وفي”الدر المختار”(4/431) وأهله زوج عاقل بالغ مستيقظ
**وفي”كنزالدقائق”(132) وينكح مبانته في العدة وبعدها لا المبانة بالثلاث
وفي “الهداية”(2/306) ولا ينعقد نكاح المسلمين إلا بحضور شاهدين حرين عاقلين بالغين مسلمين رجلين أو رجل وامرأتي
وفي”التاتارخانية”(4/400) وفي السراجية: صريح قبل الدخول يكون بائنا وبعد الدخول يكون رجعيا اذا كان بلا مال
وفي”التاتارخانية”(4/400) وفي التجريد: صريح الطلاق رجعى واحدة كانت أو اثنتين
وفی” کتاب النوازل”(9/379) وفی الجواب : صورت مسئو لہ میں دو طلاق رجعی واقع ہو گئی ہیں عدت کے اندر اندر شوہر کو رجعت کا اختیار ہے
وفی” کتاب النوازل”(9/225) الجواب وباللہ التوفیق:اضافت صراحۃ ضروری نہیں ہے،بلکہ اگر دلالۃ اضافت ہو تو بھی طلاق کے وقوع کے لئےکافی ہے
وراجع أيضا في”تنوير الابصار”(5/505) و”كتاب النوازل”(10/286) ،انتهى والله أعلم بالصواب