এ বছর ২০২২ ইং মোতাবেক ১৪৪৩ হিজরীতে সদকায়ে ফিতরের সঠিক পরিমাণ নির্ণয়

নির্দেশনায়:
শাইখুল হাদীস হযরত মাও. আব্দুল্লাহ শাহ্ চৌধূরী (দা:বা:)
মুহতামিম,
আল জামিয়া আল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ, পোরশা, নওগাঁ।

এক নজরে নিম্নে টাকার মাধ্যমে ফিতরা আদায়ের তালিকা:

ক্রমিক নং পণ্য পরিমাণ প্রতি কেজি সর্বমোট আদায়ের সুবিধার্থে
যব এক সা ৩ কেজি ২৭০ গ্রাম ৩৫ টাকা ১১৪.৪৫ টাকা ১২০ টাকা
খেজুর এক সা ৩ কেজি ২৭০ গ্রাম ৪০০ টাকা ১৩০৮ টাকা ১৩১০ টাকা
পনির এক সা ৩ কেজি ২৭০ গ্রাম ৬৭২ টাকা ২,১৯৭.৪৪ টাকা ২,২০০ টাকা
কিসমিস এক সা ৩ কেজি ২৭০ গ্রাম ৩৫০ টাকা ১,১৪৪.৫০ টাকা ১,১৫০ টাকা
গম অর্ধ সা‘ ১ কেজি ৬৩৫ গ্রাম ২৭.৫০ টাকা ৪৪.৯৬ টাকা ৫০ টাকা

এ বছর সদাকায়ে ফিতর সর্বনিম্ন ৫০/-টাকা, সর্বচ্চো ২২০০/-টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। উপরোক্ত পরিমাণ নওগাঁ ও পোরশা এলাকার জন্যে প্রযোজ্য। অন্য জেলার বাজার মূল্য কম বা বেশি হলে উপর্যুক্ত পদ্ধতিতে হিসাব করতে হবে।

সংকলনে
মুফতী মাওলানা মুহা. মোস্তাফিজুর রহমান (কাসেমী) 
ফাতওয়া ও ইসলামী আইন গবেষণা বিভাগ ফাতওয়া ও ইসলামী আইন গবেষণা বিভাগ
অত্র জামিয়া 

সত্যায়নে
মুফতী মাওলানা মুহা. ফজলুল হক
ফাতওয়া ও ইসলামী আইন গবেষণা বিভাগ ফাতওয়া ও ইসলামী আইন গবেষণা বিভাগ
অত্র জামিয়া

প্রচারে:
ফাতওয়া ও ইসলামী আইন গবেষণা বিভাগ
আল জামিয়া আল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ, পোরশা, নওগাঁ।
তারিখ: ১৩/০৪/২০২২ইং ।

সদাকাতুল ফিতরের তাত্ত্বিক আলোচনা:
১. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সা.) একজন ঘোষক পাঠালেন, সে যেন মক্কার পথে পথে এ ঘোষণা করে যে, জেনে রাখো! প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী স্বাধীন, গোলাম, ছোট-বড় প্রত্যেকের উপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব- অপরিহার্য। দুই মুদ (অর্ধ সা‘) গম, কিংবা এক সা‘ অন্য খাদ্য বস্তু। (জামেয়ে তিরমিযি, হাদীস নং-৬৭৪, ১খন্ড/১৪৬) ইমাম তিরমিযি (রহ.) বলেন, হাদীসটি হাসান।
২. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত, তিনি রমজানের শেষ দিকে বসরার মেম্মারের উপর খুৎবা দানকালে বলেছেন-
فرض رسول الله صلى الله عليه وسلم هذه الصدقة صاعا من تمر أو شعير أو نصف صاع من قمح على كل حر أو مملوك ذكر أو انثى صغير أو كبير-
* রাসূলে কারীম (সা.) এ সদকাকে ওয়াজিব বা অপরিহার্য করেছেন এক সা‘ খেজুর বা যব কিংবা অর্ধ সা‘ গম স্বাধীন, গোলাম, নারী-পুরুষ ও ছোট বড় প্রত্যেকের উপর।(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১৬২২)
প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ আল্লামা ইবনু আব্দুল হাদী আল হাম্বলী (রহ.) বলেন, হাদীসটির সকল রাবী প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য। আল্লামা যাহাবী (রহ.) বলেন, হাদীসটির সনদ শক্তিশালী।
৩. হযরত আবু সাইদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সা.) এর যুগে ঈদুল ফিতরের দিন আমরা সদকাতুল ফিতর হিসাবে এক সা‘ খাদ্য দ্রব্য আদায় করতাম। তিনি বলেন, আমাদের খাদ্যদ্রব্য ছিল যব, কিসমিস, পণির ও খেজুর। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫১০)

সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ সম্পর্কে হাদীস ও সুন্নাহয় দুটি মাপকাঠি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তা হচ্ছে صاع সা‘ (৩কেজি ২৭০গ্রাম) এবং نصف صاع নিসফে সা‘(১কেজি ৬৩৫গ্রাম)।

পবিত্র হাদীস শরীফে মোট পাঁচ প্রকার খাদ্য দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করার বর্ণনা পাওয়া যায়:- যব, খেজুর, পণির, কিসমিস,গম । প্রথম চার প্রকার এক সা‘ এবং শেষোক্ত বস্তু গম দ্বারা আদায় করলে নিসফে সা‘ প্রদান করতে হবে।
এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, সেকালে গমের মূল্য অন্য বস্তু অপেক্ষা বেশি ছিল। যা বর্তমানে একেবারেই নিম্নমূল্যের। তাই উত্তম হলো নিজ নিজ সামর্থ অনুযায়ী বেশি মূল্যের বস্তু দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায় করা যা সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীনগণের সোনালী যুগে ছিল । যা হাদীস দ্বারা প্রতিয়মান হয় । তবে এ বিষয়টিও আমাদের বিবেচনায় আনা দরকার যে, আমরা বিত্তবান হওয়া সত্ত্বেও ধারাবাহিকভাবে শুধু বর্তমান নিম্নমূল্যের বস্তু দ্বারাই সদকাতুল ফিতর আদায় করে যাচ্ছি। যদিও আদায় হয়ে যাবে বটে তবে ইসলামী শরীয়াতের দৃষ্টিকোণ থেকে উত্তম বস্তু দ্বারা সদকায়ে ফিতর اَنٌفَعُ لِلٌفُقَرَاءِ (ফকির-মিসকিনদের উপকারার্থে ) আদায় করা আমাদের একান্তই কর্তব্য। তাই আমরা আমাদের সামর্থ অনুপাতে উপরোক্ত বস্তুগুলো দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায় করি ।
সদকায়ে ফিতরের নিসাব: ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় প্রত্যেক মুসলমান নর-নারী যার মালিকানায় মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্য সমপরিমাণ সম্পদ রয়েছে, তার উপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব। প্রত্যেকে তার নিজের ও নাবালেগ সন্তানদের পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর আদায় করবে। টাকা-পয়সা , সোনা- রুপা, অলংকার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে আসে না এমন জমি , বসবাসের অতিরিক্ত বাড়ী, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় আসবাব পত্র এসব কিছু সদকাতুল ফিতরের নিসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য । কেহ যদি ঋণগ্রস্ত হয় তাহলে সে ঋণ বাদ দিয়ে নিসাবের হিসাব করবে । (হিদায়াহ ১/১১৩পৃ.)

বর্তমান রুপা বাজার মূল্য : রুপা ৫২.৫০ তোলা × ১৫৫০ টাকা = ৮১,৩৭৫/- (একাশি হাজার তিনশত পঁচাত্তর টাকা মাত্র) টাকা থাকলে তার উপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে।

মাসায়েল:
১. ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকে সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়। সুতরাং যে সন্তান ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের পর জন্ম গ্রহণ করবে তার পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে, ২/২০৬পৃ., খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৭৫ পৃ.)
২. কেউ রমজানের রোযা রাখতে না পারলেও নিসাব পরিমাণ মাল থাকলে সদকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। (বাদায়েউস সানায়ে-২/১৯৯পৃ.)।
৩. পিতা-মাতা, স্ত্রী ও বালেগ সন্তানাদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না হলে তাদের পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব নয়। তারা নিজেরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তাদের উপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/১৯৩পৃ. , মারাকিল ফালাহ ৩৯৫পৃ.)
৪. বালেগ সন্তানাদি ও স্ত্রীর পক্ষ থেকে সদকায়ে ফিতর আদায় করে দিলে তা আদায় হয়ে যাবে। বিষয়টি প্রচলিত হওয়ায় এক্ষেত্রে তাদের অনুমতি জরুরী নয়। তবে আদায়ের পূর্বে তাদেরকে বলে দেওয়া ভাল। (আল বাহরুর রায়েক-২/২৫২পৃ.)
৫। সদকাতুল ফিতর ঈদের নামাজের আগে দেওয়া উত্তম। কোন কারণে সদকাতুল ফিতর ঈদের নামাজের আগে দিতে না পারলে ঈদের নামাজের পর আদায় করে দিবে।
(কিতাবুল আসল, ২/১৭৬পৃ., বাদায়েউস সানায়ে -২/২০৭পৃ.))।
৬। নাবালেগ সন্তানদের নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে পিতা তাদের সম্পদ থেকেও সদকাতুল ফিতর আদায় করতে পারবেন। (মারাকিল ফালাহ, ৩৯৪পৃ., ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/১৯২পৃ.)
৭. যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত নিতান্ত গরীব ভাই-বোনদেরকে সদকাতুল ফিতর প্রদান করা যাবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/১৯০পৃ.)। বিস্তারিত ফিকহের কিতাবে বিদ্যমান।

প্রমানাদি:
1. وعن عبد الله بن عمرو بن العاص ان النبى صلى الله عليه وسلم بعث مناديا فى فجاج مكة: الا ان صدقة الفطر واجبة على كل مسلم ذكر أو انثى حر أو عبد صغير أو كبير مدان من قمح أو سواه صاع من طعام (رواه الترمذى فى سننه(674) 1/ 2و قال حديث غريب حسن. وجاء فى العرف الشذى: الرجال. رجال هذا الحديث. ثقات الا سالم بن نوح العطار وهو ايضا من رجال مسلم 12 وجاء فى عمدة القارى للعينى: وقال ابو زرعه صدوق ثقة ووثقه ابن حبان وقال صاحب التنقيح- صدوق روى له مسلم فى صحيحه
2. عن ابى سعيد الخدرى رضى الله عنه قال كنا نخرج زكاة الفطر صاعا من طعام أو صاعا من شعير أو صاعا من تمر أو صاعا من أقط أو صاعا من زبيب- (رواه البخارى-رقم:1506 ، رواه مسلم، رقم: 985)
3. عن ابى سعيد الخدرى رضى الله عنه قال كنا نخرج فى عهد النبى صلى الله عليم وسلم يوم الفطر صاعا من طعام. قال ابو سعيد وكان طعامنا الشعير والزبيب والاقط والتمر. (رواه البخارى- برقم-1510)
3. ھراوردو فتاوای کے کتابیں ملاحظہ کیجیۓ –
4. ھر عربی فتاوای کے کتابیں ملاحظہ کیجیۓ –
تمت
নিজে পড়ুন এবং অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।
সওয়াবের উদ্দেশ্যে ফটোকপি করে বিতরণ করুন।
প্রয়োজনে
আরও জানতে আমাদের ওয়েব সাইট ভিজিট করুন ।
www.darulhidayah-porsha.com

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top