বরাবর,
ফতোয়া বিভাগ, আল-জামিআ‘তুল আরাবিয়া দারুল হিদায়া, পোরশা, নওগাঁ।
বিষয়:তালাক প্রসঙ্গে।
প্রশ্ন: আমাদের রিলেশনের বিয়ে,আমার স্বামীর বয়স ২০ বছর,ওর কোন ইসলামিক জ্ঞান নেই, ও ভেবেছে মন থেকে তালাক না দিলে এবং এসএমএস’ তালাক দিলে তালাক হয় না,ভাবতো ভয় দেখানোর জন্য/শাসন করার জন্য তালাক দেওয়া যায়, তাই সামান্য একটা কারণে সে বিয়ের ৮ দিনের মাথায় আমাকে এসএমএসে ১ বার তালাক দেয় ভয় দেখানোর জন্য, আমি সেটা আমার ফ্যামিলিকে জানাইনি,এরপর আমাদের আবার ঠিকমতো কথা চলতে থাকে, এর প্রায় ১ মাস ১০-১৫ দিন পর রাগারাগি করে ও আমায় আবার ২ তালাক দেয় এসএমএসের মাধ্যমে, তখন আমি হায়েজ অবস্থায় ছিলাম, সেদিন আমি আমার ফ্যামিলিকে জানাই, আমার ফ্যামিলি বলে আমাদের নাকি বিচ্ছেদ হয়ে গেছে, ও সেটা কোন ভাবেই বিশ্বাস করে না, ও কান্নাকাটি শুরু করে দেয় আর বলে আমি ভেবেছি মন থেকে তালাক না দিলে তালাক হয় না, ভয় দেখানোর জন্য মনে হয় তালাক দেওয়া যায়, তালাক সম্পর্কে ওকে সঠিকটা বলার পর ও খুব ভয় পেয়ে যায় কান্নাকাটি শুরু করে, তওবা করে আর বলে আমি জানতাম না, আমি আর কোনদিন তালাক মুখেও আনবো না, এটা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছিলো যে ও আসলেই তালাক সম্পর্কে সঠিকটা না যেনেই তালাক দিয়েছে, এরপর আমরা আবার আগের মতই কথা বলতে থাকি, এর কিছুদিন পর ও আমাদের বাড়িতে আসে, আসার পর ওর ফ্যামিলি অনেক লোকজন নিয়ে এসে ওকে ধরে নিয়ে যায়, নিয়ে ওকে বন্দী করে রেখে ওকে প্রতিদিন অনেক মারধোর করে আমাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য, কিন্তু ও কোনভাবেই রাজি হয় না, এমনকি ওকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে মেরে ফেলার উপক্রম করে, তারপরও রাজি হয় না, এভাবে প্রায় টানা ৮-১০ দিন ওকে প্রচুর মারধোর করে ৮-১০ দিন পরে ওকে জোর করে কাজি অফিসে নিয়ে যায়, তালাক দিতে রাজি না হওয়ায় সেখানেও তাকে অনেক মারে, সবশেষে তালাক না দিলে তখনই তাকে সেখানেই মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে তার মুখ থেকে ৩ বার তালাক বের করে সেটা ভিডিও করে আমাকে পাঠায় আর ডিভোর্স পেপারে সই নেওয়ায়, ওদের অত্যাচার দেখে কাজী পর্যন্ত বলে আপনারা যেভাবে তালাক দেওয়াচ্ছেন এভাবেতো তালাক হবে না, এরপর ওরা ওকে আরো কিছুদিন বন্দী রেখে পরে ওকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয় পড়াশুনার জন্য, ও ওখান থেকে পরের দিনই আমার কাছে চলে আসে, তখন থেকে আমরা আবার একসাথে থাকতে শুরু করি (এর মাঝেও ওর ফ্যামিলি ওকে নিয়ে যাওয়ার অনেক চেষ্টা করেছিলো), যদিও আমার একটা রোগের কারনে আমাদের এখনো একবারো শারীরিক মিলন হয়নি,এখন আমরা এক সাথে থাকা কি ঠিক হচ্ছে? আমাদের কি বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েগেছে? দয়া করে জানাবেন
নিবেদক
মুছা. তানিয়া আক্তার
بسم الله الرحمن الرحيم،حامدا و مصليا و مسلما-
সমাধান: প্রশ্নোক্ত বিবরণ যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী আপনার উপর তিন তালাক কার্যকর হয়েছে এবং আপনাদের মাঝে বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে গেছে। তাই এখন আপনাদের এক সাথে থাকা বৈধ নয়। প্রকাশ থাকে যে, জোরপূর্বক মৌখিক তালাক নেওয়ার দ্বারাও ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী তালাক কার্যকর হয়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার স্বামী আপনাকে আর ফিরিয়ে নিতে পারবেন না। তবে তালাকের ইদ্দত শেষ করার পর অর্থাৎ আপনি ঋতুমতি হলে তিনটি ঋতু শেষ করার পর অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবেন। যদি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং দ্বিতীয় স্বামী সহবাস করার পর কোন কারণে তালাক দেন বা মারা যান তাহলে তার ইদ্দত অতিবাহিত হওয়ার পর আপনারা উভয়ে রাযী থাকলে নতুনভাবে দু‘জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে মোহর ধার্য করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবেন।
উল্লেখ্য, শরীয়তের দৃষ্টিতে তালাক খুবই অপছন্দনীয় ও গর্হিত কাজ। তাই এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। অতি প্রয়োজন ছাড়া তা প্রয়োগ করা কিছুতেই বাঞ্চনীয় নয়। যদি কখনো তালাক দিতেই হয় তাহলে পরামর্শ অনুযায়ী এক তালাকের বেশি দেওয়া উচিত নয়। তাও শান্ত পরিবেশে রাগের পরিবেশে নয়।
الاحالة الشرعية على المطلوب
قوله تعالى في سورة البقرة (230) فإن طلقها فلا تحل له من بعد حتى تنكح زوجا غيره
أخرج الإمام مسلم في “صحيحه” (1/475/برقم 1471) من حديث ابن عمر رضي الله عنه طلق امرأته وهى حائض في عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم فسأل عمر ابن الخطاب رسول الله صلى الله عليه وسلم عن ذلك فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم مره فليراجعها ثم ليتركها حتى تطهر
وفي “الهندية ” (1/355) إن كانت طلاق ثلاثا في الحرة او اثنتين في الأمة لم تحل له حتى تنكح زوجا غيره نكاحا صحيحا ويدخل بها ثم يطلقها أو يموت عنها
وفي “البدائع” (4/291) وإن كتب كتابه مرسومة على طريق الخطاب والرسالة مثل أن يكتب أما بعد يا فلانة فأنت طالق أو إذا وصل كتابى إليك فأنت طالق يقع به الطلاق
وفي “الدر المختار”(4/442) المرسومة لا تخلوا أما إن ارسل الطلاق بأن كتب أما بعد فأنت طالق فكما كتب هذا يقع الطلاق وتلزمها العدة من وقت الكتابة وإن علق طلاقها يجئ الكتاب بأن كتب إذا جاءك كتابى فأنت طالق فجئها الكتاب فقراءته أولم تقرأ يقع الطلاق كذا في الخلاصة
وفي “رد المحتار” (4/428) وفي البحر أن المراد الاكراه على التلفظ بالطلاق فلو اكراه على أن يكتب طلاق امرأته فكتب لاطلق
وفي “الدرالمختار”(4/427) ويقع طلاق كل زوج بالغ عاقل ولو عبدا أو مكرها
وفی” فتاوی قاسمیۃ ” (15/113) وفی الجواب: جب شوہر لکھ کر طلاق دے اور اپنے تحریر کا بعد میں اقرار کر ے تو شرعی طور پر ایسی طلاق صحیح اور معتبر ہوجاتی ہے لہذا مذکورہ صورت میں جب لڑکے نے مو بائل پر لکھ كر بيوى كو تين طلاق كا میسج کر دیا اور بیوی کے موبائل پر شوہرکی طرف سے لکھی ہوئی طلاق کا میسج آگیا ہے اور شوہر نے بعد میں زبانی اقرار بھی کیا ہے تو اس سے شرعی طور پر تینوں طلاقیں واقع ہو گئی اب آئندہ بغیر حلالہ دونوں کے درمیان نکاح بھی درست نہ ہو گا. انتهى ، والله أعلم بالصواب