আল জামি'আতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা

তিন তালাক ‍দিলে তিন তালাকই কার্যকর হওয়া প্রসঙ্গে

বরাবর,
ফতোয়া বিভাগ,আল-জামিয়াতুল আরাবিয়া দারুল হিদায়া,পোরশা,নওগাঁ।
বিষয়: তিন তালাক ‍দিলে তিন তালাকই কার্যকর হওয়া প্রসঙ্গে।
প্রশ্ন: মাননীয় মুফতী সাহেব হুজুর, এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে এক বৈঠকে তিন তালাক দিয়েছে। এখন কেউ কেউ বলছে যে, তিন তালাকে এক তালাক হয়। ইন্টারনেটে এরকম অনেকের বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। আবার অনেকে বলছেন এ ক্ষেত্রে তিন তালাকই কার্যকর হয়েছে। অতএব মুফতী সাহেবের কাছে আমার জানার বিষয় হল, প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির স্ত্রীর উপর কয় তালাক কার্যকর হয়েছে ? কোরআন-হাদীসের আলোকে সঠিক সমাধান জানালে উপকৃত হব।
নিবেদক
যাকারিয়া মাহমুদ
بسم الله الرحمن الرحيم،حامدا و مصليا و مسلما-
সমাধান : প্রশ্নোক্ত বিবরণ যদি সঠিক হয়ে থাকে, তাহলে ইসলামী শরীয়ত ও চার মাযহাবের সকল ইমামগণের ঐক্যমত অনুসারে উক্ত ব্যক্তি তার স্ত্রীকে এক বৈঠকে তিন তালাক দেওয়ার কারণে তার স্ত্রীর উপর তিন তালাকই কার্যকর হয়েছে এবং তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তারা একে অপরের জন্য সম্পূর্ণরূপে হারাম হয়ে গেছে। কেননা একই বৈঠকে এক সঙ্গে তিন তালাক দিলেও তিন তালাকই কার্যকর হয়। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত উয়াইমির (রা.) লি‘আনের পর বলেন,হে আল্লাহর রাসূল! এখন যদি আমি আমার স্ত্রীকে রাখি তবে এটা তার উপর মিথ্যারোপ করা হবে। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আদেশ দেওয়ার পূর্বেই তিনি তার স্ত্রীকে (ঐ বৈঠকে) তিন তালাক দিলেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫০৬০)। অপর এক হাদীসে আছে, হযরত নাফে (রহ.) বলেন, যখন হযরত ইবনে ওমর (রা.) এর কাছে (এক সাথে) তিন তালাক দিলে তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া (ফিরিয়ে নেওয়া যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, যদি তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে রুজু করতে পার। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরকম অবস্থায় রুজু করার আদেশ দিয়েছেন। আর যদি তিন তালাক দিয়ে দাও, তাহলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামী গ্রহণ করে। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫০৬৬)।
পক্ষান্তরে যারা তিন তালাকে এক তালাকের কথা বলেন, তারা রুকানা (রা:) এর তালাক প্রদানের হাদীসটিকে দলীল হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি একই মজলিসে তার স্ত্রীকে তিন তালাক প্রদান করলে নবীজী তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি একই মজলিসে তিন তালাক দিয়েছ, তিনি বললেন হ্যাঁ। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন এটা এক তালাক, যদি চাও তাহলে তাকে ফিরিয়ে নেও।(মুসনাদে আহমাদ,হাদীস নং-২৩৮৭)। এ হাদীসটির ব্যাখ্যা হল, এ হাদীসটি গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা কোন কোন বর্ণনায় এক সাথে তিন তালাক দেওয়ার কথাটি আসেনি। এজন্য ইমাম বুখারী (রহ:) এ হাদীসকে “মা‘লুল”বলেছেন। ইবনে আব্দুল বার (রহ:) এ হাদীসকে যঈফ বলেছেন। (আত-তালখীসুল হাবীর ৩/৪৫৮,হাদীস নং-১৬০৩) এ ছাড়া আরো যে সকল হাদীসে তিন তালাকে এক তালাকের কথা এসেছে, সে সকল হাদীসের ব্যাখ্যা হল, তারা তালাক তালাক তালাক তিন বার বলতেন। একাধিকবার বলার দ্বারা একই তালাকের গুরুত্ব বুঝানো উদ্দেশ্য হত, ভিন্ন ভিন্ন তালাক দেওয়া উদ্দেশ্য হত না। এজন্যই নবীজী এটিকে এক তালাক হিসেবে গণ্য করেছেন। সুতরাং যারা বলে যে, তিন তালাকে এক তালাক কার্যকর হয় তাদের বক্তব্য কোন ভাবেই সঠিক নয়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি তার ঐ স্ত্রীকে আর ফিরিয়ে নিতে পারবে না।
তবে উক্ত স্ত্রী তার তালাকের ইদ্দত শেষ করার পর অর্থাৎ স্ত্রী ঋতুমতী হলে তিনটি ঋতু আর গর্ভবতী হলে সন্তান প্রসব হওয়ার পর স্বেচ্ছায় অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। যদি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং দ্বিতীয় স্বামী সহবাস করার পর কোন কারনে তালাক দেয় বা মারা যায় তাহলে তার ইদ্দত অতিবাহিত হওয়ার পর সে রাযী থাকলে তারা নতুনভাবে দু‘জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে মোহর ধার্য করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।
উল্লেখ্য, শরীয়তের দৃষ্টিতে তালাক খুবই অপছন্দনীয় ও গর্হিত কাজ। তাই এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। অতি প্রয়োজন ছাড়া তা প্রয়োগ করা কিছুতেই বাঞ্ছনীয় নয়। যদি কখনো তালাক দিতেই হয় তাহলে পরামর্শ অনুযায়ী এক তালাকের বেশি দেওয়া উচিত নয়। তাও শান্ত পরিবেশে রাগের পরিবেশে নয়।

الاحالة الشرعية على المطلوب
قوله تعالي في”سورة البقرة”(٢٣٠) فان طلقها فلا تحل له من بعد حتي تنكح زوجا غيره
أخرج الإمام البخاري(رح ) في “صحيحه”(5066) وقال الليث عن نافع كان ابن عمر رضي الله عنهما إذا سئل عمن طلق ثلاثا قال لو طلقت مرة أو مرتين فإن النبي ﷺ أمرني بهذا  فإن طلقها ثلاثا حرمت حتي تنكح زوجا غيره
وفي”عمدة القارى”(20/233) ومذهب جماهير العلماء من التابعين و من بعدهم منهم الأوزاعي والنخعي و الثوري وأبوحنيفة وأصحابه ومالك وأصحابه والشافعي وأصحابه وأحمد وأصحابه واسحاق وأبو ثور وأبو عبيد وآخرون كثيرون على أن من طلاق إمرأته ثلاثا وقعن ولكنه يأثم. وقالوا من خالف فيه فهو شاذ مخالف لأهل السنة ‘ وإنما تعلق به أهل البدع ومن لا يلتفت إليه لشذوذه عن الجماعة التي لا يجوز عليهم التواطؤ على تحريف الكتاب و السنة
وفي”الهدايه”(٢/٣٩٩) ان كان الطلاق ثلاثا في الحرة اوثنتين في الأمة لم تحل له حتي تنكح زوجا غيره نكاحا صحيحا ويدخل بها ثم يطلقها او يموت عنها
وفي”الهندية”(١/٣٥٥) ان كان الطلاق ثلاثا في الحرة اوثنتين في الأمة لم تحل له حتي تنكح زوجا غيره نكاحا صحيحا ويدخل بها ثم يطلقها او يموت عنها
وفي”امداد السائلين”(4/40) تین طلاقیں خواہ   ایک جملے میں دے یا الگ الگ جملوں  میں ، تینوں واقع ہو جاتی ہیں ، چاروں اماموں کا یہی مذہب ہے، جس نے اس کے خلاف فتاوی دیا ہے سخت حرام مرتکب ہوا ہے ، اور جو لوگ اس نکاح میں یہ جانتے ہوئے شریک ہوئے وہ بھی گناہگار ہوئے ، سب توبہ استغفار کریں
وراجع أيضا في”التاتارخانية”(4/429) و”الدر المختار”(4/509) و”رد المحتار”(4/423) و”فتاوى دار العلوم ديوبند”(9/292). انتهى والله أعلم بالصواب

ফতোয়া প্রদান করেছেনঃ
মুফতি আব্দুল আলিম সাহেব (দা.বা.)
নায়েবে মুফতী-ফতোয়া বিভাগ
আল জামিয়া আল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ-পোরশা, নওগাঁ ।

শেয়ার করুন !!
Scroll to Top