আল জামি'আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা

মা বাবার মর্জি ছাড়া আহলে হাদীস ছেলে ও হানাফী মাযহাবের মেয়ের গোপনে বিবাহ করা প্রসঙ্গে

বরাবর,
ফতোয়া বিভাগ, আল-জামি’আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়া,পোরশা,নওগাঁ।
বিষয়: মা বাবার মর্জি ছাড়া আহলে হাদীস ছেলে ও হানাফী মাযহাবের মেয়ের গোপনে বিবাহ করা প্রসঙ্গে।
প্রশ্ন: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। সম্মানিত মুফতি সাহেব, আশা করি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। আমি অনেক চিন্তিত একটি বিষয় নিয়ে মুফতি সাহেব। একটু দ্রুত উত্তর টা দিলে মনে একটু শান্তি আসবে। মূল প্রশ্ন শেষে লেখা আছে। পরিচয়: ছেলে(আমি): [নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক] ২৫ বছর বয়স, বাংলাদেশ এ থাকি (ফার্মগেট, ঢাকা), ইউনিভার্সিটির বিবিএ এর ২য় বর্ষের ছাত্র। আপাতত কোনো চাকরি বাকরি নেই। আহলে হাদিস মাযহাব এর অনুসারী। আমি হানবালি মাযহাব অনুসরণ করি না। পৈতৃক ঠিকানা: জামালপুর। মেয়ে: [নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক] ২৩ বছর বয়স, সাভার থাকে। ইউনিভার্সিটির অনার্সে পড়ছে। হানাফী মাযহাব এর অনুসারী। পৈতৃক ঠিকানা: বরিশাল। প্রাসঙ্গিক বিষয়: (মূল প্রশ্ন অংশ নিচে আছে) আমরা দীর্ঘ ৪ মাস একটি সম্পর্কে আবদ্ধ থাকি। আমরা একজন আরেকজনকে অনেক ভালোবাসি। আমাদের পরিচয় সোশ্যাল মিডিয়ায় হয়। এবং কয়েক মাস কথা বলার এক পর্যায়ে আমরা একজন আরেকজনকে ভালোবেসে ফেলি। এবং যেহেতু আমরা উভয়েই ঢাকায় থাকি তো অনেকভাবেই দেখা সাক্ষাত হচ্ছিল। কিন্তু হারামভাবে সম্পর্কে আর থাকতে চাচ্ছিলাম না। এই অবস্থায় বাবা মাকেও জানানো যাচ্ছিল না। কারণ আমি মাত্র পড়াশোনা করছি, বেকার এবং এই অবস্থায় ওর বাবা মাও আমাকে মেনে নিবে না আর আমার বাবা মাও এখন বিয়ে করাতে আগ্রহী হবেন না। কারণ আমার বোনের বিয়ের চিন্তাও বাবার মাথায় ঘুরতেছে এবং বাবাও শারীরিক ভাবে সুস্থ না। আমরা চাচ্ছিলাম পড়া যখন শেষের দিকে থাকবে তখন পরিবারকে জানিয়ে কাবিন এবং পারিবারিকভাবে বিয়েটা করব। কিন্তু এত সময় আমরা হারামভাবে থাকতে পারব না। সম্পর্কটা যাতে হালাল হয়,তাই আমরা রেজিস্ট্রি ছাড়া ইসলামিকভাবে বিয়েটা সেরে ফেলি। ২ জন পুরুষ সাক্ষীর সামনে ইজাব কবুল করে আমরা বিবাহ সম্পন্ন করি। এটা আমাদের দুজনের সম্মতিতেই হয় এবং দুজন সামনাসামনি বসেই বিবাহের কাজটা সম্পন্ন করি। মুফতি সাহেব আমরা একজন আরেকজনের প্রতি ভীষণ দুর্বল এবং কসম করেছিলাম একজন আরেকজনকে ছাড়া বিবাহ করব না। থাকতে পারব না। মূল প্রশ্নের বিষয়: এমন পেরেশানির ভেতর থাকতে থাকতে দুইজন এ ডিসিশন নিলাম যে যেহেতু কসম করে ফেলছি যে একে অপরকে ছাড়া বিয়ে করবো না। সেহেতু নিকাহটা করে ফেলি বাবা মাকে না জানিয়ে। এরপর না হয় আমরা পরে আবার লোক দেখানো বিয়ে করে ফেলবো। আমরা নিকাহ ছাড়া কোনো পথ দেখিনি মুফতি সাহেব। আমরা আমাদের ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে লজ্জিত। আমরা আল্লাহর কাছে প্রতিদিন তওবা করি। কিন্তু মুফতি সাহেব, আমরা দুইজন একে অপরের জন্য ভীষণ দুর্বল। আমরা আমাদের সম্পর্ক কে হালাল করতে চেয়েছিলাম। আর আমরা কাছাকাছি থাকায় যেহেতু দেখা সাক্ষাত হবে তাই হালাল করাটা জরুরী মনে করেছিলাম। কারণ আমরা তো গুনাহ এর সম্পর্কের মধ্যে ছিলাম। এই কারণে ওই মেয়েটাকে আমি বলি যে, তুমি আমাকে বিয়ে করে ফেলো, তুমি আমাকে তোমার উকিল বানিয়ে নাও। আমি ২ জন পুরুষ সাক্ষীর সামনে কবুল করে নিবো। এরপর আমরা সামনাসামনি বসে প্রথমে মেয়েটি আমার সাথে তোমার ২৫০০০ টাকা মোহর এর বিনিময়ে বিবাহ করার জন্য তোমাকে আমার উকিল হিসেবে নিযুক্ত করলাম”এটা বলে কবুল বলে। আমি এই বিষয়ে রাজি হলাম। এরপর ২ জনকে সাক্ষী করে বললাম, “অমুক এর মেয়ে তমুককে বিয়ে করে নেওয়ার জন্য তমুক আমাকে তার উকিল বানিয়েছে। আমি ২৫০০০ টাকা মোহরের শর্তে তার সাথে এই বিয়ে কবুল করে নিলাম।” কুফু সংক্রান্ত বিষয়গুলো পেশ করছি: সম্পত্তি : মেয়ে: মেয়ের বাবার বরিশাল ও সাভারে বাড়ি এবং জমিজমা আছে। বাবা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। আর্থিকভাবে স্বচ্ছল। মেয়ের নিজের নামে কিছু জমি আাছে। কিন্তু সে কোনো কাজ করে না। ছেলে (আমি) : বাবার ব্যবসা আছে। নিজ এলাকায় বাড়ি এবং জমিজমা আছে। আর্থিকভাবে স্বচ্ছল। ছেলের নিজস্ব কোনো সম্পত্তি নেই। কিন্তু শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ আছে। ধর্মীয় দিক: মেয়ে: ৫ ওয়াক্ত সালাত নিয়মিত আাদায়ের চেষ্টা করে। ছেলে: ৫ ওয়াক্ত সালাত নিয়মিত আাদায়ের চেষ্টা করে। বংশ মেয়ে: হানাফি মাযহাব অনুসরণ করে। পারিবারিকভাবে সুনাম আছে। ছেলে: আহলে হাদিস মাযহাব অনুসরণ করে নামাজ আদায় করে। কিন্তু বাকি নিয়ম এতটা দৃঢ়ভাবে মানা হয় না। হাম্বলী মাযহাব অনুসরণ করা হয় না। পারিবারিকভাবে অনেক সুনাম আছে। মূল প্রশ্ন : এমতাবস্থায় বাবা মাকে না জানিয়ে এই বিয়ে করাটা কি ইসলামিকভাবে জায়েজ হয়েছে বা কুফুর মধ্যে পড়ে? আহলে হাদিস হিসেবে কি বিয়েটা কবুল হয়েছে? এবং যদি না হয় কুফু মিলতে এক্ষেত্রে কি কি নিয়ম মেনে করতে হতো সে বিষয়গুলো স্পষ্ট হতে চাই। এই কয়দিন আমরা ২ জন অনেক পেরেশানির মধ্যে আছি। উত্তরটা একটু দ্রুত দেওয়ার আশায় লিখলাম। আল্লাহ আপনার এবং আপনাদের মত সকল আলেমদেরকে কবুল করে নিন সেই দোয়া করি। আমীন।
নিবেদক
মুহা.সাকিবুর রহমান সাফায়াত
بسم الله الرحمن الرحيم،حامدا و مصليا و مسلما-
সমাধান: প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে শরীয়ত অনুযায়ী আপনাদের বিবাহ সহীহ হয়েছে। কেননা প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়ের বিবাহ মা-বাবার অনুমতি ছাড়াও সহীহ হয়। তবে মা-বাবার অনুমতি ছাড়া যদিও বিবাহ সহীহ হয়ে যায়,কিন্তু এটি স্বাভাবিক ও সুন্দর পদ্ধতি নয়। এ ক্ষেত্রে শরীয়তের নির্দেশনা হল, অভিভাবকের অনুমতিক্রমেই ‍বিবাহ করা এবং এ ব্যাপারে অভিভাবকের পরামর্শকে নিজের কল্যাণ মনে করে মেনে নেওয়া। আর অভিভাবকদেরও দায়িত্ব হল, ছেলে মেয়ের স্বত:স্ফূর্ত অনুমতি ছাড়া বিবাহ না দেওয়া ; বরং এ ব্যাপারে ছেলে মেয়ের মতামতের মূল্যায়ন করা।
প্রকাশ থাকে যে, বেগানা নারী-পুরুষের পরস্পর সম্পর্ক সম্পূর্ণ অবৈধ ও গুনাহের কাজ। তাই পরস্পরের দেখা-সাক্ষাৎ, ফোনালাপ,মেসেজ করা ইত্যাদি সবই অবৈধ। বিবাহের উদ্দেশ্যেও কারো সাথে এমন সম্পর্ক গড়া বৈধ নয়,এটা দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য ক্ষতির কারণ।
উল্লেখ্য, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাদের বিবাহ যদিও সহীহ হয়েছে তবে স্ত্রী মাযহাবের অনুসারী হওয়ায় তাকে আহলে হাদীসের আকীদা-বিশ্বাসের উপর আসার জন্য কোনরূপ চাপ সৃষ্টি করা যাবে না; বরং স্ত্রীকে নিজের মাযহাবের উপর অটল থাকার জন্য স্বাধীনতা দিতে হবে এবং কখনো যাতে এ বিষয়ে ঝগড়াঝাটি,কলহদ্বন্দ সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ের প্রতি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

الاحالة الشرعية على المطلوب
في”رد المحتار”(3/45) وفي النهر:تجوز مناكحة المعتزلة؛لأن لا نكفر أحدا من أهل القبلة وان وقع الزاما في المباحث
وفي”النهر الفائق”(2/194) وأما المعتزلة:فتجوزمناكحتهم لأن لا نكفر أحدا من أهل القبلة وان وقع الزاما في المباحث
في”الدرالمختار”(4/150) فنفذ نكاح حرة مكلفة بلا رضا.والأصل أن كل من تصرف في ماله تصرف في نفسه, وما لا فلا.وله أي للولي الاعتراض في غير الكفؤ
وفي”السراجية”(197) امرأة تزوجت من غير كفؤ فللولي أن يرفع القاضي حتى يفسخ
وفي” مجمع الأنهر”(1/488) نفذ نكاح حرة مكلفة بلا ولي وله الاعتراض في غير الكفؤ
وفي” رد المحتار”(4/149) يستحب للمرأة تفويض أمرها إلى  وليها كي لا تنسب إلى الوقاحة
وفي”الهداية”(2/322) وإذا اذنت المرأة للرجل ان يزوجها من نفسه فعقد بحضرة شاهدين جاز
وفي”الدرالمختار”(4/203) الكفاءة معتبرة من جانبه اي الرجل: لأن الشريفة تأبى ان تكون فراشا للدنئ ولذا لا تعتبر من جانبها لأن الزوج مستفرش فلا تغيظه دناءة الفراش وهذا عند الكل في الصحيح
وفي”كتاب النوازل”(8/389) سوال : کیا فرماتے ہیں علماء دین ومفتیان متین مسئلہ ذیل کے بارے میں کہ : کوئ لڑکا یا لڑکی کسی لڑکے یا لڑکی سے پیار و محبت کرتے ہیں اور ماں باپ کی نامرضی سےشادی کرلیں تو جائز ہے یا  ناجائز؟  الجواب وباللہ التوفیق:یہ نکاح منعقد ہو جائے گا ، لیکن اگر لڑکا غیر کفو ہو تو لڑکی کا ولی بذریعہ شرعیہ ایسے نکاح کو ختم کرا سکتا ہے، اور ایک قول یہ ہے کہ ایسا نکاح منعقد ہی نہ ہوگا
وفي”فتاوى قاسمية”(3/242) الجواب وباللہ التوفیق: غیر مقلد کے ساتھ حنفی لڑکی کا نکاح نہیں کرنا چاہئے ورنہ بعد میں مختلف پریشان اٹھانی پڑتی ہیں اور وہ حنفی کہ ہم کفو نہیں ہے
وفي”فتاوى دار العلوم ديوبند”(7/175) سوال:جو فرقہ غیر مقلد اپنے آپ کو اہل حدیث بتلاتے ہیں،ان سے بیٹابیٹی کا بیاہ کرنا شرعا جائز ہے یا نہیں؟ الجواب:اگر نکاح کیا جاوے گا نکاح منعقد ہو جاوےگا لیکن ایسے فرقوں اور ایسے متعصب لوگوں سے رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم نے مناکحت ومواکلت ومشاربت وغیرہ کو منع فرمایا ہے،اس لئے بہتر یہ ہے کہ ان لوگوں سے اس قسم کے تعلقات بیاہ شادی کے قائم نہ کئے جائیں-فقط (موجودہ دور میں پہلا سا تعصب بھی باقی نہ رہا
وراجع أيضا في”كفاية المفتي”(1/325) و”كتاب النوازل”(8/92) ،انتهى والله أعلم بالصواب

ফতোয়া প্রদান করেছেনঃ
মুফতি আব্দুল আলিম সাহেব (দা.বা.)
নায়েবে মুফতী-ফতোয়া বিভাগ
আল জামিয়া আল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা, নওগাঁ ।

শেয়ার করুন !!
Scroll to Top