﷽
রজব মাসের গুরুত্ব, ফযিলত ও আমল
الحمد لله رب العلمين- والصلوة والسلام على سيدالمرسلين – وعلى اله واصحا به اجمعين اما بعد فقد قال الله تعالى في كلامه المجيد : انّ عدة الشهور عندالله اثنا عشر شهرا في كتب الله يوم خلق السموت والارض منها اربعة حرم- وقال رسول الله ﷺ ” صُمْ مِنَ الْحُرُمِ وَاتْرُكْ
রজব মাস হলো আরবি সনের সপ্তম মাস। রজব শব্দের অর্থ সম্মানিত।জাহেলি যুগে আহলে আরবরা এ মাসকে অন্য মাসের তুলনায় অধিক সম্মান করত আর এটি চারটি সম্মানিত মাসের (আশহুরুল হুরুম) একটি। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে এই মাসের বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা তুলে ধরা হয়েছে। এই মাস থেকে রমজানের প্রস্তুতি শুরু হয়, তাই এটি মুসলিমদের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ মাস।
রজব মাসের গুরুত্ব :
রজব মাস এটি সম্মানিত মাস হিসেবে স্বীকৃত । এ মাসে যুদ্ধ ও ঝগড়া-বিবাদ জাহিলি যুগেও নিষিদ্ধ ছিল ।
আল্লাহ তাআ’লা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেছেন :
انّ عدة الشهور عندالله اثنا عشر شهرا في كتب الله يوم خلق السموت والارض منها اربعة حرم ”
অর্থ : নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা বারোটি, আসমান ও জমিন সৃষ্টির দিন থেকেই। এর মধ্যে চারটি হলো সম্মানিত ”
(সূরা তাওবা: ৩৬)
হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন : رجب شهر الله، وشعبان شهري، ورمضان شهر أمتي
অর্থ : রজব আল্লাহর মাস, শা’বান আমার মাস এবং রমজান আমার উম্মতের মাস। (ইবনে মাজাহ হাদিস নং ১৬৩৮)
রজব মাসের ফযিলত :
রজব মাসের অনেক ফযিলত রয়েছে । তার মধ্যে থেকে কিছু উল্লেখ করা হল । ১.রজব মাসের প্রথম রাতের দোয়া কবুল হয় : হাদিস শরিফে রজব মাসের প্রথম রাতে দোয়া কবুল হওয়ার সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قال رسول الله ﷺ “خَمْسُ لَيَالٍ لَا يُرَدُّ فِيهِنَّ الدُّعَاءُ: لَيْلَةُ الْجُمُعَةِ، وَالْفِطْرِ، وَالْأَضْحَى، وَلَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، وَلَيْلَةُ رَجَبٍ الْمُبَارَكَة.”
(مُصَنَّف عبد الرزاق)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘পাঁচটি রাত এমন আছে, যেগুলোতে বান্দার দোয়া আল্লাহ তাআ’লা ফিরিয়ে দেন না, অর্থাৎ অবশ্যই কবুল করেন। রাতগুলো হলো—জুমার রাত, রজবের প্রথম রাত, শাবানের ১৫ তারিখ দিবাগত রাত, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার রাত।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক. হাদিস নং ২০১২)
আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে, ২৭ রজবে রোজা রাখা অনেক ফযিলত। এমনকি অনেকের মধ্যে এ বিশ্বাস রয়েছে যে এই একটি রোজার ফযিলত এক হাজার রোজার সমান। এ জন্য তাকে হাজারি রোজা বলে অভিহিত করা হয়। অথচ এ রোজার ব্যাপারে সহিহ ও গ্রহণযোগ্য কোনো বর্ণনা নেই। আল্লামা ইবনুল জাওজি, হাফেজ জাহাবি, আবদুল হাই লাখনবি (রহ.) প্রমুখ প্রখ্যাত মুহাদ্দিস এ রোজার ফযিলতকে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বলেছেন।
২.
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُ حَتَّى نَقُولُ لَا يُفْطِرُ، وَيُفْطِرُ حَتَّى نَقُولُ لَا يَصُومُ، وَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَامَ شَهْرًا كَامِلًا إِلَّا رَمَضَانَ، وَمَا رَأَيْتُهُ أَكْثَرَ صِيَامًا فِي شَهْرٍ سِوَى رَمَضَانَ فِي رَجَبٍ وَشَعْبَانَ.
হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.) কে রজব ও শাবান মাসে এত বেশি রোজা রাখতে দেখেছি, রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে এত রোজা রাখতে দেখিনি। ( সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৬)
রজব মাসের আমল সমূহ :
১. রাসুল (সা.) এ মাস সম্পর্কে খুবই গুরুত্ব দিতেন। ফলে রজব মাসের চাঁদ দেখা গেলেই তিনি কিছু বিশেষ আমল শুরু করতেন।তার মধ্যে থেকে উল্লেখযোগ্য আমল হচ্ছে হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, যখন রজব মাস শুরু হতো, নবী করিম (সা.) তখন এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়তেন,
(رواه ابن ماجه) “اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبَ وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ.
উচ্চারন : আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শা’বান, ওবাল্লিগনা রমাদান।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শা’বান মাসকে বরকতময় করুন এবং আমাদের রমজান মাস পর্যন্ত হায়াত বৃদ্ধি করে দিন। (ইবনে মাজাহ) হাদিস নং ১৭৪৩
২. নফল রোজা রাখা ,
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “صُمْ مِنَ الْحُرُمِ وَاتْرُكْ.”
অর্থ: সম্মানিত মাসগুলোতে রোজা রাখো এবং কিছুদিন রোজা ছাড়াও থাকো। সুনানে আবু দাউদ ( হাদিস নং ২৪২৮)
উপসংহার
রজব মাস মুসলিমদের জন্য আত্মশুদ্ধি, ইবাদত ও রমজানের প্রস্তুতির মাস। এই মাসে বেশি বেশি নেক আমল করার চেষ্টা করা উচিত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই মাসের বরকত ও ফযিলত অর্জন করার তাওফিক দান করুন।
আমিন।