আল জামি'আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা

মুক্তাদির সূরা ফাতিহা পড়া প্রসঙ্গে

বরাবর,
ফতোয়া বিভাগ, আল জামি’আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়া পোরশা,নওগাঁ।
বিষয়: মুক্তাদির সূরা ফাতিহা পড়া প্রসঙ্গে।
প্রশ্ন: ইমামের পিছনে ইক্তেদা করার সময় মুক্তাদিকে কি সূরা ফাতিহা পড়তে হবে ? কোরআন হাদীসের আলোকে দলিল কি? সঠিক সমাধান জানালে উপকৃত হতাম ।
নিবেদক
মুহা.মাহদী হাসান
بسم الله الرحمن الرحيم،حامدا و مصليا و مسلما-
সমাধান: ইমামের পিছনে মুক্তাদির জন্য সূরা ফাতিহা পড়া জায়েজ নেই। কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, যখন কুরআন পড়া হয়, তখন তা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করো এবং চুপ থাকো, যাতে তোমাদের প্রতি রহমত হয়। (সূরা আ’রাফ,আয়াত নং:২০৪) এই আয়াত সম্পর্কে হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) এর বক্তব্য, তাফসীরে ইবনে কাসীরে (৩/৫৩৭) এসেছে, তিনি বলেন, এই আয়াতটি নামায সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.) এই আয়াত সম্পর্কে বলেন, সকল মানুষ এ কথার উপর একমত যে, এই আয়াত নামায সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। (আল মুগনী ১/২২৯) ইবনে জারির তাবারী ইয়াসির ইবনে জারীর থেকে বর্ণনা করেন যে, ইবনে মাসউদ (রা.) নামাজ পড়ছিলেন, তখন তিনি কিছু মানুষকে ইমামের পিছনে তেলাওয়াত করতে শুনলেন। নামায শেষে তিনি বললেন, তোমাদের কি অনুধাবন করার সময় আসেনি? তোমাদের কি বুঝার বয়স হয়নি? যখন কোরআন তেলাওয়াত করা হবে, তখন তা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং নিরব থাকবে, যেভাবে আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে আদেশ করেছেন (তাফসীরে তাবারী ১১/৩৩৭)
এছাড়া সহীহ হাদীসে ইমামের ফাতিহা পড়ার সময় মুসল্লিদের চুপ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হযরত আবু মুসা আশআরী (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন। তিনি আমাদেরকে নিয়ম কানুন স্পষ্ট করে  দিলেন এবং আমাদেরকে নামাজ পড়া শিক্ষা দিলেন আর নির্দেশ দিলেন, তোমরা যখন নামাজ পড়বে, তোমাদের কাতার গুলো ঠিক করে নিবে অতঃপর তোমাদের কেউ ইমামতি করবে। সে যখন তাকবীর বলবে, তোমরাও তাকবীর বলবে। সে যখন তেলাওয়াত করবে তোমরা চুপ করে থাকবে। (মুসলিম শরীফ,হাদীস নং: ৪০৪) হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইমাম বানানো হয় তার অনুসরণের জন্য। অতএব ইমাম যখন তাকবীর বলবে, তোমরা তাকবীর বলবে। যখন কেরাত পড়বে তখন তোমরা চুপ থাকবে (মুসলিম শরীফ,হাদীস নং: ৪১৪)
উপরোক্ত দুটি হাদীসে ইমামের তাকবীর বলার পরে মুক্তাদিকেও তাকবীর বলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু ইমামের কেরাত পড়ার সময় মুক্তাদিকে  কেরাত না পড়ে চুপ থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, যদি মুক্তাদির জন্য সূরা ফাতিহা পড়া জরুরি হতো, তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো চুপ থাকার আদেশ দিতেন না। পরবর্তী হাদীসের মাধ্যমে মুক্তাদির সূরা ফাতিহা না পড়ার বিষয়টি আরো পরিষ্কার হয়।
হযরত জাবের (রা.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, যার ইমাম আছে তার জন্য তার ইমামের কেরাতই যথেষ্ট। ( মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,হাদীস নং:৩৮২৯) এই হাদীস থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, মুক্তাদি সুরা ফাতেহা পড়বেনা, কারণ ইমামের ফাতিহা পড়াটাই তার জন্য যথেষ্ট। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রুকু পেল সে ওই রাকাত পেয়ে গেল। (আবু দাউদ শরীফ,হাদীস নং:৮৯৩) এই হাদীস থেকেও প্রমাণিত হয় যে, সূরা ফাতিহা ছাড়াও শুধু রুকুতে শরিক হওয়ার মাধ্যমে রাকাতটি সহীহ হয়ে যায়।

الاحالة الشرعية على المطلوب
قوله تعالى واذا قرئ القران فاستمعوا له وانصتوا لعلكم ترحمون (سورة الاعراف٢٠٤)
اخرج الامام ابن كثير بسنده عن ابن عباس(3/ 537) واذا قرئ القران فاستمعوا له وانصتوا يعني في الصلاة المفروضة
وفي المغني لابن قدامة(١/ ٢٢٩) وقال احمد بن حنبل اجمع الناس على ان هذه الاية في الصلاة
وفي تفسير الطبري (١١/ ٣٧٨) عن يسير بن جابر قال صلى ابن مسعود رضي الله عنه فسمع ناسا يقرؤون مع الامام فلما انصرف قال اما آن لكم ان تفقهوا أما آن لكم ان تعقاوا وإذا قرئ القران فاستمعوا له وانصتوا كما امركم الله
اخرج الامام مسلم في صحيحه (٤٠٤) عن ابي موسى الاشعري في حديث طويل ان رسول الله صلى الله عليه وسلم خطبنا فبين لنا سنتنا وعلم صلاتنا فقال اذا صليتم فأقيموا صفوفكم ثم ليؤمكم احدكم فاذا كبر فكبروا وفي روايه واذا قرا فانصتواخرج الإمام مسلم في صحيحه(٤١٤) عن أبي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إنما جعل الامام ليتم به فإذا كبر فكبروا واذا قرا فأنصتوا
وفي مصنف ابن ابي شيبة(٣٨٢٩) عن جابر بن عبد الله عن النبي صلى الله عليه وسلم قال من كان له إمام فقراءته له قراءة
أخرج الإمام ابو داوود في سننه(٨٣٩) عن ابي هريره رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا جئتم الى الصلاة ونحن سجود فاسجدوا ولا تعدوها ومن ادرك الركعة فقد ادرك الصلاة
وفي الدر المختار (٢/ ٣٢٧) والمؤتم لا يقرا مطلقا والفاتحة فان قرا كره تحريما وفي درر البحار عن  خواهر زاده انها تفسد ويكون فاسقا وهو مروي عن عدة من الصحابة فالمنع احوط بل يستمع اذا جهر وينصت اذا أسر لقول ابي هريرة كنا نقرأ خلف الامام فنزل واذا قرئ القران فاستمعوا له وانصتوا-انتهى والله أعلم بالصواب

ফতোয়া প্রদান করেছেনঃ
মুফতি আব্দুল আলিম সাহেব (দা.বা.)
নায়েবে মুফতী-ফতোয়া বিভাগ
আল জামিয়া আল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা, নওগাঁ ।

শেয়ার করুন !!
Scroll to Top