আল জামি'আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা

ফরয নামাযের পর মুনাজাত করা প্রসঙ্গে

বরাবর,
ফতোয়া বিভাগ, আল-জামি’আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়া,পোরশা,নওগাঁ।
বিষয়: ফরয নামাযের পর মুনাজাত করা প্রসঙ্গে।
প্রশ্ন: মাননীয় মুফতী সাহেব হুজুর,আমার জানার বিষয় হল,ফরয নামাযের পর মুনাজাত করার শরয়ী বিধান কি এবং তার দলিল কি ? জানালে উপকৃত হতাম।
নিবেদক
মুহা.মেহরাব হোসে
মোহনপুর,রাজশাহী।
بسم الله الرحمن الرحيم،حامدا و مصليا و مسلما-
সমাধান: নামাযের অংশ ও জরুরী মনে না করে ফরয নামাযের পর একাকী ও সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা জায়েয আছে ; বরং তা মুস্তাহাব। কেননা ফরয নামাযের পর মুনাজাত করার বিষয়টি একাধিক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। একাকী মুনাজাতের ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রা.) এক ব্যক্তিকে নামায শেষ করার পূর্বেই দু‘হাত ‍তুলে দোআ করতে দেখে বললেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শেষ করার  পূর্বে হাত তুলে দোআ করতেন না অর্থাৎ নামায শেষ করার পর দু‘হাত তুলে দোআ করতেন। তার আগে নয়। (মু’জামুল কাবীর,হাদীস নং:৩২৪) আল্লামা হাফেয নূরুদ্দীন হাইছামী বলেন: “এ হাদীসের রাবীগণ নির্ভরযোগ্য”। (মাজমাউয যাওয়ায়িদ লিল হাইছামী,হাদীস নং:১৭৩৪৫)
অন্য হাদীসে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের সালাম ফিরিয়ে কিবলামুখী অবস্থায় হাত তুলে এই বলে দোআ করলেন: হে আল্লাহ! ওলীদ বিন ওলীদ,আইয়্যাশ বিন রবীআ,মাসলামা বিন হিশাম এবং দুর্বল মুসলমানদেরকে কাফেরদের হাত থেকে মুক্ত কর,যারা কৌশল অবলম্বন করতে পারে না এবং পথ খুঁজে পায় না। (তাফসীরে ইবনে কাসীর,১/৫১৪)
অনুরূপভাবে সম্মিলিত মুনাজাতের ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে, “বাহরাইনের মুরতাদের সাথে আবু বকর (রা.) এর খেলাফতকালে ১১ হিজরীতে লড়াইয়ে তাকে আমীর নিযুক্ত করা হল। ঐ জিহাদে তাদের সামনে এ বিপদ আসল যে,সকল উট রসদপত্রসহ পলায়ন করল। তিনি ফজরের নামাযের পর ‍দুই হাত উত্তোলন করে সকল সাহাবীদের সাথে সম্মিলিতভাবে আল্লাহর কাছে ‍দোআ করলেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,৫/৩৪; তারীখে ত্ববারী,২/৫৩২) অপর এক হাদীসে এসেছে,হযরত হাবীব ইবনে মাসলামা (রা.) বর্ণনা করেন: যদি কিছু সংখ্যক লোক একত্রিত হয়ে এভাবে দোআ করে যে,তাদের একজন দোআ করতে থাকে আর অন্যরা আমীন বলতে থাকে তবে আল্লাহ তাআলা তাদের দোআ অবশ্যই কবুল করে থাকেন। (মু’জামুল কাবীর,হাদীস নং:৩৫৩৬)
এছাড়া ফরয নামাযের পর দোআ করার বিশেষ ‍গুরুত্ব ও ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। ফরয নামাযের পর দোআ কবুল হওয়ার মোক্ষম সময়। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল,কোন সময় দোআ কবুল হওয়ার বেশি সম্ভাবনা ? তখন তিনি উত্তরে বললেন,শেষ রাতে এবং ফরয নামাযের পর। ( সুনানে তিরমিযী,হাদীস নং:৩৪৯৯)
উল্লেখ্য,উল্লিখিত হাদীসসমূহের দ্বারা এ কথাই প্রমাণিত হয় যে,ফরয নামাযের পর জরুরী মনে না করে একাকী হোক অথবা সম্মিলিতভাবে হোক উভয়ভাবেই মুনাজাত করা জায়েয আছে; বরং তা মুস্তাহাব আমল। তবে কেউ যদি ফরয নামাযের পর মুনাজাত করাকে জরুরী মনে করে তাহলে তা বিদআত হবে। কেননা কোন জায়েয বা মুস্তাহাব বিষয়কে জরুরী মনে করাটা বিদআত।
পৃথিবী বিখ্যাত-মুহাদ্দিসগণও এ ধরনের মতামত ব্যক্ত করেছেন। যেমন : হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রহ.) আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহ.) এমনকি প্রসিদ্ধ আহলে হাদীস আলেম নবাব সায়্যিদ সিদ্দিক হাসান খান (রহ.) হযরত আবু উমামা (রা.) ও হযরত মুআজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত দুটি হাদীস উল্লেখ করার পর বলেন,  ايں ہر دو حدیث دلالت وارد برآں کہ دعاء بعد فريضہ میں باید (دليل الطالب على ارجح المطالب)
অর্থাৎ এই দুইটি হাদীস ফরয নামাযের পর মুনাজাত সুন্নত হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করে।

الاحالة الشرعية على المطلوب
قال الله تبارك وتعالى”ادعوا ربكم تضرعا وخفية”[الأعراف-55]
وأخرج الإمام الترمذي رح في”سننه”(2/187،برقم:3499) عن أبي أمامة رضي الله تعالى عنه قال قيل يا رسول الله أي الدعاء اسمع قال جوف الليل الآخر ودبرالصلوات المكتوبة. وقال”هذا حديث حسن”
وأخرج الإمام البخاري رح في”صحيحه”(1/140) عن أنس بن مالك رضي الله تعالى عنه قال أتى رجل أعرابي من اهل البلاد وإلى رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم الجمعة فقال يا رسول الله هلكت الماشية هلكت العيال هلك الناس فرفع رسول الله صلى الله عليه وسلم يديه يدعو ورفع الناس ايديهم مع رسول الله صلى الله عليه وسلم يدعون
وأخرج الإمام الطبراني رح في”المعجم الكبير”(برقم:324) عن محمد بن أبي يحيى قال رايت عبد الله بن الزبير ورأى رجلا رافعا يديه بدعوات قبل ان يفرغ من صلاته فلما فرغ منها قال إن رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يكن يرفع يديه حتى يفرغ من صلاته. قال الهيثمي في”مجمع الزوائد”(17345) “رجاله ثقات”
وأخرج الإمام الطبراني رح في”المعجم الكبير”(برقم:3536) عن حبيب بن مسلمة الفهري وكان مستجابا انه امر على جيش فدرب الدروب فلما لقي العدو قال للناس سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: “لا يجتمع ملاء فيدعو بعضهم ويؤمن سائرهم إلا أجابهم الله. وقال الهيثمي في”مجمع الزوائد”(17347) رجال الصحيح غير ابن لهيعه ،وهو حسن الحديث
وفي”البداية والنهاية”(5/34) و”تاريخ الطبري”(2/532) واقعة العلاء الحضرمي رضي الله تعالى عنه المشهورة وهي: انه امر في قتال المرتدين في البحرين 11ه في خلافة أبي بكررض فعرض لهم في ذلك الجهاد مصيبة بأن نفرة الإبل بما عليها من زاد الجيش فدعا إلى الله بعد صلاة الصبح مجتمعا مع اصحابه رافعا يديه.  فالعبارة المتعلقة بهذا المقام كما تلي:”ونودي بصلاة الصبح حين طلع الفجر فصلى بالناس فلما قضى الصلاة جثا على ركبتيه وجثا الناس ونصب في الدعاء ورفع يديه وفعل الناس مثله حتى طلعت الشمس
وفي”تفسير ابن كثير”(1/514) عن ابي هريرة رضي الله تعالى عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم رفع يديه بعد ما سلم وهو مستقبل القبلة فقال اللهم خلص الوليد بن الوليد وعباس بن ربيعة ومسلمة بن هشام وضعفة المسلمين الذين لا يستطيعون حيلة ولا يهتدون سبيلا من أيدي الكفار
وفي”الهندية”(5/318) اذا دعا بالدعاء الماثور جهرا ومعه القوم أيضا ليتعلموالدعا لا باس به
وفي”امداد الفتاوى”(1/315) نماز کے بعد دعا مستحب ہے اور بسط رفع یدین مطلقا  آداب دعا سے ہے
وفي” كتاب الفتاوى”(3/98) امام کے سلام پھیرنے کے ساتھ ہی اقتدا ءختم ہو جاتی ہے اب ا مام اور مقتدی دونوں اپنے اپنےعمل میں آزاد ہیں اور حسب منشا اپنی اپنی دعا کر سکتے ہیں دعا زور سے بھی کی جا سکتی ہے اور آہستہ بھی، البتہ آہستہ آہستہ کرنا بستا بہتر ہے
وفي”كفاية المفتي”(3/330)  الجواب: اس طریقہ کو ضروری اور لازم نہ سمجھا جائے تو مباح ہے مگر سنن اور نوافل کے بعد سب کا موجود رہنا اور پھر اس طریقہ سے دعا مانگنا یہ واجب الترک ہے
وفي”فتاوى محمودية”(12/121) فرض نمازوں کے بعد دعا مقبول ہوتی ہے اس وقت دعا کرنا حدیث وفقہ سے ثابت ہے  جہرا دعا کرنا اور مقتدیوں سے آمین کہلوانا اس کی پابندی ثابت نہیں جس فرض نماز کے بعد سنت نماز بھی ہےجیسے ظہر مغرب عیشاء اس کے بعد مختصر دعا کر کے سنت میں مشغول ہو جائے اور جس کے بعد سنت نہیں جیسے فجر و عصر  ان کے بعد تسبیحات و اذکار متعدد حدیثوں میں وارد ہے
وراجع أيضا في”الموسوعة الفقهية”(2/257) و”كتاب النوازل”(5/535) و”احسن الفتاوى”(1/246) و”امداد الأحكام”(1/334) و”فتاوى رحيمية”(6/66) و”فتاوى دار العلوم ديوبند”(سوال 115)  ،انتهى والله أعلم بالصواب

ফতোয়া প্রদান করেছেনঃ
মুফতি আব্দুল আলিম সাহেব (দা.বা.)
নায়েবে মুফতী-ফতোয়া বিভাগ
আল জামিয়া আল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা, নওগাঁ ।

শেয়ার করুন !!
Scroll to Top