বরাবর,
ফতোয়া বিভাগ, আল-জামি’আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়া পোরশা,নওগাঁ।
বিষয়: নবীজী কিসের তৈরী?
প্রশ্ন: মাননীয় মুফতী সাহেব হুজুর, কেউ কেউ বলেন, নবীজী নূরের তৈরী। এখন প্রশ্ন হল, নবীজী নূরের তৈরী না মাটির তৈরী।
নিবেদক
মুহা.ফজলুল করিম
بسم الله الرحمن الرحيم،حامدا و مصليا و مسلما-
সমাধান: ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। ইসলামের কোন বিধান পালনে শিথিলতার যেমন কোন অবকাশ নেই, তেমনি কোন বিষয়ে বাড়াবাড়িও কোন সুযোগ নেই। প্রতিটি বিষয়ে রয়েছে ইসলামের সঠিক এবং সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা। সেই দিক-নির্দেশনা মেনে শরীআ অনুযায়ী আমল করা অপরিহার্য। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিভিন্ন বিষয়াদি সম্পর্কেও রয়েছে কুরআন-সুন্নাহর সুস্পষ্ট বর্ণনা। আল্লাহ তাআলা বহু সংখ্যক মাখলূক সৃষ্টি করেছেন। তার মধ্যে তিন শ্রেণীর মাখলূক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম হল: নূরের তৈরী ফেরেশতা। দ্বিতীয়: আগুনের তৈরী জিন জাতি। তৃতীয়: মাটির তৈরী মানুষ, যার সম্মান বোঝানোর জন্য আল্লাহ তাআলা নূরের তৈরী ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন আদমকে সেজদা করার জন্য। এখান থেকে বুঝা যায়, শুধু নূরের তৈরী সৃষ্টি হওয়ার মাঝে আলাদা কোন ফজিলত বা শ্রেষ্ঠত্ব নেই। যদি থাকতো তাহলে তো প্রত্যেক ফেরেশতাই নবী-রাসুল থেকে শ্রেষ্ঠ হতো! বরং ফজিলত ও শ্রেষ্ঠত্ব হল আল্লাহ তায়ালার মা’রেফাত লাভ নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন এবং ইলম ও হেকমতের কারণে, আর এই যোগ্যতা ও গুণাবলী সবচেয়ে বেশি দেওয়া হয়েছে আদম ও তার সন্তানদেরকে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি”। (সূরা বানী ইসরাঈল-৭০) তাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বীদা বিশ্বাস এই যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাটির তৈরী মানুষ ছিলেন। নবীজী সৃষ্টিগতভাবে সকল মানুষের মতই মানুষ ছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, “হে নবী! আপনি বলুন, আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ”।(সূরা কাহাফ-১১০)আরো বলেন,“বলুন, আমিও তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমার প্রতি ওহী আসে যে, তোমাদের মাবুদ হল একজন”।(সূরা হা-মীম সাজদা-৬)।
হাদীসে এসেছে, “নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি তো একজন মানুষ। আমিও তোমাদের মত ভুলে যাই। আমি (নামাযে কিছু) ভুলে গেলে আমাকে স্মরণ করিয়ে দিও”। (সহীহ বুখারী- হাদীস- ৩৯৯) হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, হে আল্লাহ! মুহাম্মদ তো একজন মানুষ। মানুষ যেমন ক্রুদ্ধ হয়, সেও (নবীজীও) ক্রুদ্ধ হয়”।( সহীহ মুসলিম-২৬০১) এরকম বহু প্রমাণ কুরআন ও হাদীসে এসেছে, এসকল আয়াত ও হাদীসসমূহে নবীজীকে “বাশার” বলা হয়েছে। আর “বাশার” শব্দের অর্থ হল, মাটির তৈরী মানুষ। কারণ “বাশার” তথা মানব সৃষ্টি সম্পর্কে খোদ আল্লাহ তাআলাই বলেছেন, “যখন আপনার পালনকর্তা ফেরেশতাদেরকে বললেন, আমি মাটির মানুষ সৃষ্টি করব”। (সূরা ছোয়াদ-৭১)
“তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির মত শুষ্ক মৃত্তিকা থেকে, আর জিনকে সৃষ্টি করেছেন অগ্নিশিখা থেকে”। (সূরা আর রহমান ১৪-১৫) “আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর আমি তাকে শুক্রবিন্দুরূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি”। (সূরা মু‘মিনূন-১২) নবীজী নিজেও আপন সৃষ্টি সম্পর্কে বলেছেন, “আমার জন্ম বিয়ের মাধ্যমে হয়েছে। কোন নাজায়েয পন্থায় নয়”। (তবকাতে ইবনে সা’দ ১/২৬) আরেকটি হাদীসে এসেছে, নবীজী ইরশাদ করেন, “ আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের ছেলে মুহাম্মদ। আল্লাহ তাআলা আমাকে সর্বোত্তম গোত্র ও পরিবারে পাঠিয়েছেন। সুতরাং আমি ব্যক্তি ও বংশ সর্বদিক থেকে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম”। (মুসনাদে আহমাদ ১/২১০) সুতরাং আয়াত এবং সহীহ হাদীসের সুস্পষ্ট বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নবীজী মাটির তৈরী মানুষ ছিলেন। তবে তিনি সর্বোত্তম মানব আদম সন্তানের সরদার ছিলেন। পূর্বোক্ত হাদীস দ্বারা আমরা এও জানতে পারলাম যে, তার জন্ম বিয়ের মাধ্যমে হয়েছিল। সুতরাং নবীজীর শরীর মোবারক নূরের তৈরী একথা বলা অথবা এরূপ আক্বীদা পোষণ করা সম্পূর্ণ বাস্তবতা বিরোধী। আয়াত এবং হাদীসে যেখানেই তাঁকে “নূর” বলা হয়েছে, সেখানে তাকে রূপক অর্থে “নূর” বলা হয়েছে। যেহেতু তিনি ছিলেন উম্মতের জন্য হিদায়েতের নূর বা আলোকবর্তিকা। যেমন একই অর্থে কুরআনকেও “নূর” বলা হয়েছে এবং কুরআনের ইলমকেও “নূর” বলা হয়েছে। (সহীহ মুসলিম ২৪০৮) তাই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাটির তৈরী মানুষ ছিলেন এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।
الاحالة الشرعية على المطلوب
قوله تعالى: قل إنما أنا بشرمثلكم يوحى إلي أنما إلهكم إله واحد.( سورة الكهف-١١٠)
وقوله تعالى: قل إنما أنا بشرمثلكم يوحى إلي أنما إلهكم إله واحد.( سورة حم السجدة-٦)
قوله تعالى: اذ قال ربك للملائكة اني خالق بشرا من طين. ( سورة ص،٧١)
قوله تعالى خلق الانسان كالفخار وخلق الجان من مارج من نار.( سورة الرحمن- ١٤-١٥)
قوله تعالى: ولقد خلقنا الانسان من سلالة من طين. ( سورة المؤمنون.١٢)
قوله تعالى : ولقد كرمنا بني آدم.( سورة بني اسرائيل-٧٠)
رواه ابن سعد في “الطبقات الكبرى”(١/٢٦) إنما خرجت من نكاح،ولم أخرج من سفاح من لدن آدم ولم يصبني من سفاح أهل الجاهلية شيء لم أخرج إلا من طهره
أخرج الإمام أحمد في ” مسنده”(١/٢١٠) قام النبي صلى الله عليه وسلم من انا قالوا انت رسول الله عليك السلام قال أنا محمد بن عبد الله بن المطلب إن الله خلق الخلق فجعلني في خيرهم فرقة ثم جعلهم فرقتين فجعلني في خيرهم فرقة ثم جعلهم قبائلا فجعلني في خيرهم قبيلة ثم جعلهم بيوتا فجعلني في خيرهم بيتا وخيرهم نفسا ابو عيسى هذا حديث حسن
أخرج الإمام مسلم في ” صحيحه ” (برقم- ٢٤٠٨) كتاب الله فيه الهدى والنور من استمسك به وأخذ به كان على الهدى ومن أخطأه ضل
أخرج الإمام البخاري في “صحيحه” (١/٥٨, برقم ٣٩٩) عن علقمه عبد الله صلى النبي ﷺ……… قال إنه له حدث في الصلاة شيء لنبأتكم به ولكن إنما أنا بشر مثلكم آنسى كما تنسون فإذا نسيت فذكروني
وأخرج الإمام البخاري في” صحيحه”(١/٣٣٢, برقم ٢٣٩٤) عن أم سلمة زوج النبي ﷺ أخبرتها عن رسول الله ﷺ أنه سمع خصومة بباب حجرته فخرج إليهم فقال إنما أنا بشر
و أخرج الإمام مسلم في” صحيحه “(٢/٢٧٩, برقم ٢٤٠٦) قال قام رسول الله ﷺ يوما فينا خطيبا بماء يدعى خما بين مكة والمدينة فحمد الله وأثنى عليه ووعظ وذكر ثم قال أما بعد ألا أيها الناس فإنما أنا بشر يوشك أن يأتى رسول ربي فأجيب وأنا تارك فيكم ثقلين
وأخرج الإمام مسلم في” صحيحه ” ( برقم ٢٦٠١) عن ابي هريره رضي الله تعالى عنه يقول سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول اللهم إنما محمد بشر يغضب كما يغضب البشر
وفي ” فتاوى دار العلوم ديوبند”(١٨/٢٢٨) الجواب پس جو شخص آنحضرت ﷺ كو بشر كہنے سےانكار كرے وه قرآن شريف كے حكم كا منكر ہے
وفي ” فتاوى عباد الرحمن”(١/٨٩) آنحضرت ﷺ بيك وقت نور بهى تهے اور بشر بهى اور يہ كہ آپ ﷺ كے نور يا بشر ہونے ميں كوئ منافات نہيں كہ ايک كا اثبات کرکے دوسرے کى نفى کردى جائے بلکہ آپ ﷺ صفت ہدايت اور نورانيت باطن کے اعتبار سے نور مجسم اور اپنى نوع اور حقيقت کے اعتبار سرے خالص اور کامل بشر تهے
وراجع أيضا في ” فتاوى محموديہ” (٣/١٩٨) و” فتاوى قاسميہ”(٢/١٣٨) و” فتاوى حقانيہ”(١/١٦١) و” جامع الفتاوى”(١/١١٥) و” كتاب النوازل”(١/٢٧٥).انتهى ، والله أعلم بالصواب