আল জামি'আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা

শর্তযুক্ত তালাক প্রসঙ্গে

বরাবর,
ফতোয়া বিভাগ, আল জামি’আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়া পোরশা,নওগাঁ।
বিষয়:শর্তযুক্ত তালাক প্রসঙ্গে।
প্রশ্ন: একদিন আমার বউকে শর্ত দিয়ে বলি, তুমি যদি তোমার বাপের বাড়ি যাও তাহলে অটো তালাক। আমার ওয়াইফ সে তার বাবার বাড়ি গিয়েছে। তার কিছু দিন পর কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে বললাম তুমি স্বাধীন, তুমি মুক্ত, যা ইচ্চা করো। তোর /তোমার জন্য সব সময় পথ খোলা। তোমাকে ছেড়ে দিলাম একথা বলছি কী বলি নাই মনে পডে না।  হুজুর বলে রাখা ভালো, তালাকের মাসআলা জানার জন্য আজ প্রায় ৩ মাস গুগল/ইউটিউব ঘাটাঘাটি করেই যাচ্ছি। আমি প্রথম যখন তালাকের মাসআল ঘাটি, তখন আমি অনেক বলেছি যে আমি তোমাকে ছেড়ে দিলাম একথা বলেছি পরে অনেক ভেবে দেখে আমার ছেড়ে দিলাম একথা শতভাগ মনে পড়ে না। অনেক দিন আগের কথা। অনেক খারাপ ব্যবহার করতাম। রাগ করে বলতাম “তুই চলে যা,তুই স্বাধীন,মুক্ত তোর মত মেয়ে আমার দরকার নাই, তোর সাথে সহবাস করবোনা, তোর সাথে সহবাস করা হারাম”। হুজুর এই যে, যা আপনাকে লিখছি কোন কথার ধারাবাহিকতা নাই। এগুলো সামগ্রিক কথা। যা লিখছি তাও ৩ বছরের আগের বলা কথা। কোন প্রেক্ষাপটে কী বলতাম মনে নেই। শুধু কথা গুলো মনে আসতেছে। এরকম কথা হাজার বার বলতাম। এর বাহিরে বউকে বলি, তুমি আমাকে তালাক দাও সে (বউ) বলে আমি তোমাকে তালাক দিলাম। রাগারাগি সময়ে স্ত্রী আমাকে বলে ভালো না লাগলে ছেড়ে দাও? প্রতিউত্তরে আমি বলি তুই তো এটাই চাস। তুই এক্ষনি চলে যা। আমি তোর জন্য রিকশা পাঠায়। আমার বাড়ি তোর জন্য হারাম এসব বলতাম। তুই তো চাইলে বিয়ে করতে পারবি। আমিও মেয়ে পাবো। আরোও কি বলতাম। আরও একটা কথা বলতাম বউ শুধু বাপের বাড়ি যেতে চাইতো, তখন বলতাম একেবারে চলে যাও।
হুজুর সত্য মিথ্যা জানি না। হুজুর যা বলেছি সব অনেক আগের কথা। এটাই ছিল শেষ কথা আমার বউ সব সময় ফোন সাইলেন্ট করে রাখতো তখন তাকে বলি তুমি মানে আমার বউ সে নিজে নিজে বলবে যে আমি মানে আমার বউ বলবে সে যদি ফোনে আবার কোন সময় বা কোন দিন ফোন সাইলেন্ট করে সে নিজেকে বলবে সে অটো তালাক কিন্তু সে এটা বলে নাই। আরো অনেক কথা মনে হয় বলার বাকি, আছে কিন্তু হুজুর আর কোন কিছু মনে পড়ে না। আমার শুধু এটাই ভয় হয় নিজেকে ফাকি দিচ্ছি না তো। আল্লাহর ভয়ে যা মনে আছে তাই বললাম। হুজুর আমি আমার বউয়ের সাথে ভালো ব্যবহার করতাম কিন্তু যখনি কোন কারণে রাগ করতাম, এমন গাল মন্দ করতাম যা কেউ করে না এটা বলার কারণ তালাকের নিয়তে কিছুই বলি না কিন্তু আবোল তাবোল কত কী বলতাম যা আমার এখন মনে নাই। হুজুর অনেক মুফতি মহোদয় কাছে গেলাম, কেউ বলে সম্পর্ক নাই, আবার কেউ বলে, আছে। কেউ বলে ১ তালাক হয়েছে, কেউ বলে ২ তালাক হয়েছে। হুজুর আপনার কাছে আমার সবিনয় আরজ, আমার মাসআলাটা লেখার আগে আমার সাথে যদি পারেন একটু কথা বলে নিবেন। এটা বলার কারণ হলো, আমার বউয়ের সাথে কথা বলার ধরণটা আপনাকে ধারণা দেয়ার জন্য। হুজুর নিচে যা লেখা এগুলো ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সালের কথা। আরও অনেক কিছু বলতাম মনে হয়, বাট স্পেসেপিক আমার বা আমার ওয়াইফ এর মনে নাই। তালাকের মাসআলা অনলাইনে দেখার পর আমার পেরেশানি শুরু। আজ ৩ মাস যাবত পেরেশানিতে আছি হুজুর।
নিবেদক
মুহা: সামির উদ্দিন
بسم الله الرحمن الرحيم،حامدا و مصليا و مسلما-
সমাধান: প্রশ্নোক্ত বিবরণ অনুযায়ী “তুমি যদি তোমার বাপের বাড়ি যাও তাহলে অটো তালাক” আপনার এই বক্তব্যের কারণে স্ত্রীর তালাকটি বাপের বাড়ি যাওয়ার শর্তের সাথে যুক্ত হয়েছে। সুতরাং এই কথা বলার পর আপনার স্ত্রী যদি বাপের বাড়ি গিয়ে থাকে তাহলে আপনার স্ত্রীর উপর শুধুমাত্র এক তালাকে রজয়ী কার্যকর হয়েছে। এরপর যদি আপনারা ইদ্দতের মধ্যে স্বামী স্ত্রী সুলভ আচরণ করে থাকেন তাহলে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক পূর্ণ বহাল হয়ে গেছে এবং আপনাদের স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক বৈধ হিসেবে গণ্য হবে। আর তোমাকে ছেড়ে দিলাম কথাটি বলা- না বলার মাঝে যেহেতু সন্দেহ রয়েছে, তাই এর কারণে কোন তারা কার্যকর হবেনা। কারণ তালাক কার্যকর হওয়ার জন্য শর্ত হল, তালাকের বাক্য উচ্চারণ করার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া। এছাড়া বাকি যতগুলো বাক্য প্রশ্নে উল্লেখ রয়েছে, যেমন তুমি মুক্ত, তুমি স্বাধীন, যা ইচ্ছা কর, তোমার সব পথ খোলা ইত্যাদি এসবগুলো ইঙ্গিত সূচক বাক্য, তালাকের নিয়ত ছাড়া এ ধরনের বাক্য দ্বারা তালাক কার্যকর হয় না। আর আপনার যেহেতু তালাকের নিয়ত ছিল না তাই এ ধরনের বাক্য দ্বারা নতুন কোন তালাক কার্যকর হয়নি। তবে “তোর সাথে সহবাস করা হারাম” এই বাক্য বলার দ্বারা আপনার উপর কসম সংগঠিত হয়েছে। এখন আপনি যদি এই বাক্য বলার পর স্ত্রীর সাথে সহবাস করে থাকেন, তাহলে আপনাকে কসম ভঙ্গের কাফ্ফারা আদায় করতে হবে। আর যদি সহবাস না করে থাকেন, তাহলে সহবাস করার পর কাফফারা দিয়ে দিতে হবে। আর কসমের কাফফারা হলো, দশজন দরিদ্র ব্যক্তিকে দুই বেলা তৃপ্তি সহকারে খাবার খাওয়ানো অথবা দশজন দরিদ্র ব্যক্তিকে এক জোড়া করে কাপড় দেওয়া অথবা একজন কৃতদাস মুক্ত করা (বর্তমানে যেহেতু দাসপ্রথা নেই, তাই এভাবে কাফফারাও দেওয়া যাবে না)। এভাবে কাফফারা আদায় করার সামর্থ্য না থাকলে লাগাতার তিন দিন রোজা রাখতে হবে।
প্রকাশ থাকে যে, আপনি এখন কেবলমাত্র দুই তালাকের অধিকারী হবেন। তাই পরে কখনো আপনি আপনার স্ত্রীকে দুই তালাক দিলেই আপনারা স্ত্রী আপনার জন্য সম্পূর্ণরূপে হারাম হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য শরীয়তের দৃষ্টিতে সাধারণ অবস্থায় তালাক খুবই অপছন্দনীয় ও গৃহীত কাজ তাই এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত অতি প্রয়োজন ছাড়া তা প্রয়োগ করা কিছুতেই বাঞ্ছনীয় নয়।

الاحالة الشرعية على المطلوب
قوله تعالى لا يُؤاخِذُكُمُ اللَّهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمانِكُمْ وَلكِنْ يُؤاخِذُكُمْ بِما عَقَّدْتُمُ الْأَيْمانَ فَكَفَّارَتُهُ إِطْعامُ عَشَرَةِ مَساكِينَ مِنْ أَوْسَطِ مَا تُطْعِمُونَ أَهْلِيكُمْ أَوْ كِسْوَتُهُمْ أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَةٍ فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَصِيامُ ثَلاثَةِ أَيَّامٍ ذلِكَ كَفَّارَةُ أَيْمانِكُمْ إِذا حَلَفْتُمْ وَاحْفَظُوا أَيْمانَكُمْ كَذلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آياتِهِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ﴾(المائدة:٨٩)
وفي الهندية (١/ ٤٨٨) واذا اضافه الى الشرط وقع عقيب الشرط اتفاقا
وفي الدرالمختار(٧/ ٥١٦) والكنايات لا تطلق بها قضاء الا بنية او دلالة الحال  فنحو اخرجي- واذهبي—انت حرة- اختاري
وفي التانارخانية(٤/ ٤٥٧) فالاصل في الفاظ الكنايات الا يقع الطلاق بها الا بالنية
وفي البحر الرايق (٣/ ٥٢٦) وحاصل ما في الخانيه ان من الكنايات ثلاث عشره لا يعتبر فيها دلالة الحال ولا تقع الا بالنيه ومنها خليت سبيلك
وفي التانارخانية(٤/ ٤٦٢) وفي جامع الجوامع لا حاجة لي فيك ونوي لا يقع
وفی احسن الفتاوی (٥/٤٩٥)سوال: ایک شخص نے یوں کہا کہ اگر میرا بھائی اپنی بیٹی کا رشتہ فلاں شخص کو دیدے تو میرا اس جگہ رہنا مجھ پر حرام ہے ، اگر رشتہ ہو گیا اور وہ اسی جگہ رہتا ہے ، اس کے متعلق شریعت کا کیا حکم ہے ؟ بینوا توجروا؟الجواب :یہ الفاظ قسم کے ہیں، اس لئے اس شخص پر قسم کا کفارہ واجب ہے، انتهى والله اعلم بالصواب

ফতোয়া প্রদান করেছেনঃ
মুফতি আব্দুল আলিম সাহেব (দা.বা.)
নায়েবে মুফতী-ফতোয়া বিভাগ
আল জামিয়া আল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা, নওগাঁ ।

শেয়ার করুন !!
Scroll to Top